পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় নারীর উপর সহিংসতা,নির্যাতন,হত্যা,গুম ইত্যাদি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে

Published: 07 Apr 2016   Thursday   

বাংলাদেশের আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের মানবধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। বিশেষ করে পার্বত্য চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে নারীর উপর সহিংসতা, নির্যাতন, হত্যা গুম ইত্যাদি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ, চুক্তি অনুযায়ী ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সংশোধনী আইন যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়ায় এবং বিচারহীনতা সংস্কৃতি অব্যাহত থাকায় আদিবাসী নারীর মানবধিকার পরিস্থিতিকে বিপদজনক পর্যায়ে ধাবিত করছে।


বক্তারা বলেন, যুগ যুগ ধরে লালন করে আসা আদিবাসীদের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করা হচ্ছে। পর্যটনে বিভিন্ন প্রলোভনে দেখিয়ে নারীদের বিপদগামী করা হচ্ছে।


বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে ‘আদিবাসী নারীর মানবধিকার পরিস্থিতি ও স্থানীয় নেতৃত্বের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।


বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা টংগ্যার সন্মেলন কক্ষে কাপেং ফাউন্ডেশনের আয়োজনে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবধিকার কমিশনের সদস্য নিরুপা দেওয়ান। সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি শক্তিপদ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বরকল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনি চাকমা।

 

আলোচক ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সাধারন সম্পাদক সুপ্রভা চাকমা, নারী হেডম্যান-কারবারী নেটওয়ার্কের সাধারন সম্পাদক সান্তনা চাকমা, মানবধিকার কর্মী মুক্তা শ্রী চাকমা সাথী ও এ্যাডভোকেট শ্রীজ্ঞানী চাকমা।

 

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মানবধিকার কর্মী মোনালিসা চাকমা। স্বাগত বক্তব্যে দেন কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাবলু চাকমা। দিন ব্যাপী সেমিনারে প্রথাগত নারী হেডম্যান, কারবারী, মানবধিকার কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন অংশ নেন।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, নারীদের সন্ধ্যায় বের না হওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় নির্দেশ জারি করে। নারীদের বের হওয়া নিয়ে যদি নিষেধ করা হয় তাহলে এই রাষ্ট্র কার জন্য? দেশের এই অবস্থার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের অবস্থা আরো খারাপ। নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটলে মামলা নেওয়ার জন্য পুলিশকে একাধিকবার অনুরোধ করতে হয়। পুলিশ মামলা নিতে অপারগতা দেখায়।


সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১৫ সালে সারাদেশে ৮৫ জন আদিবাসী নারী ও কন্যা শিশু শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪ জন পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং ৪১ জন সমতলের আদিবাসী নারী ও শিশু। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মোট ৪৩৪ জন আদিবাসী নারী ধর্ষন ও গণ ধর্ষন, ৩টি হত্যা, ১১টি শারীরিক লাঞ্চনা, ১৬টি ধর্ষনের চেষ্টা, ৫টি অপহরন, ৬টি শারিিরক ও যৌন হয়রানী এবং ২টি পাচারের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সালে সংঘটিত মোট ৬৯টি ঘটনার মধ্যে ৩৮টি পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং বাকগিুলো সমতলে সংঘটিত হয়েছে।


উপস্থাপিত প্রবন্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথাগত প্রতিষ্ঠানে নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধি, নারী নেতৃত্বের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী, সামাজিক বিচার শুনানীতে নারীর প্রতিনিধিত্ব ও সক্রিয় অংশ গ্রহন নিশ্চিত করা, সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা, আদিবাসী নারীদের উপর সহিংসতা বন্ধের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন এবং পার্বত্য চুক্তির দ্রুত ও যথাযথভাবে বাস্তবায়নসহ ইত্যাদি বিষয়ে নারী নেতৃত্ব শক্তিশালীকরনের প্রস্তাবনা করা হয়েছে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত