খাগড়াছড়ি জেলা সদরসহ ৯ উপজেলায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী শতাধিক পরিবার মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এসব পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার সর্তক করা হলেও কোন কাজে আসছে না। এতে করে আরও ভারী বর্ষন হলে যে সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, টানা বর্ষনের কারণে শহরের শালবন এলাকায় অর্ধশতাধিক পরিবার ঝুকিতে বসবাস করছে। শনিবার রাতে শালবন আদর্শ পাড়া এলাকায় মো. মোসলেম পিসির পাহাড়ের পাদদেশে নির্মানকৃত বাড়ীতে পাহাড় ধসে পড়ে তার দুই সন্তান গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে আহতদের সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। এছাড়া জেলা সদরের শালবন, হরিনাথ পাড়া, কুমিল্লাটিলা, সবুজবাগ, সাত ভাইয়া পাড়া, ঠাকুরছড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক পরিবার পাহাড় ধসের ঝুকিতে রয়েছে। উপজেলা মধ্যে পানছড়ি, মহালছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, গুইমারা, রামগড় উপজেলায় পাহাড় ধসে কম ঝুকি থাকলেও ঘনবসতি এলাকা দীঘিনালা, মাটিরাঙ্গা, মানিকছড়ি ও খাগড়াছড়ি জেলা সদর বেশী ঝুঁিকতে রয়েছে ।
এদিকে, শনিবার সকালে ঝুকিপুর্ন এলাকা শাল বাগান পরিদর্শন করেছেন খাগড়াছড়ি আসনের নির্বাচিত সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা,জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান, পৌর মেয়র রফিকুল আলম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আশিকুর রহমানসহ উর্দ্ধতন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, টানা বৃষ্টির ফলে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা দেখা দিলেও স্থানীয় প্রশাসন আগাম কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তাই যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
অপরদিকে, জেলা সদরের কদমতলী-হরিনাথ পাড়া প্রবেশমূখে পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ জাকির হোসেন অভিযোগ করে জানান, হরিনাথ পাড়া এলাকায় পাহাড় ধসের পাশাপাশি জনৈক মোঃ জাহাংগীরের বিল্ডিংয়ের ছাদে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের টাওয়ার ভেঙ্গে পড়ার আতংকে রয়েছে প্রায় ৪০ি পরিবার।
অন্যদিকে প্রভাবশালী একটি মহল নামে মাত্র মূল্য পাহাড় ক্রয় করে মাটি কেটে প্লট বানিয়ে তা উচ্চ মূল্যে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীর সংখ্যা। তবে প্রশাসনের বাধায় পাহাড় কাটা ক্ষণিকের জন্য বন্ধ থাকলেও রহস্যজনক কারণে তা আবার চালু হয় বলে অভিযোগ।
পাহাড়ের ঢালুতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীরা লোকজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করতে হচ্ছে।
প্রত্যন্ত মানিকছড়ি খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী মংরাজার আবাসস্থল মানিকছড়ি উপজেলা চট্রগ্রাম জেলার সংলগ্ন হওয়ায় প্রভাবশালীরা এখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বাড়ি-ঘর নির্মাণ করছে। উপজেলার একসত্যাপাড়া. মুসলিমপাড়া, বাজার মসজিদ সংলগ্ন এলাকা, রাজপাড়া, পান্নাবিল, মাস্টার পাড়া, এয়াতলংপাড়া, মহামুনি, গোদারপাড়, লেমুয়া, মানিকছড়ি গুচ্ছগ্রাম, গচ্ছাবিল, তিনটহরী, গাড়ীটানা, সাপমারা, যোগ্যাছোলাসহ বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ লোকজন পাহাড় সংলগ্ন ঢালু জায়গায় প্রতিনিয়ত স্থাপনা নির্মাণ করছেন। খবর পেয়ে মানিকছড়ি সদর ব্রিকফিল্ড এলাকায়(মুসলিমপাড়া) গিয়ে দেখা গেছে এখনো সেখানে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ৫/৭টি পরিবার। এছাড়া মাস্টার পাড়া, বাজারের পশ্চিম পাশ এবং উত্তর পাশে (কবরস্থান) সংলগ্ন একাধিক পাহাড়ে ধস দেখা দিয়েছে।
মানিকছড়ি উপজেলা নিবার্হী অফিসার যুথিকা সরকার বলেন, পাহাড়ের ঢালুতে কাউকে বসবাস না করতে বার বার প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সতর্ক করছেন। ইতোমধ্যে একটি পরিবারকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.