রাঙামাটির বরকল উপজেলার ভূষনছড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার দুলাল তালুকদারের বিরুদ্ধে ধর্ষন, সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ এনে তার শাস্তির দাবীতে মঙ্গলবার সংবাদ সন্মেলন করেছেন এলাকাবাসী।
রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে ভূষনছড়া এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগী পরিবারের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে বক্তব্যে রাখেন ওই ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ সদস্য ও পঙ্গু ব্যক্তি মনোয়ার গাজী, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্য মাহফুজ মিয়া, ফারজানা আক্তার ববি প্রমুখ।
সংবাদ সন্মেলনে এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ভূষনছড়া ইউপির ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার ও ভিডিপির পিসি দুলাল তালুকদার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে দীর্ঘ দিন ধরে ভূষন ছড়ায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছেন। এলাকার লোকজন তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নির্যাতনসহ নানান ষড়যন্ত্রসহ মিথ্যা মামলার শিকার হতে হয়। রাজনীতির প্রভাব খাতিয়ে দুলাল তালুকদার ও তার ক্যাডার বাহিনীকে দিয়ে পুরো এলাকার মানুষকে জিম্মি করে রেখেছেন।
সংবাদ সন্মেলনে আরও বলা হয়, দুলাল তালুকদারের ঘরে দুই স্ত্রী থাকা সত্বেও এলাকার
এলাকার সুন্দরী মেয়েদের ভয়-ভীতি ও নানান প্রয়োলোভন দেখিয়ে ধর্ষন এবং ধর্ষনের শিকার মেয়েকে দিয়ে অন্যজনকে মিথ্যা ধর্ষনের অভিযোগ এনে মামলা জড়ানোর ভয় দেখিয়ে বড় অংকের টাকার আদায় করে থাকেন। এ ব্যাপারে পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসনকে বার বার অভিযোগ করার পরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা এখনো নেয়া হয়নি।
এলাকাবাসী আরও অভিযোগ করে সংবাদ সন্মেলনে বলেন, দুলাল তালুকদার এলাকার হুমায়ন কবির নামে এ ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবী করলে সে দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মিথ্যাভাবে নারী কেলেংকারীতে জড়িয়ে দেয়। একই এলাকার এক মেয়েকে ষড়ন্ত্রমুলকভাবে ব্যবহার করে আজমত আলীর কাছ ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন দুলাল। এছাড়া দুলাল তালুকদার মাহফুজ মিয়ার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা দাবী করেন। এতে তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে এলাকার এক মেয়েকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করায় ও ধর্ষনের মামলায় জড়িয়ে দেন। তাছাড়াও ৫নং ওয়ার্ডের রুকুজান ও মরিয়মকে এরিয়া বুনিয়া বাজারে দিবালোকে মারধর করেন। এমনকি তাদের চিকিৎসা পর্ষন্ত করতে দেননি। এভাবে আরও অনেক এলাকাবাসী দুলাল তালুকদারের হাতে মারধর, অপমান ও অপদস্থের শিকার হয়েছেন। এতে দুলাল তালুকদার ও সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
সংবাদ সন্মেলনে এলাকাবাসী অবিলম্বে দুলাল তালুকদার ও তার বাহিনীকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান প্রশাসনের কাছে। অন্যথায় দুলালের বিচার এলাকার জনগণ নিজ হাতে নিতে বাধ্য হবে।
সংবাদ সন্মেলনে ইউপি মেম্বার দুলাল তালুকদারের হাতে ধর্ষনের শিকার মেয়ের বাবা বলেন, বছর কয়েক আগে তার মেয়ে সুমীকে (ছদ্ম নাম) সু-কৌশলে রাঙামাটির রিজার্ভবাজারস্থ একটি বোর্ডিং এ নিয়ে গিয়ে ধর্ষন করে এবং বিবস্ত্র অবস্থায় ছবি তুলে। বিষয়টি কাউকে জানালে ছবিগুলো এলাকায় প্রচার করার হুমকি দেয় সে। বিষয়টি তখন ভয়ে সুমী বাসার কাউকে বলেনি। আর এ সুযোগে ছবি প্রচারের ভয় দেখিয়ে সুমীকে আবারও বেশ কয়েকবার ধর্ষনও করে দুলাল। কয়েকমাস আগে সুমীকে আবারও দুলাল ভয় দেখায় এবং এক পর্যায়ে তার মেয়ের ছবি স্থানীয় আরিফ ও হাসানের সহযোগীতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন জায়গায় ওই বিবস্ত্র ছবি ছড়িয়ে দিলে বিষয়টি জানাজানি হয়। ধর্ষিতার পিতা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বিষয়টি সবাই জেনে গেলে তার মেয়ে একপর্যায়ে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আমরা অনেক কষ্ঠে তাকে বুঝিয়ে পাহাড়া দিয়ে রেখেছি। তিনি বলেন, অসহায় মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে আমরা দুলাল তালুকদারের কাছে বারবার ছুটে গেলেও তিনি উল্টো পরিবারকে হুমকি প্রদান করছেন। কয়েকদিন আগে এ ব্যাপারে বরকল থানায় গেলে থানায় কোন অভিযোগ নেয়নি।
ইউপি মেম্বার দুলাল স্থানীয় আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সাথে জড়িত বিধায় সে প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় এসব অপকর্ম করছে উল্লেখ করে দুলাল তালুকদারকে গ্রেফতারসহ তার ক্যাডার বাহিনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন।
ধর্ষিতার স্বামী মাহফুজ জানান,দুলাল তালুকদার তার কাছে দুই লাখ টাকা দাবী করে। এতে অস্বীকৃতি জানালে ভয়-ভীতি দেখিয়ে একই এলাকার মেয়ে সুমীকে(বর্তমানে তার স্ত্রী) ধর্ষনের শিকার হয়েছে বলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষন মামলাসহ তিনটি মামলা করে। এতে তিনি বিগত ৬ মাস ধরে বিনা দোষে তাকে জেলে থাকতে হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.