বৃহস্পতিবার থেকে দুদিন ব্যাপী পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা দেশের সর্ব বৃহৎ বৌদ্ধ মন্দির রাঙামাটির রাজ বন বিহারে বৃহস্পতিবার প্রধান ধর্মীয় উৎসব দানোত্তম কঠিন চীবর শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ভগবান গৌতম বুদ্ধের জীবব্দশায় মহাপূর্নবতী বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত ২৪ ঘন্টার মধ্যে সূতা কাটা শুরু করে কাপড় বয়ন, সেলাই ও রং করাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয় বলে একে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়।
রাজ বন বিহার পাশে অবস্থিত ৪২তম কঠিন চীবর দানোৎসবের প্রথম দিনে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চরকা সূতা কাটা থেকে কাপড় তৈরীর জন্য বেইন ঘর উদ্ধোধন করেন চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। চরকায় তুলা থেকে সূতা কাটার উদ্ধোধন করেন রানী ইয়েন ইয়েন।
এর আগে বেইন ঘরে আগত পুর্নার্থীদের উদ্দেশ্য পঞ্চশীল প্রদান করেন রাঙামাটি রাজ বন বিহারের ভিক্ষু-সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। এ সময় রাঙামাটি রাজ বন বিহারের ভিক্ষু-সংঘ ছাড়াও রাজ বন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সহ-সভাপতি গৌতম দেওয়ান ও সাধারন সম্পাদক প্রতুল বিকাশ চাকমা,সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কাল শুক্রবার তৈরীকৃত চীবর(রং বস্ত্র) ধর্মীয় অনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে ভিক্ষু সংঘের উদ্দেশ্য দান করা হবে।
এদিকে, প্রতি বছরের এ বছরও তিন পার্বত্য জেলা থেকে বৌদ্ধ বিপুল পূনার্থীর সমাগম ঘটেছে। রাজ বন বিহার এলাকায় মেলার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানকে ঘিরে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদুল্লাহ জানান, কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে তিন স্তরে নিরাপত্তার জন্য ৫শতাধিক পুলিশ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে পোশাকধারী পুলিশের পাশশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ ও গোয়েন্দারা মাঠে থাকবে।
উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির মৈত্রী,করুনা, উদীতা উপেক্ষা বৌদ্ধ ধর্মের এ চারটি গুন রয়েছে তা অন্তরে চিন্তা চেতনায় ধারন করার হিতোপদেশ দেন। তিনি বলেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে যে চীবর তৈরী করা হবে তা একাগ্রচিত্তে, মনচিত্ত ও একতাবদ্ধ হয়ে কার্য সুসম্পন্ন করতে হবে। এর ফলে অফুরন্ত পূর্ন প্রাপ্তি, আনন্দ প্রীতি লাভের সম্ভব হবে।
চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় বলেন,২৪ ঘন্টার মধ্য দিয়ে তৈরী কঠিন চীবর দানের মধ্য দিয়ে আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সংরক্ষিত হচ্ছে অন্যদিকে বুনন ও বয়ন শিল্পের সাথে আড়াই হাজার বছর পূর্বে বৌদ্ধ কৃষ্টির সাথে সংমিশ্রন হবে। পাশাপাশি এ কঠিন চীবর দান সম্পাদনের মাধ্যমে সর্ব জীবের মঙ্গল ও সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টি হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.