মধুপুরে আদিবাসীদের জমি অধিগ্রহণ বিষয়ক পরিস্থিতি উপর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন

Published: 25 Jul 2016   Monday   

সোমবার ঢাকায় টাঙ্গাইলের মধুপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নামে আদিবাসীদের জমি অধিগ্রহণ বিষয়ক পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শনোত্তর সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। 

 

রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি গোলটেবিল কক্ষে হিউম্যান রাইটস্ ডিফেন্ডারস্ ফোরাম, ঢাকা ও নাগরিক প্রতিনিধি দলের যৌথ উদ্যোগে এবং আইইডি ও কাপেং ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এ সংবাদ সম্মেনের আয়োজন করে।


হিউম্যান রাইটস্ ডিফেন্ডারস্ ফোরাম, ঢাকা-এর আহ্বায়ক, শিপন কুমার রবিদাসের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় বলা হয়,সংবাদ সন্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও চেয়ারপার্সন, কাপেং ফাউন্ডেশনের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন।

 

বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ, আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মদ খান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, দৈনিক কালের কন্ঠের সাংবাদিক হোসেন জামাল, হিউম্যান রাইটস্ ডিফেন্ডারস্ ফোরাম, ঢাকা-এর আহ্বায়ক শিপন কুমার রবিদাস। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আইইডির অ্যাডভোকেসি অফিসার হরেন্দ্রনাথ সিং।


এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইইডির সমন্বয়কারী হামিদুজ্জামান, প্রকল্প সমন্বয়কারী জ্যোতি চট্টোপাধ্যায়, সহকারী সমন্বয়কারী ও জনউদ্যোগ জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব তারিক হোসেন মিঠুল, আদিবাসী নেতা দীপায়ণ খীসা, কাপেং ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার হিরণ মিত্র চাকমা, জন ত্রিপুরা প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ফাল্গুনী ত্রিপুরা। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন নেতৃবৃন্দ।

 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গেল ২১ থেকে ২২ জুলাই নাগরিক ও সাংবাদিক প্রতিনিধি দলসহ টাঙ্গাইলের মধুপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নামে আদিবাসীদের জমি অধিগ্রহণ বিষয়ক পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এসময় দলটি অরণখোলা ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা আদিবাসী ও বাঙালিদের সাথে কথা বলেন।


ক্ষতিগ্রস্থ বাসিন্দারা জানিয়েছেন কোনো এলাকার বাসিন্দাদের সাথে আলোচনা-সংলাপ ছাড়াই কীভাবে সে বিস্তীর্ণ এলাকাকে সংরক্ষিত বনভূমি ঘোষণা করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে ঘোষিত সংরক্ষিত বনভূমি এলাকার মধ্যে ভূমির উপর কোন ধরনের দাবি-দাওয়া উপস্থাপিত হয়নি। কিন্তু এই সংরক্ষিত বনভূমি ঘোষণার বিষয়টি এখনো বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীসহ কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত নয়। তাই নিজ ভূমির উপর দাবি-দাওয়া না থাকার তথ্যটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। আদিবাসীদের অজান্তেই সংরক্ষিত বনভূমি কার্যক্রমটি পরিচালিত হচ্ছে।


সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, উদ্দেশ্য বন সংরক্ষণ হলেও বাস্তবে এলাকার বিভিন্ন স্থানে অবকাশ ও বিনোদন কেন্দ্র, বাংলো ইত্যাদি তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া বিস্তীর্ণ এলাকাকে ঘিরে দেয়াল নির্মাণের কথাও জানা গেছে। যেহেতু সংরক্ষিত বনভূমি, তাই সন্দেহ করা হয়, প্রক্রিয়াটি অরণখোলা ইউনিয়নের গ্রামগুলো থেকে আদিবাসীদের সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র মাত্র।

 

যে ভূমির উপর যুগ-যুগ ধরে আদিবাসীদের বসবাস, যেখানে জড়িয়ে রয়েছে তাদের জীবন-জীবিকা, যাকে ঘিরে আদিবাসীরা স্বপ্ন দেখে সামনে এগিয়ে চলার, সেই ভূমি থেকে তাদের উচ্ছেদ কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। হাজারো আদিবাসীকে বাস্তুহারা করে বিনোদনের জায়গা নির্মাণ কোনো সচেতন নাগরিকের পক্ষেই মেনে নেয়া অসম্ভব।


সংবাদ সন্মেলনে বলা হয়, সেখানকার বসবাসরত আদিবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই এলাকায় বন সংরক্ষণের নামে সরকারের অধিগ্রহণের বিপরীতে আদিবাসীরা যেকোন মূল্যে তাদের জমি ও বন রক্ষা করতে প্রস্তুত। প্রয়োজনে পীরেন স্নাল ও চলেশ রিছিলদের মতো জীবন দিতেও তারা কুণ্ঠা বোধ করবে না। কেননা স্থানীয় আদিবাসীরা বংশানুক্রমে এই বনকে আবিমা (মাটি মা) বা মায়ের মতোই গণ্য করে। এ কারণেই আদিবাসীরা মাতৃতুল্য ভূমি বা বনকে তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অনুযায়ী দলিল বা রেজিস্ট্রি করেননি।


সংবাদ সন্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, সকল নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকারের কথা উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান ও আইএলও-এর কনভেনশন সূত্রে রাষ্ট্র আদিবাসীদের সুরক্ষা প্রদানে বাধ্য।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত