এবার হেলে পড়েছে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া কাউখালী বিদ্যুৎ সাবষ্টেশনের ৩৩ হাজার কিলোভোল্টের খুটি। খুটি হেলে গিয়ে গাছের উপর পড়ার কারনে কোন প্রান হানির ঘটনা না ঘটলেও গত ২৫ ঘন্টা যাবত বিদ্যুৎহীন অবস্থায় পড়ে কাউখালী উপজেলার সাড়ে পাঁচ হাজার গ্রাহক। এনিয়ে নতুন এই সঞ্চালন লাইনটির তার (ক্যাবল) পুড়ে মাটিতে ছিড়ে পড়া সহ সর্বশেষে খুটি হেলে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। খালের পাড়ের মধ্যে এবং জমির নরম মাটিতে পরিকল্পনাহীন কোন মতে মাটিতে পুতে পঞ্চাশ ফুট দৈর্ঘ্যর এসব খুটি স্থাপন করার ফলে এ ধরনের বিপর্যয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা।
সুত্র জানায়,কাউখালী উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রায় সোয়া ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বিদ্যুৎ সাবষ্টেশনটির। এখন এ সাবষ্টেশনটির ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে। কাউখালীর এলাকাবাসীর দাবি ‘যে বিদ্যুতের লাইন আলোর চাইতে আতংক ছড়াচ্ছে বেশি সেই লাইন আমরা চাইনা। এসব তার ও খুটি খুলে ভালো তার এবং খুটি লাগানোর দাবী জানিয়েছেন।
ইতিমধ্যে ৩৩ হাজার কিলোভোল্টের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের তার ছিড়ে গলে মাটিতে পড়ে গিয়ে দুজনের প্রাণহানির কারণে এলাকাবাসির কাছে এটি মরণফাঁদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ ২৫ জুলাই বিকেলে কাউখালী-রানীরহাট সড়কে খামারবাড়ীর ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় একটি খুটি গাছের উপর হেলে পড়ার এ এঘটনা ঘটে। মুর্হুতেই আতংক ছড়িয়ে পড়ে পথচারী ও আশে পাশের এলাকাবাসির মধ্যে। আরও চার/পাচটি খুটি হেলে পড়া এবং বেশ কিছু স্থানে সঞ্চালন লাইনের তার স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ফুট নীচের দিকে ঝুলে পড়ায় আরও বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশংকা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ বিদ্যুৎ লাইন নিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় একাধিক সংবাদও প্রকাশিত হয়।
কাউখালী বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকোশলী হাসির উদ্দিন মিয়া বলেছেন এ লাইনটি এখনো তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
অপরদিকে রোববার দুপরে হেলে পড়া খুটির দেখতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎতায়ন প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আলম সাংবাদিকদের জানান, ৩৩ হাজার কিলো ভোল্টের সম্প্রসারন লাইনটির কয়েকটি খুটি স্থাপন করতে ক্রেন নিতে না পারার কারনে হেলে পড়ার স্থানে ৪/৫টি খুটি ষ্টীলের দেওয়া হয়েছে। যদিও কার্যাদেশ দেওয়া আছে সিমেন্টর খুটির। গত শনিবার বিকেলে যে খুটিটি হেলে পড়েছে সেটিও ষ্টীলের ছিল। তিনি আরও জানান, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উত্তরা এন্টারপ্রাইজ এখনো কাজটি পুরোপুরি তাদের বুঝিয়ে দেননি। কোন প্রকার সমস্যা হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেটি মেরামত করবে। তবে রোববার দেখা গেছে হেলে পড়া খুটিটি ক্যাবল দিয়ে সোজা করার চেষ্টা করছেন উক্ত প্রকৌশলী তার দপ্তরের কয়েকজন কর্মী নিয়ে। এসময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাউকে আশে পাশে দেখা যায়নি।
কাউখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী হাসির উদ্দিন মিয়া বলেন, ১১ কিলোভোল্টের প্রায় ৩০ বছর ধরে পুরনো বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের উপর প্রায় প্রতিদিনই গাছ-বাঁশ ভেঙে পড়লেও একবারও ক্যাবল ছিঁড়ে পড়েনি, খুটিও হেলে পড়েনি। কিন্ত ৩৩ হাজার কিলোভোল্টের সম্প্রসারন লাইনের এ সমস্যার বিষয়টি বারবার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বলেও কোন সুরাহা পাওয়া যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ২০ মার্চ উপজেলা সদরের অদূরেই কাউখালী-রানীহাট সড়কের বেতছড়ি পাইন বাগান এলাকায় বিদ্যুতের ক্যাবল পুড়ে গিয়ে গলে আজিমের চা দোকানের উপরে আছড়ে পড়ে। এতে দগ্ধ হয়ে মারা যান আজিমের স্ত্রী রহিমা বেগম (৪৫) ও তার মেয়ের ঘরের একমাত্র নাতি মোঃ অনিক (৬)। চোখের সামনেই বিদ্যুতের আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে ছটফট করার দৃশ্য এখনো ভুলতে পারেননি এলাকাবাসি। এর আগে ৪ ফেব্রুয়ারী আধ ঘন্টার গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতেই কাউখালী-রাণীরহাট সড়কে সেগুন বাগান এলাকায় আকস্মিকভাবে সঞ্চালন লাইনটির দুইটি ইনস্যুলেটেড ক্যাবল (প্লাস্টিকের কভার লাগানো তার) পুড়ে গিয়ে গলে মাটিতে ছিড়ে পড়ে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও প্রায় আট ঘন্টা পরে বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.