লামায় যেনতেনভাবে সেতু নির্মান করে চলেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ (২য় পর্যায়)প্রকল্প কর্তৃক বান্দরবানের লামা উপজেলায় বাস্তবায়নাধীন ৭টি সেতু নির্মাণের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
কোনো রকম নিয়মনীতি না মেনে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ হওয়ায় এ নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগসহ নানান অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সরকারী কাজে কর্মকর্তাদের অবহিত করলেও তারা কোন রকম ব্যবস্থা না নেওয়া রহস্যজনক কারণে নিরবতা পালন করে।
এদিকে,এ ব্যাপারে নির্মাণ কাজে দায়িত্বরত লামা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অ:দা:) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে জানানো হলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে ব্যাক্তিগতভাবে কথা বলবে বলে নিউজ না করার জন্য বলেন। আর নিউজ করলে কোন তথ্য দেয়া হবে না বলে ফোন কেটে দেন।
সরেজমিনে ও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের তিন পার্বত্য জেলার ২৫টি উপজেলায় ১৩৭টি ব্রীজের কাজ গ্রহণ করা হয়েছে। অধিদপ্তরের রেকর্ড মতে সকল ব্রীজের কাজ ইতিমধ্যে সমাপ্ত হওয়ায় কথা থাকলেও বাস্তবে প্রকল্পের স্থানে গিয়ে দেখা যায় ১০ শতাংশ কাজ এখনো হয়নি। উক্ত প্রকল্পের অধিনে লামা উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নের ৭টি সেতু/কালভার্ট নির্মাণের বিপরীতে প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এ বরাদ্দ গত বছর নভেম্বর মাসে দেয়া হয়।
এরমধ্যে শিলেরতুয়া হতে চিংকুম পাড়া যাওয়ার রাস্তায় ছামাইছড়ি ঝিরির উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প একটি। প্রাক্কলিত চুক্তি মূল্য ৩০লক্ষ ৩৮ হাজার ২২২টাকা। এ প্রকল্পটি ইতোমধ্যে ঠিকাদার কোনো নিয়ম নীতি না মেনে কাজ শুরু করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে জানায়, কালভার্ট নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা তাদের ইচ্ছা মাফিক কাজ করে যাচ্ছে। মাটি মেশানো বালু, নষ্ট ইটের কংকর, মাটি পাথর, নি¤œমানের রড ও সিমেন্ট দিয়ে হচ্ছে সেতু নির্মাণে। পিলার নির্মাণে বেইজ ঢালায় করতে করা গর্তগুলো সাইজ কত হবে তা জানেন না মিস্ত্রি। সেতুর দৈর্ঘ্য প্রস্থ ও নির্মাণ সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর কোনো শ্রমিকের মুখে মিলেনি। প্রাক্কলিত প্রকল্প কত ফুট ও কি পরিমাণ মাটি কেটে গর্ত করতে হবে যার কোন ধারনা নেই কর্মরত মিস্ত্রিদের। একই অবস্থা অন্য ৬টি ইউনিয়নে নির্মাণাধীন ৬টি সেতুর।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রমজান আলী জানান, একাজে কোনো নিয়ম-নীতি মানা হয়নি। এসব কাজে প্রাক্কলিত নিয়ম অনুসারে মাটি খননের পর ছয় ইঞ্চি বালু দিতে হবে। এ বালু উপর বিছাতে হবে ইট। তারপর দিতে হয় ৩ ইঞ্চি সিসি ঢালা। এটিই হচ্ছে মূল ভিত্তি। কিন্তু এখানে এসব কিছুই করা হয়নি। নেই কোনো প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বা তার পরিবর্তে কাজটি তত্ত্বাধানের জন্য কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী। সবকিছু ঠিকাদারের মনগড়া ইচ্ছামাফিক কাজ চলে। এ অবস্থায় কাজটি টিকে থাকা মান নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ওই ইউপি সদস্য।
স্থানীয় আশরাফ আলী, মিরাজ, শামসুল হক জানান, কালভার্ট নির্মাণ করতে প্রাকৃতিক ঝিরি-ঝরনা থেকে পাথর আহরণ চলছে। এভাবে পাথর আহরণ করা হলে এলাকার কোনো ছড়া বা ঝরনায় পাথর থাকবে না। এতে অদুর ভবিষতে ছড়ায় পানি না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
ওই কাজে নিয়োজিত শ্রমিক প্রধান ফজল হক মিস্ত্রি বলেন, মাটি শক্ত ও পাথর থাকায় গর্ত বেশি করার প্রয়োজন হয় না। নিয়মানুসারে কত ফুট মাটি খনন করতে হয়, এ প্রশ্নে তিনি এরিয়ে যান এবং তিনি বলেন বোল্ডার পাথরগুলো স্থানীয়দের কাছ থেকে ফুট প্রতি ৬০টাকায় কেনা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লামা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অ:দা:) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, আপনাদের (সাংবাদিক) সাথে ব্যাক্তিগতভাবে কথা বলব। নিউজ করেন না। আর নিউজ করলে কোন তথ্য দেয়া হবে না।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.