শনিবার রাঙামাটি কলেজে ছাত্রলীগ ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের(পিসিপি) মধ্যে সংঘর্ষে কতোয়ালী থানার ওসিসহ ৮জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় ১টি দোকান ও ২টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, কয়েকটি দোকানে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার জন্য উভয় সংগঠন পরষ্পরকে দায়ী করে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবী জানিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা মোতায়ন করা হয়েছে। এ ঘটনার কারনে সৃষ্ঠ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে রোববার ও সোমবার কলেজের সকল ক্লাশ স্থগিত ঘোষনা করেছেন রাঙামাটি সরকারী কলেজ কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, শনিবার রাঙামাটি সরকারী কলেজের সাপ্তাহিক ছাত্র সংগঠনসমুহের মিছিল-মিটিং-এর দিন ধার্য্য ছিল। পৃথক পৃথক সময়ে কলেজের ছাত্রলীগ ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ মিছিল-মিটিং শেষ করে। পরে মিছিল শেষে ছাত্রলীগ কর্মী অর্নব ত্রিপুরা সৌরভের সাথে পিসিপির নেতা কর্মীদের মধ্যে তর্কাতর্কি ও মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো কলেজ ক্যাম্পাস রণক্ষেত্র পরিণত হয়। এতে পিসিপি ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে অর্নব ত্রিপুরা সৌরভসহ উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। এসময় সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে রাঙামাটি কতোয়ালী থানার ওসি আব্দুল রশীদও আহত হন। সংঘর্ষকারীরা এসময় ক্যাম্পাসে থাকা ২টি মোটরসাইকেল, ক্যাম্পাসের বাইরের ১টি দোকানে অগ্নিসংযোগ এবং কয়েকটি দোকানে ভাংচুর চালায়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় সংঘর্ষকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে। তবে সংঘর্ষের আহতদের নাম তাৎক্ষনিকভাবে জানা যায়নি। আহত সৌরভকে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে, এ সংঘর্ষ ক্যাম্পাসের বাইরে ছড়িয়ে পড়লে একদল দুস্কৃতকারী সদর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে সিএনজি থেকে নামিয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিআরডিবির অফিসে দায়িত্বরত সমাজ কর্মী অপু তালুকদারকে প্রচন্ডভাবে মারধর করে তার সর্বোচ্চ ছিনিয়ে নিয়েছে। তাকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় প্রথমে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে, এ সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় সংগঠন পরষ্পরকে দায়ী করে বক্তব্যে দিয়েছে। পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক জুয়েল চাকমার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় দাবী করেছেন,কলেজে পিসিপির সমাবেশে স্থলটি ছাত্রলীগের কর্মীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে দখল করে রাখে। তার পরও অন্যত্র সমাবেশ করে পিসিপি। পরবর্তীতে পিসিপির সমাবেশ শেষ হওয়ার পর ছাত্রলীগের কর্মী অর্নব ত্রিপুরা সৌরভ ও বহিরাগত ছাত্র শামসুজ্জামান বাপ্পি পিসিপি কর্মীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করে। পিসিপির কর্মীরা প্রতিবাদ করলে ছাত্রলীগ কর্মীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে জুম্ম ছাত্র-ছাত্রীদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়। এতে হামলায় অমর সিন্ধু চাকমা, কমেশ চাকমা, পুলক চাকমা, এলিন চাকমা গুরুতর আহত হন। এ হামলার সাথে ছাত্রলীগের সাথে বহিরাগতরাও কলেজ গেইট ও ইউএনও অফিসের সামনে জুম্মদের উপর হামলা চালিয়েছে। এসময় হামলাকারীরা সদর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় সিএনজি থেকে নামিয়ে সরকারী চাকুরীজীবি অপু তালুকদারকে মারধর করলে তিনি গুরুতর আহত হন। এছাড়া ছাত্রলীগের কর্মীরা কলেজ গেইট সংলগ্ন দোকান পাট ভাংচুর ও লুটপাট এবং গাড়ি ভাংচুর চালায়।
হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবী করে প্রেস বার্তায় বলা হয়, সম্প্রতি রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে চলমান জোরালো আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার হীনউদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগ কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছে।
জেলা ছাত্রীলীগের সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজন কলেজ ক্যাম্পাসে ও কলেজের বাইরে সংগঠিত ঘটনার জন্য পিসিপিকে দায়ী করেছেন। তিনি জানান, এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ রোববার সকালে রাঙামাটি পৌর চত্বর থেকে জেলা প্রশাসন কার্যালয় চত্বর পর্ষন্ত বিক্ষোভ-মিছিল করা হবে। তিনি ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের কাছে দাবী জানান।
রাঙামাটি সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ বাঞ্চিতা চাকমা জানান, শনিবারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজে সৃষ্ঠ পরিস্থিতি নিয়ে তিনি তার স্টাফদের নিয়ে মিটিং করেছেন। এবং মিটিং এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে সৃষ্ঠ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য ১৮ ও ১৯ অক্টোবর কলেজের সকল ক্লাশ স্থগিত ঘোষনা করা হয়েছে। পাশাপাশি দূর্গা পূজা উপলক্ষে ঘোষিত ছুটির পরেও যদি পরিস্থিতির কোন উন্নতি না ঘটে তাহলে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে। তবে কলেজের ভর্তি, পরীক্ষা ও অন্যান্য দাপ্তরিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন জানান, বর্তমানে রাঙামাটি সরকারী কলেজ ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্তি পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে।এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দাদেরকে কোনো গুজবে কান না দেওয়ার আহবান জানিয়ে জেলা প্রশাসক আরও জানান, সামান্য একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ঠ পরিস্থিতি যাতে করে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতা দিকে না যায় সেদিকে আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
আহতদের দেখতে দীপংকর তালুকদার
রাঙামাটি সরকারী কলেজে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী ও দোকানিদের রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল ও সেনা বাহিনীর সম্মিলিত সাময়িক হাসপাতালে দেখতে যান জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার। এ সময় তার সাথে ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, পরিষদের সদস্য স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা, জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ চাকমা, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক অভয় প্রকাশ চাকমা, রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন রুবেল’সহ ছাত্রলীগের নেতারা।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.