বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের চাক পাড়ায় বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে শনিবার রাতে মিয়ানমারের দুই নাগরিকসহ তিনজনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন- হ্লামং চাক (৩২), জিয়া উদ্দিন (২৮) এবং রহিম (২৯)।
এদিকে, এ হত্যাকান্ডে চারটি বিষয় নিয়ে তদন্ত কাজ চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে ডিবিকেও তদন্তের রাখা হয়েছে। জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার পাশাপাশি মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের সন্দেহের মধ্যে রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গেল শনিবার বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের চাক পাড়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ উ ধাম্মা ওয়াইশা ভিক্ষুর(৭৫) গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শুক্রবার রাতে কোনো এক সময়ে এ বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করা হয়েছে ধারনা পুলিশের। তবে বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করা হলেও বিহারের কোনো মূর্তি বা জিনিস চুরি হয়নি।
এদিকে, শনিবার রাতে বৌদ্ধ ভিক্ষুর লাশ নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পৌছায়। তবে রোববার সকালে নিহতের আত্বীয়-স্বজনরা হাসপাতালে এসে পৌছান। এ ব্যাপারে শনিবার রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় আতংক বিরাজ করছে।
নিহতের বড় ছেলে অংছাথোয়াই চাক জানান, শুক্রবার রাতে কোনো এক সময় তার বাবাকে হত্যা করা হয়। ঘটনার দুইদিন আগে বিহারের আশপাশে অজ্ঞাত পরিচয় দুই ব্যক্তিকে ঘোরাফেরা করতে দেখেন তার বাবা। তাদের গতিবিধি দেখে সন্দেহ জাগে তার বাবার। বিষয়টি তাকে জানান। বিষয়টি এত বড় ঘটনার জন্ম হবে না ভেবে তিনি আমলে নেননি। তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন রাতে হালকা বৃষ্টিপাত হয়। হত্যাকারীরা জানালা দিয়ে ঢুকে তার বাবাকে হত্যা করে প্রধান দরজা দিয়ে পালিয়ে যায় বলে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
অপরদিকে, পুলিশও ধারণা করছেন হত্যাকারীরা সুযোগ বুঝে লোক চলাচলের রাস্তা দিয়ে প্রবেশ না করে জঙ্গলের পথ ব্যবহার করেছে। বৃষ্টি হওয়ার কারণে বিহারের পেছনের জঙ্গলের রাস্তায় পায়ের চিহৃ পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল বসতি থেকে প্রায় ৩০০ গজ দূরে ও নির্জন হওয়ায় হত্যাকারীরা সহজে ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিদেশি নাগরিকসহ ভিন্ন ধর্মাবলম্বিদের হত্যাকান্ডের সঙ্গে এই হত্যাকান্ডের কোনে যোগসূত্র আছে কি-না খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফের রোহিঙ্গ শরণার্থী শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে কমান্ডারকে গুলি করে হত্যা ও অস্ত্র-গুলি লুটের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তারা এই হত্যাকান্ডে জড়িত কি-না খতিয়ে দেখছে পুলিশ। জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার পাশাপাশি মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি বা তাদের কোনো সংগঠন জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের জানান, বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যার ঘটনায় দুই মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গা ও চাক সম্প্রদায়ের একজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন- হ্লামং চাক (৩২), জিয়া উদ্দিন (২৮) এবং রহিম (২৯)। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে এখনো পর্যন্ত হত্যার কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পুলিশ সুপার মো: মিজানুর রহমান জানান, বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যাকান্ড ঘটনা চারটি বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার পাশাপাশি রোহিঙ্গার কোনো দল-গোষ্ঠি বা ব্যক্তি জড়িত আছে কি-না দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, নিহত ভিক্ষুর জমি-জমা রয়েছে। জমি নিয়ে বিরোধ আছে কি-না কিংবা জমি বিক্রির টাকা ধার হিসেবে চাইতে গিয়ে না পাওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়েছে কি-না। এছাড়া পুলিশের তথ্যে পাওয়া গেছে, নিহত বৌদ্ধ ভিক্ষু ধ্যান করতেন।
আশপাশের এলাকায় অনেক বৌদ্ধ ভিক্ষু কবিরাজি করার কারণে নিহত বৌদ্ধ ভিক্ষুর ধ্যানের বিষয়টি প্রছন্দ করতেন না। এই বিষয়টিও মাথায় রেখে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.