বৃহস্পতিবার বান্দরবানের আলীকদমের আনুষ্ঠানিকভাবে বিপদগামী ম্রো ন্যাশনাল ডিফেন্স পার্টি (এমএনডিপি) ও ম্রো ন্যাশনাল পার্টি’র(এমএনপি) ৭৮ জন সদস্য আত্বসমর্পন করেছেন। সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ছেড়ে এ ম্রো যুবকরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাতে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলছেন দুর্গম এলাকার সাধারন মানুষ।
মাতামুহুরী নদীর চড়ে আয়োজিত আত্বসমর্পণের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল শফিকুর রহমান, বান্দরবানের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, জেলা প্রশাসনের এডিসি (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক) আবু জাফর। এসময় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ ম্রো সোশাল কাউন্সিলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা প্রতিজনকে নগদ অর্থ ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়। এছাড়া স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা ৭৮ জন ম্রো যুবককে সরকারি-বেসরকারি সুযোগ সুবিধা প্রদানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল অনুষ্ঠানে মাতামুহুরী নদীর উজানে দুর্গম কুরুক পাতা এলাকায় সকাল থেকে দুর-দূরান্ত এলাকা ম্রো সম্প্রদায়ের লোকজন অনুষ্ঠান দেখতে জড়ো হন। বিপদগামী ম্রো যুবকরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাতে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলছেন দুর্গম এলাকার মানুষা।
অনুষ্ঠানে আত্বসমর্পণ করা ম্রো সদস্যদের পক্ষ থেকে অতিথিদের কাছে ১২টি দাবি উপস্থাপন করা হয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল এমএনডিপির বিভিন্ন কর্মকান্ডের জন্য যে সমস্ত মামলা মোকদ্দমা রজু হয়েছে, সে সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করা। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা এমএনডিপি সকল সদস্যদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা, ম্রো জনগণের জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করা, যে সকল ভূমি বা জমির উপর ম্রো জনগণের দখল স্বত্ত প্রতিষ্ঠিত সে সকল জমির উপর অ-স্থানীয় ব্যক্তিদের আগ্রাসন ও জোরপূর্বক দখল বন্ধ করনসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া লিখিত আকারে উপস্থাপন করেন।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য সিংইয়ং ম্রো জানান, বুধবার দুই গ্রুপের ৭৮ জন সদস্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আলীকদম জোনের কাছে এক ও দুই নলা বন্দুক ২৩টি, কাটা বন্দুক ৩২টি, গুলি ৯৯টি ও পোশাক ৭৬ সেট জমা দেন। এমএনডিপি দুই গ্রুপের একটি লোহব গ্রুপের ১৪জন ও মেনরুম গ্রুপের ৬৪ জনসহ মোট ৭৮জন সদস্য আত্ব সমর্পণ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আওয়ামীলীগ সরকারের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই সময়ে কোনো ধরণের রক্তপাত ঘটেনি। শান্তিপূর্ণ উপায়ে, বোঝা পড়ার মাধ্যমে আওয়ামীলীগ সরকার চেষ্টা করে সমস্যা সমাধানের।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সেনা বাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল শফিকুর রহমান বলেন, সেনাবাহিনী পার্বত্যাঞ্চলে শান্তির জন্য সব সময় কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় যে বিচ্ছন্ন গ্রুপের সৃষ্টি হয় তাও সুন্দরভাবে সমাধানে সেনাবাহিনী আপনাদের পাশে থেকে কাজ করে যাবে। তিনি আত্ব সমর্পণ করা এমএনডিপি সদস্যদের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে যোগ্যতা অনুসারে পাঁচজন সদস্যকে চট্টগ্রামের সেনাবাহিনীতে চাকুরী দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পর্যায়ক্রমে অন্যান্যদের চাকুরীসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দেয়ার আশ্বাস দেন।
জানা গেছে, ম্রো ন্যাশনাল ডিফেন্স পার্টি (এমএনডিপি) সংগঠনটি ২০০৯ সালে গঠিত হয়। থানছি উপজেলা থেকে পূর্ব দিকে ৭০ কিলোমিটার দূরে গহীন অরণ্যে একটি ম্রো গ্রামে বা পাড়ায় সংগঠনটি গঠিত হয়। সংগঠনটি গঠন করা হলেও প্রকাশ্যে আত্বপ্রকাশ ঘটেনি। সংগঠনটি গঠনের এক বছর পর অর্থাৎ ২০১০ সালে প্রকাশ্যে আত্বপ্রকাশ ঘটে। সংগঠনটির সভাপতি বা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন মেনরুম ম্রো । সংগঠন পরিচালনায় অর্থ সংগ্রহে সদস্যরা অপহরণ, চাঁদাবাজি, মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ২০১১ সালে একজন হেডম্যান (মৌজা প্রধান), একজন কার্বারী (পাড়া প্রধান) ও একজন স্থানীয়কে অপহরণের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসী গ্রুপ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। একই বছরে বাঙ্গালী ব্যবসায়ীসহ এমএনপি দলের সদস্যরা পাঁচজনকে অপহরণ করে। মুক্তিপণ নিয়ে অপহৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জাল আলীকদম, থানছি, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।
সুত্র আরও জানায়, বিপদগামী ম্রো যুবকদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পেছনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সেনাবাহিনী ও কয়েকজন ম্রো নেতার ভূমিকা ছিল।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.