পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে হবে

Published: 02 Dec 2015   Wednesday   

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৮তম বর্ষপূতি উপলক্ষে বুধবার ঢাকায়  পার্বত্য চটগ্রাম চুক্তি: একটি জাতীয় অঙ্গীকার- শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

 

আলোচনা সভায় বক্তারা  পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রণয়নের দাবি জানান।

 

ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত  আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ।

 

বক্তব্য রাখেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি উষাতন তালুকদার এমপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক  শামসুল হুদা, প্রমুখ।

 

আলোচনা সভায় সংস্কৃতি কর্মী রূপশ্রী চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় জাতীয় নাগরিক উদ্যোগের পক্ষ  থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহমেদ খান এবং জাতীয় নাগরিক উদ্যোগের দাবিনামা উত্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী  ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।

 

আলোচনা সভায় দেশের রাজীতিবিদ, লেখক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সংস্কৃতিসহ মানবতাবাদী নাগরিকবৃন্দ অংশ গ্রহন করেন।

আলোচনা সভায়  জাতীয় নাগরিক উদ্যোগ-এর পক্ষ থেকে  ৮ দফা দাবিনামা তুলে ধরা হয়। সেগুলো হল,অবিলম্বে চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় আইনী ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ,পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নেরলক্ষ্যে দ্রুত সময়সূচি-ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ ঘোষণা,আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদসমুহের ক্ষমতায়ন ও কার্যকরকরণ,

 

অপারেশন উত্তরণসহ সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন, শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তদের পুনর্বাসনসহ চুক্তির সকল অবাস্তবায়িত বিষয়াদি দ্রুত বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ,চুক্তি বাস্তবায়নে বাঁধাসমূহ দূর করার জন্য অবিলম্বে উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ শুরু করতে হবে।

 

সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, যখন কোন সরকার চুক্তি করে তা বাস্তবায়ন করাও সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। সরকার যেন তার নৈতিক দায়িত্ব  থেকে সরে না আসে।

 

তিনি আরও বলেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দই চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। তাই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দায়িত্ব হচ্ছে চুক্তি বাস্তবায়ন করা। সরকার চুক্তির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ক্রোড়পত্রে তাদের অর্জন বললে ও এ অর্জন সেদিন হবে যখন পার্বত্য চুক্তির মেীলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন হবে। বর্তমান অবস্থায় চুাক্তর এই দিনটি আনন্দের না হয়ে আদিবাসীদের বিষাদে পরিণত হয়েছে।

উষাতন তালুকদার এমপি বলেন, সরকার ১৮ বছর অতিবাহিত হলে চুক্তির মেীলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করেনি। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন সংশোধন আইন সংসদে পাশ করার কথা থাকলে ও বিগত অধিবেশনে তা করা হয়নি। চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া মূলত অকার্যকর অবস্থায় রাখা হয়েছে।

 

এক্ষেত্রে সরকারের পাবর্ত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ অবিলম্বে প্রণয়ন করে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে।  তিনি নাগরিক উদ্যোগের পক্ষ  থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষে প্রচারণা করার জন্যেও নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দকে পরামর্শ  দেন। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রচারনার সাথে সমতলের আদিবাসীদের অধিকারও অর্ন্তভুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।

 

মুজাহিদুল ইসলাম  সেলিম বলেন, এ চুক্তি শুধু আদিবাসীদের মুক্তির জন্য নয়, এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুৃদ্ধের চেতনার সাথে সর্ম্পকিত। এই চুক্তি সর্ম্পকে কোন বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন সরকারের যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্বাস করে  তাহলে শান্তিচুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নের করা তাদের অন্যতম কাজ।

 

পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন অপরিহার্য। বিগত ১৮ বছরে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না করে আদিবাসীদের প্রান্তিকতার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম যেন বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীদের একটি উপনিবেশ। সেই কারণেই শাসকগোষ্ঠী চুক্তি বাস্তবায়ন বন্ধ রেখেছে।

 

জনসংহতি সমিতির ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন দেশের প্রগতিশীল নাগরিক সমাজ এই অসহযোগ আন্দোলনে তাদের সাথে থাকবে। 

 

অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, জাতিগত ও রাজনৈতিক সমস্যা নিষ্পত্তির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু সরকারে সর্ষের ভিতর ভূত থাকার কারণে এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

 

তিনি আরো এই চুক্তি দেশে ও বিদেশে প্রশংসিত হয়েছিল। তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেস্কো শান্তি পুরষ্কার পেয়েছিলেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, চুক্তির পর দীর্ঘ ১৮ বছর অতিক্রান্ত হলো, কিন্তু চুক্তির প্রধান ও মৌলিক বিষয়গুলো আজো বাস্তবায়িত হয়নি।

 

সঞ্জীব দ্রং বলেন সরকার নিজেদের কাজে প্রশংসা করে সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র দিয়েছে কিন্তু চুক্তির অপরপক্ষকে বাদ দিয়ে এই দিবসটি  উদযাপন যথার্থতা পায়না। যে স্পিরিট নিয়ে রাষ্ট্র চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছিলেন সেই একই মানসিকতা নিয়ে চুক্তি রাষ্ট্রকে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে করতে হবে।

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার অন্যতম দিক হলো ভূমি সমস্যা। বার বার ঐক্যমত্য হওয়া সত্ত্বেও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন আইনটি সংশোধনের জন্য সংসদে উত্থাপন করা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের পরিবর্তে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে।

 

ইতিমধ্যে সেখানে আদিবাসীরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা একটি জাতীয় ও রাজনৈতিক সমস্যা। দেশের সামগ্রিক স্বার্থেই এই সমস্যার সমধান হওয়া প্রয়োজন।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত