শনিবার আর্যশ্রাবক বনভান্তের চতুর্থ তম মহাপরিনির্বাণ দিবস

Published: 29 Jan 2016   Friday   

দেশের প্রধান ধর্মীয় গুরু আর্যশ্রাবক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের শনিবার চতুর্থ তম মহাপরিনির্বাণ দিবস। এ উপলক্ষে রাঙামাটির রাজ বন বিহারের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।


মহাসাধক বনভান্তে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। এর আগে ২৭ জানুয়ারী বনভান্তেকে রাঙামাটি থেকে মুমুর্ষ অবস্থায় হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় নেয়া হয়। তাঁর বার্ধক্যজনিত রোগ ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, ঠান্ডাজনিত সমস্যা এবং ফুসফুসে সমস্যা ছিল। ৩১ জানুয়ারী রাতে রাঙামাটি পরিনির্বাণপ্রাপ্ত বনভান্তের মরদেহ পৌছার পর হাজার হাজার ভক্ত ও পূর্নাথী তাকে শ্রদ্ধা জানান। বর্তমানে রাঙামাটির রাজ বন বিহারে বনভান্তের ধাতুটি (মরদেহ) বিনয় ও বিজ্ঞান সম্মতভাব সংরক্ষন করে রাখা হয়েছে।


জানা গেছে, শ্রাবকবুদ্ধ বনভান্তের চতুর্থ তম পরিনির্বাণ দিবস উপলক্ষে শনিবার রাঙামাটি রাজ বন বিহারে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সকালে পঞ্চশীল গ্রহন, অষ্টপরিস্কার দান এবং দুপুরের দিকে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও স্মরণ সভার আয়োজন ছাড়াও বিকালে প্রদীপ প্রজ্জ্বালন করা হবে। অনুষ্ঠানে হাজার হাজার ভক্ত ও পুর্ণাথী এ মহাপরিনির্বাণ দিবসে শরিক হওয়ার কথা রয়েছে।


উল্লেখ্য, এ বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির(বন ভান্তে) ১৯২০ সালের ৮ জানুয়ারী রাঙামাটি জেলা সদরের মগবান ইউনিয়নের মোড়ঘোনা গ্রামের সাধারণ পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। বন ভান্তের প্রব্রজ্যা গ্রহনের আগে তাঁর গৃহীর নাম ছিল রথীন্দ্র লাল চাকমা। তার পিতার নাম স্বর্গীয় হারু মোহন চাকমা এবং মাতার নাম স্বর্গীয় বীরপুদি চাকমা। তিনি ৫ ভাই ও এক বোনের মধ্যে সকলের বড় ছিলেন। বন ভান্তের জন্ম স্থানটি ১৯৬০ সালের কাপ্তাই বাধের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ডুবে যায়। 

 

১৯৪৯ সালের ফ্রেরুয়ারী মাসে চট্টগ্রামের নন্দন কানন বৌদ্ধ বিহারে ফাল্গুনী পূর্নিমা তিথির সময়ে শ্রীমৎ দীপংকর ভিক্ষুর কাছে তিনি প্রব্রজ্যা গ্রহন করেন। প্রব্রজ্যা গ্রহনের পর তিনি বৌদ্ধ ধর্মের সত্যের সন্ধান করতে থাকেন। তিনি নিজের প্রজ্ঞাবলে উপলদ্ধি করেন যে মনুষ্য লোকে অবস্থান করে দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব নয়। তাই তিনি নিজের জন্ম স্থানের পাশে ধনপাতা নামক স্থানে ফিরে এসে গভীর জঙ্গলে অবস্থান করে নিজেকে শীল-সমাধি-প্রজ্ঞার ধ্যান সাধনায় নিয়োজিত করেন। 

 

অবশেষে দীর্ঘ ১২ বছর কঠোর ধ্যান সাধনার মধ্য দিয়ে তিনি বৌদ্ধ ধর্মের সত্য দর্শন ও মার্গফল লাভ করেন এবং তিনিই সর্ব প্রথম চিরাচরিত ধর্ম আচরণের পরিবর্তে তথাগত গৌতম বুদ্ধ প্রবর্তিত লোকাত্তর সাধনার প্রর্বতন করেন। পরবর্তীতে তার জন্ম স্থান কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ডুবে যাওয়ার পর ১৯৬১ সালে তিনি খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার বনাশ্রমে ভিক্ষু জীবন যাপন শুরু করেন।

 

পরে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার তিনটিলা বন বিহারে ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্ষন্ত অবস্থান করেন। পরবর্তীতে বন ভান্তে ১৯৭৪ সালে রাঙামাটির সদরের তৎকালীন চাকমা রাজা দান করা ও চাকমা রাজার আমন্ত্রনে ৩৩ একর জায়গা উপর গড়ে উঠা রাঙামাটি রাজ বন বিহারে স্থায়ীভাবে অবস্থান করেন। তিনি ১৯৮১ সালে ১৪ ফের্রুয়ারী মহাথেরো হিসেবে উপসম্পদা লাভ করেন।

 

বন ভান্তের জীবিত অবস্থায় মহামতি বুদ্ধের পদাংক অনুসরণ পূর্ব পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় সর্বত্র এবং চট্টগ্রামের অনেকাংশই লোকোত্তর জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়ার কর্ম সম্পাদন করেছিলেন। তিনি ১৯৭৩ সালে মহাপূন্যবর্তী বিশাখা প্রবর্তিত কঠিন চীবর দান(তুলা থেকে সূতা, সূতা রং করা, সূতা থেকে কাপড় বোনা এবং পরে চীবর প্রস্তুত করা) উৎসব শুরু করেন রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলার থেকে। একই বছর তিনি রাঙামাটি আসার পর থেকে রাঙামাটি রাজ বন বিহারে এই প্দ্ধতি অনুসরনপূর্বক দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

 

প্রতি বছর তিন পার্বত্য জেলার ৩৪টি শাখা রাজ বন বিহারে এই অনুষ্ঠান পালিত হয়ে আসছে। আড়াই হাজার বছর আগে ভগবান গৌতম বুদ্ধের জীবব্দশায় মহাপূর্নবতী বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত ২৪ ঘন্টার মধ্যে সূতা কাটা শুরু করে কাপড় বয়ন, সেলাই ও রং করাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়ে থাকে বলে একে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়। 

 

এ পদ্ধতিতে দান করলে কায়িক-বাচনিক এবং মানসিক পরিশ্রম অধিকতর ফলদায়ক হয় বলে বৌদ্ধ শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। ১৯৯৬ সালে শ্রীমৎ বন ভান্তের উপদেশ অনুসারে তবোতিংশ স্বর্গ এবং দীপামেরু পূজা প্রচলন শুরু হয় রাজ বন বিহারে।

 

 

বনভান্তে এও শিক্ষা দেন যে নিজের ভূলকে স্বীকার করে অপরকে মার মাধ্যমে প্রবারনার পূর্নিমার দিনে পরস্পরকে মা করে দেয়ার মহানমন্ত্র। তিনি প্রায় বলতেন পূর্ন্যর কাছে ভাগ্য এবং ধন হারানো কিছুই নয়, নির্বানই সর্বতম সুন্দর।

 

শীল পালনের মাধ্যমে বস্তুগত সম্পদ অর্জন সম্ভব বলে তিনি উপদেশ দিতেন। তিনি এ কথাও বলতেন যে পূন্য এবং শীল পালন করা গেলে পৃথিবীতে সুখ লাভ করা যাবে এবং নির্বাণ প্রাপ্তির পথ সুগম হবে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত