পার্বত্য চুক্তির পুর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও সমতল অঞ্চলে আদিবাসীদের ভূমি কমিশনের দাবীতে সোমবার রাঙামাটিতে গণ- মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
বান্দরবানের ঘুনধুম থেকে খাগড়াছড়ির দুদুকছড়া পর্ষন্ত ৩শ কিলোমিটার গণ মানববন্ধনের অংশ হিসেবে রাঙামাটিতে ঘন্টাব্যাপী এ গণ-মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
সোমবার সকালের দিকে শহরের বনরুপা, জেলা প্রশাসন কার্যালয় চত্বর, কল্যাণপুর,মানিকছড়ি, কতুকছড়ি, ঘাগড়া, আসামবস্তি, ফিসারী বাধা, তবলছড়ি,রাঙ্গাপানি আসামবস্তিসহ রাঙামাটি সদরের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ সড়কে গণমাবন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এতে মানববন্ধনে বিভিন্ন দাবী-দাওয়া সম্বলিত ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে হাজার হাজার নারী-পুরুষ অংশ নেন।
এদিকে, শহরের কল্যাণপুর এলাকায় মানবন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা)। লংগদু উপজেলায় আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন রাখেন চাকমা সার্কেলের চিফ ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায় ও চাকমা রাণী ইয়েন ইয়েন।
অপরদিকে, রাঙামাটি জেলা প্রশাসন কার্যালয় চত্বরে মানবন্ধন চলাকালে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান। অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্যে রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডঃ মানিক লাল দেওয়ান, এম এন মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা,রাঙামাটি জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট হ্লাথোয়াই মারমা বক্তব্য রাখেন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মানবন্ধন পালনের খবর পাওয়া গেছে।
জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে আয়োজিত সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, পার্বত্য চুক্তির ফলে যেসব প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়েছে সেগুলোকে কার্যকর করা হয়নি। এ অঞ্চলের মানুষ সত্যিকারভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবে। কিন্তু দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি ১৮ বছর পরেও পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন হয়নি ও সেই অধিকার ফিরে পায়নি।
তিনি আরও বলেন, আমরা শান্তিপূর্নভাবে ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করতে চায়। যে দাবীগুলো সরকারের অঙ্গিকারের দাবী। সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু আজকে দেখা যাচ্ছে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করতে চাইলে সেখানে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না করেও চুক্তি বাস্তবায়ন করছে দাবী করছে তার জন্য আমরা শংকিত। কারণ সরকার অদৌ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করবে কিনা এবং অদৌ আন্তরিকতা রয়েছে কিনা।
তিনি শংকা প্রকাশ করে আরও বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার যদি সময় চাইতো বা চুক্তি বাস্তবায়নে সময় চেয়ে বলতো চুক্তি বাস্তবায়ন চলমান প্রক্রিয়া তাতে আমাদের কোন আপত্তি থাকতো না। কিন্তু সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন করেছে বলছে তার জন্য আমরা শংকা প্রকাশ না করে পারছি না।
তিনি বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার যতই দীর্ঘায়িত করতে ততই জটিলতা বাড়ছে। এ অঞ্চলে পাহাড়ী-বাঙালীর শত বছর ধরে বসবাস করে আসছে, উভয়ের মধ্যে সমঝোতা, সুভ্রাতৃত্ব বন্ধন রয়েছে। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে জটিলা ও ভূল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। পার্বত্য চুক্তিতে স্পষ্ট করে বলা রয়েছে শুধু পাহাড়ীদের নয় বাঙালীদেরও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.