থেগামুখে সড়ক হলে পার্বত্যাঞ্চলের বন উজাড়সহ পরিবেশের বিপর্যয়ের সম্ভাবনা

Published: 16 May 2016   Monday   

সোমবার রাাঙামাটিতে থেগামুখ স্থানে স্থল বন্দর স্থাপনে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে থেগামুখ পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্যতা বাচাই শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

সভায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রাঙামাটির ভারতের মিজোরাম রাজ্যের সীমান্ত বরকল উপজেলার থেগামুখ পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বন উজাড়,লোকজন উচ্ছেদে পরিণত হবে,পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের সম্ভাবনাসহ স্থানীয় আদিবাসীদের জীবনমান হুমকির সম্মুখীন হবে। তাই সড়ক  নির্মানের আগে স্থানীয়দের কাছ থেকে ব্যাপক জনমত এবং পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলছে  কিনা তার যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। তা না হলে সমস্যার আশংকার প্রকট রয়েছে। 

 

মতবিনিময় সভায় প্রকল্পের সার সংক্ষেপে তথ্যে জানা যায়,যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে আঞ্চলিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে একদিকে দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে অন্যদিকে পার্বত্যাঞ্চলের জনসাধারনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তরাম্বিত হবে। সেই লক্ষ্যেকে সামনে রেখে বানিজ্য ও পরিবহন খাতে প্রতিষ্ঠানিক উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো বিশ্লেষন করে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সম্ভাব্য বিনিয়োগের মাধ্যমে আঞ্চলিক বানিজ্য ও সহযোগিতার উন্নয়নে লক্ষ্যে সকরারের কারিগরী সহায়তা সংক্রান্ত একটি প্রকল্প গ্রহন করেছে। এ প্রকল্পের আওতাভূক্ত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে থেগামুখ পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্যতা বাচাইয়ের ইতোমধ্যে প্রাথমিক জরিপ অনুসন্ধান করা হয়েছে।  সম্ভাব্য সড়কের মধ্যে ১টি স্থল পথ ও ১টি বহুমাত্রিক পথ বাছাই করা হয়েছে। এ সড়ক নির্মাণে সহায়তা দিচ্ছে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক(এডিবি)।

 

এসব সড়ক নির্বাচনের যেসব বিষয়ে বিবেচনা করা হয়েছে তা হল পরিবেশ ও সামাজিক প্রভাব, জনবসতি, ভূমি অধিগ্রহন, রাস্তা উন্নয়ন ব্যয়, ভ্রমন সময়, সুবিধাপ্রাপ্ত জনসংখ্যা ইত্যাদি। ৮টি পথের মধ্যে ২টি সড়ক সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য বিবেচিত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি স্থল পথের মধ্যে নির্বাচিত পথ হচ্ছে রাজস্থলী-বিলাইছড়ি-জুরাছড়ি-বরকল-থেগামুখ(দৈর্ঘ্য ১২৩.৫৪ কিঃমিঃ), চারটি বহুমাত্রিক পথের মধ্যে হচ্ছে রাঙামাটি-ছোট হরিণা(জলপথ ৬৩ কিঃমিঃ) এবং ছোট হরিণা-থেথামুখ(স্থল পথ ৭.৯৮ কিঃমিঃ)। সর্বমোট পথ ৭০-৯৮ কিঃমিঃ।

 

মতবিনিময় সভায় বলা হয়, প্রাথমিকভাবে জরিপে রাজস্থলী-বিলাইছড়ি-জুরাছড়ি-বরকল-থেগামুখ এর ১১৪. ৭৫০ কিলোমিটার সড়কে নির্মাণে কমপক্ষে ৫৬৪ পরিবার, ১৫৭ টি দোকানঘর, ২৪১ পরিবারের বাগান, ৭টি মসজিদ, ৬টি মন্দির, ৮টি বিদ্যালয়, ৩২টি পুকুর এবং কিছু পানির জলাজয়   ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তবে এসব ক্ষতিগ্রস্থদের আর্থিক ও কারিগরী যথাযথ সহাযোগিতা দেয়া হবে।

 

সভায়  নেতৃবৃন্দ আরও বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রামের ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তির সমাধান এখনো হয়নি, এই অবস্থায় সড়ক  নির্মানের  উদ্যোগ  নেওয়া হলে এ অঞ্চলের ভুমির জটিলতা বৃদ্ধি পাবে। এ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য  জেলা পরিষদসহ সামাজিক  নেতৃবৃন্দের মতামতকে উপক্ষো করা হচ্ছে।

 

স্থানীয় আশিকা হল রুমে আয়োজিত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সহযোগীতায় বাংলাদেশ ট্রেড এ্যান্ড  ট্রান্সপোর্ট স্ট্যাডিস প্রজেক্ট (বিটিটিএস)  উদ্যোগে  দিন ব্যাপী মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্রান্সফোর্ট সার্ভিস প্রজেক্টের(বিটিটিএস) প্রকল্প পরিচালক মুবিন মুজিবুল হক সমাজি। উপস্থিত ছিলেন, রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ,এডিবি’র কনসালটেন্ট র্কীতি নিশান চাকমা, ইকবাল আহমেদ, ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান মসিন রানা প্রমুখ। মতবিনিময় সভায় চার উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, হেডম্যান, কার্বারী, শিক্ষক, আইনজীবী,সাংবাদিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

 

সভায় বক্তারা কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিং-এর মাধ্যমে রাঙামাটি-থেগামুখ নৌ পথ করা যেতে পারে বলে অভিমত প্রকাশ করেন। এতে একদিকে পরিবেশের উপর  প্রভাব পড়বে না  এবং স্থানীয়  লোকজন ক্ষতিগ্রস্থ  হবে না। এছাড়া কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিং করা হলে  হ্রদের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে এবং এলাকার লোকজন তার সফল ভোগ করতে পারবেন।

 

বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্রান্সফোর্ট সার্ভিস প্রজেক্টের(বিটিটিএস) প্রকল্প পরিচালক মুবিন মুজিবুল হক সমাজি বলেন, এ সড়ক নির্মানের একেবারে প্রাথমিক জরিপ করা হয়েছে। এলাকার মানুষের মতামত নিয়ে এ সড়ক করা হবে। জনমতেবর বাইরে কোন উদ্যোগ নেয়া হবে না। পরবর্তীতে আরো জনমত নেয়া  হবে এবং ব্যাপক জরিপ কাজ চালানো হবে। এছাড়া এডিবি`র নীতিমালার ভিত্তিতে এসব সড়ক নির্মানের  পদক্ষেপ নেয়া হবে।

 

বক্তারা বলেন,থেগামুখ বন্দরের উপর পাহাড়ের মানুষ নির্ভরশীলতা নয়। কিন্তু এই বন্দরকে কেন্দ্র করে পার্বত্যবাসীর সুবিধার কথা বলা হচ্ছে এটি  একটি রহস্যজনক। এর উদ্দেশ্য কি  রয়েছে তা পরিস্কার নয়। স্থানীয়দের সুবিধা প্রধান্য কথা যেহেতু বলা হচ্ছে তাই উপজেলা পর্যায়ের সড়কগুলো উন্নয়ন করা যেতে পারে মত প্রকাশ করেন বক্তারা।

 --হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত