লামায় ফাঁসিয়াখালীতে গীর্জা ভেঙ্গে শশ্মানের জায়গা দখলের অভিযোগ!

Published: 07 Aug 2015   Friday   

বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও তার স্বজনরা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বনফুর রাজাপাড়া এলাকায় গীর্জা ভেঙ্গে ও হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের শশ্মানের জায়গা দখল করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় ২৮৫নং সাঙ্গু মৌজার হেডম্যান থংপ্রে ম্রো(৬০) ও রাজাপাড়ার কারবারী পালে ম্রো বলেন, পাঁচ পুরুষ (১শ ৫০ বছর) থেকে ভোগ দখল করা গীর্জা ও শশ্মানের জায়গাটি ৫ আগষ্ট ২০১৫ইং চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদারের নির্দেশে তার ছোট ভাই জাহাঙ্গীর মজুমদার(২৯) তার চাচা নূরনবী সহ ১৫-২০ জনের একটি সংগবদ্ধ গ্রুপ খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের গীর্জাটি ভেঙ্গে ৫ একর ও শশ্মানের ৫ একর জায়গা দখল করে নেয়। দখলীয় জায়গায় দখল নিশ্চিত করতে রাবার ও বিভিন্ন জাতের চারা লাগিয়ে যায়। জায়গার তিন পাশে বাশেঁর বেঁড়া দেয়।

এঘটনায় ক্ষুদ্ধ ২ শতাধিক এলাকাবাসী ৬ আগষ্ট সকাল থেকে তাদের গীর্জা ও শশ্মানের জায়গা পুনরুদ্ধার করে এবং পুনরায় ধ্বংস গীর্জাটি মেরামত, শশ্মানের জায়গায় দখল ঠেকাতে ক্যাং নির্মাণ করেন। গীর্জা ভাঙ্গার বিষয়ে এলাকার হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসময় অপর পক্ষের (জাহাঙ্গীর মজুমদার ও তার সঙ্গীয়) কাউকে দেখা যায়নি। ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের ঘটনায় ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ১নং ও ৯নং ওয়ার্ডের বনফুর, রাজাপাড়া, বড়পাড়া, ছোটপাড়া, নিচের পাড়া, রাজাপাড়া ও মোক্তারাম ত্রিপুরা পাড়ার লোকজনের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা যায়। দুই পক্ষের মূখোমুখিতে যে কোন সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে বলে জানান ১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার লাং কম  ম্রো(৪৫)।

এলাকার সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ট কারবারী পালে ম্রো(১০৪) জানান, পাঁচ পুরুষ আগে বৃটিশ শাসনের আমলে অত্র জায়গায় রাজাপাড়ার অবস্থান ছিল। তিন পুরুষ আগে ডায়রিয়া ও কাল জ্বরে যখন শত লোক মারা যাচ্ছে তখন এই এলাকার লোকজন ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে পাশের পাহাড়ে উপরে অর্থাৎ বর্তমান স্থানে রাজা পাড়া স্থানান্তর করে। তখনকার সময়ের সুপরিচিত  ম্রো কারবারী রাজা ¤্রাে নামে এই পাড়ার নামকরণ করা হয়। এই পথ ধরে ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় বৃটিশ সৈন্যরা বাংলাদেশ থেকে মায়ানমার (বার্মা) রেংগুন শহরে যেত। প্রায় দুই শতাব্দীর ইতিহাসের স্বাক্ষী উক্ত পাড়াটি। চলাচলের পথে বৃটিশ সেনারা রাজাপাড়ায় বসে বিশ্রাম করত ও সহজ সরল ¤্রােদের সাথে আলাপ খোশগল্প করত।

এঘটনায় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ছাত্র-যুব ঐক্য পরিষদের কক্সবাজার সভাপতি সোহেল বড়ু–য়া তীব্র নিন্দা জানিয়ে সরকারের কাছে গীর্জা ভাংচুর ও শশ্মানের জায়গা দখলকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবী করেন।

গীর্জা ভাঙ্গা ও জায়গা দখলের বিষয়ে জাহাঙ্গীর মজুমদারের বড় ভাই ৩নং ফাঁসিয়াখালী ইউপি’র চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুদার বলেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নাম ভাঙ্গিয়ে আমার দীর্ঘ সময়ে ভোগ দখলীয় জায়গাটি জবর দখল করার চেষ্টা করছে। পাহাড়ীরা ষড়যন্ত্র করছে তার বিরুদ্ধে। গীর্জা ভেঙ্গে নেয়ার অভিযোগ সত্য নয়। বিরোধীয় জায়গা থেকে শশ্মান আরো নিচে।  তিনি দাবী করেন এ শশ্মানে ৪০-৪৫ বছর পূর্বে ৪-৫টি ম্রোদের মৃত দেহ দাহ করে সমাধি করা হয়। ১৯৮৬-৮৭ সালে এই জায়গাটি তার চাচাসহ ৪ জনের নামে জি হোল্ডিং মূলে আমরা বন্দোবস্তি পায়। এ বিরোধীয় জায়গার নিয়ে কিছুদিন পূর্বে স্থানীয় ভাবে এলাকার সাবেক মেম্বার লাং কম ¤্রাে ও চং পাত  ম্রোর সাথে বৈঠক করে এই জায়গা তাদের নিশ্চিত করে  জায়গা বুঝে নেয়া হয়।  মূলত এলাকার তার বিরোধীয় একটি গ্রুপ আগামী নির্বাচনকে ঘিরে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বিরোধীয় জায়গাটি কোনদিন তাদের বলে দাবী করতে শুনিনি। তারা বর্তমানে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কৌশলে জায়গা দখলের পায়তারা চালাচ্ছে।

এবিষয়ে লামা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যানের ভাই জাহাঙ্গীর মজুমদার উক্ত জায়গাটি তার দাবী করে ৬ আগষ্ট লামা থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। প্রতিপক্ষ দখলে প্রচেষ্টায় ঘর নির্মাণের জিনিসপত্র আনলে তারা ঘর তৈরি করতে বাধা দেয়। গীর্জা ভাঙ্গা বিষয়ে তিনি অবগত নয়। শনিবার জাহাঙ্গীর মজুমদারের অভিযোগ তদন্তের জন্য লামা থানার পুলিশের একটি টিম বনফুর বাজারে তদন্তে যাবে বলে তিনি জানান।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর. 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত