পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকায় গণ-মানববন্ধন কর্মসূচি পালন

Published: 18 Jan 2016   Monday   

সমতল আদিবাসীদের জন্য স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ, দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে সোমবার ঢাকায় গণ-মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

ঢাকার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কাপেং ফাউন্ডেশনসহ ছাত্র, যুব, নারী, অধিকারকামী ও আদিবাসী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।

 

সংহতি বক্তব্য রাখেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, জনউদ্যোগের সমন্বয়কারী তারেক মিঠুল, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের যুগ্ম আহ্বয়ক চৈতালী ত্রিপুরা, কাপেং ফাউন্ডেশনের হিরন মিত্র চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. গজেন্দ্রনাথ মাহাতো ও রিপন চন্দ্র বানাই, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মানিক সরেন, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের প্রতিনিধি শরীফা নাজনীন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর সভাপতি কেরিংটন চাকমা, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সহ সাধারণ সম্পাদক মূর্ছনা মানকিন, বাগাছাসের সভাপতি অলীক মৃ, গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক টনি চিরান প্রমুখ ব্যক্তিগণসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সদস্য ও কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা।

 

প্রবীন রাজনীতিবীদ পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চাই। চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১৮ বছর অতিবাহিত হয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর এই ১৮ বছরে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া পাহাড়ী আদিবাসীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না করে পার্বত্যবাসীদের যেন সহিংসতার দিকে ঠেলে দেয়া না হয়। আদিবাসীরা যদি ন্যায়সংগতভাবে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য যৌক্তিক দাবি করে তবে তা মেনে নেয়া সরকারের কাজ।


তিনি আরও বলেন, এই সরকার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছিল যে, আদিবাসীদের জমি, জলাধার এবং বন এলাকায় সনাতনি অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাগ্রহণসহ ভূমি কমিশন গঠন করা হবে। অথচ এখনও পর্যন্ত কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। সরকারের উচিত তার প্রতিশ্রুতি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা।

 

অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, মানুষের আত্মপরিচয়ের সংকট ভূমির সংকট থেকে শুরু হয়। আর এই ভূমির সমস্যা আদিবাসীদের প্রধান সমস্যা। তিনি বলেন, মর্যাদা নিয়ে, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি নিয়ে প্রকট সমস্যা নিয়ে যে আদিবাসীরা বেঁচে আছেন সরকারের উচিত সংবিধানে তাদের স্বীকৃতি দেয়া। মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে প্রফেসর কামাল পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি সরকারের কাছে জানান।

 

সঞ্জীব দ্রং বলেন, যাদের সাথে চুক্তি হয়েছে তারা তিন দফায় ক্ষমতায় আছেন অথচ চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি উল্লেখ করে তিনি অতিসত্বর চুক্তির যথাযথ, দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি জানান। এছাড়া ভূমি কমিশনের কাজ নতুন ভাবে শুরু করার জন্যেও তিনি সরকারের কাছে আহ্বান করেন।


তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য স্বাধীন ও পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের কথা সরকার বিবেচনায় রাখবেন।

 

দীপায়ন খীসা বলেন, বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুনধুম থেকে রাঙামাটি হয়ে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার দুদুকছড়া পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে এক বিশাল গণ-মানববন্ধন এবং সমতল অঞ্চলে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় আদিবাসীদের একযোগে মানববন্ধন সরকারের কাছে আদিবাসীরা বার্তা দিচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং সমতল আদিবাসীদের ভূমি কমিশন অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে।

পল্লব চাকমা বলেন, সরকার সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের বেহাত হওয়া ভূমি উদ্ধারের জন্য ভূমি কমিশন গঠনের জন্য এভাবে নির্বাচনী অঙ্গীকার প্রদান করলেও বিগত ৭ বছরে এ বিষয়ে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। পক্ষান্তরে সরকারী উদ্যোগে তথাকথিত ইকো-পার্ক, জাতীয় উদ্যান, সাফারী পার্ক, সরকারী ও বেসরকারী স্থাপনা, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল ইত্যাদি নামে সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের চিরায়ত ভূমি অধিকার খর্ব করে আদিবাসীদেরকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।

 

মানববন্ধনে সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন,পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ, দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সময়সূচি ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা,আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ও প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান এবং আদিবাসী জাতিসমূহের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ও জীবনমান উন্নয়নের রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
-হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত