পার্বত্য চুক্তির ১৮তম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে বুধবার বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজ বিজ্ঞানি এবং প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেছেন,সৎইচ্ছা থাকলে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কোন কঠিন বিষয় নয়। পার্বত্য চুক্তি হওয়াতে পাহাড়ে দীর্ঘ সময়ে চলমান সংঘর্ষ সমাধান হয়েছে বটে তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় হতাশা দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চুক্তি যখন হয়েছিল আমার দৃঢ় একটা বিশ্বাস ছিল যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পাহাড়ের নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা) নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে পারতেন। কিন্তু এ চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তিনি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য পাহাড়ী মানুষের যে আন্দোলন সংগ্রাম এ সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে পরামর্শ দেন।
চট্টগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে আলোচনা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৮তম বর্ষপূর্তির উদযাপন কমিটির আহবায়ক তাপস হোড়ের সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক। সন্মানিত অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পলাশ তনচংগ্যা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি শরৎ জ্যোতি চাকমা, বাংলাদেশের ওর্য়ার্কাস পার্টি,চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ,শামসুদ্দিন খালেদ সেলিম,বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের এ্যাড.প্রদীপ কুমার চৌধুরী,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ তত্ত্ববিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহিউদ্দিন,প্রভাষক, বসু মিত্র চাকমা, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, জুলন ধর, ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, আনন্দ বিকাশ চাকমা, নৃজ্ঞিান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, ফারুক হোসেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বাচ্চু চাকমা প্রমুখ।
সমাবেশের প্রধান অতিথি ড. অনুপম সেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চুক্তি বাস্তবায়নের সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে তিনি আরো বলেন,মাঠে ঘাটে, রাস্তায় যখন যেখানে আমাকে প্রয়োজন হবে আমি আপনাদের সংগ্রামে থাকবো। সংগ্রাম করেই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করে নিতে হবে। আপনারা সংগ্রাম ছাড়বেন না,সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন। আমরা আপনাদের সাথে থাকবো।
প্রধান আলোচক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক ভূমি সমস্যাকে পার্বত্য অঞ্চলের প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, চুক্তির বিষয়টা আইনের একটি বিষয় এবং বসাস্তবায়ন কতটুকু তা আমাদের মনে রাখতে হবে। ভূমি কমিশন আইন সংশোধন করে এর যথাযথ কার্যকর খুবই জরুরী। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা একটি রাজনৈতিক সমস্যা তাই রাজনৈতিকভাবে এর সমাধান করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতীয় অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে এর বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ করার বিধান চুক্তি আইনে থাকলেও বাস্তবে দেখলে পাহাড়ীরা এখন পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখ্যালঘু। জিয়াউর রমান এখানে অনেক সেটেলারকে বসতি দিয়েছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক জমি আছে মনে করা হলেও বাস্তবে চাষ যোগ্য জমি মাত্র শতকরা ২৩ ভাগ, তারপরে অবৈধ সেটেলমেন্ট প্রতিনিয়ত হচ্ছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য এর মৌলিক বিষয় গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন খুব কঠিন কোন কাজ নয়। সৎইচ্ছা এবং আন্তরিকতা থাকলে এর বাস্তবায়ন সম্ভব। আমাদের মনে রাখতে হবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির কারনে দেশের সার্বভৌমত্বের কোন ক্ষতি হয়নি।
অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি সম্মানিত আবু সুফিয়ান বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির কারনে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংশিত হয়েছেন। কিন্তু ১৮ বছরে ও চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় আমার দু:খ লাগছে। আমরা পাহাড়ী-বাঙ্গালী সকল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা চাই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যতাযথভাবে বাস্তবায়ন হবে এবং প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো অতি শীঘ্রই যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষে সময় সূচিভিত্তিক কর্ম পরিকল্পনা প্রনয়নের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.