মৌলভীবাজারে খাসিয়া আদিবাসী তরুণী হত্যা, ঝিমাই পুঞ্জি দখলের অপচেষ্টা ও দেশব্যাপী আদিবাসীদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে শনিবার ঢাকায় প্রতিবাদী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের নেতা রিপন বানাই-এর স্বাক্ষরিত একপ্রেস বার্তায় বলা হয়, ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন আয়োজিত মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানবন্ধন চলাকালে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। এসময় সংহতি বক্তব্য রাখেন, আইইডি’র নির্বাহী পরিচালক নুমান আহমেদ খান, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, এএলআরডি’র প্রতিনিধি একে এম বুলবুল আহামেদ, আব্দুল আহাদ মিনার, সাধারণ সম্পাদক, ওর্য়ার্কাস পার্টি, মৌলভীবাজার জেলা শাখা, আদিবাসী নেতা দীপায়ন খীসা, সাবেক ছাত্র নেতা ও আদিবাসী সংগঠক হিরন মিত্র চাকমা, আদিবাসী নেত্রী চঞ্চণা চাকমা, ছাত্র নেতা অনন্ত বিকাশ ধামাই ও ছাত্র নেতা টুকি চাম্বুগংসহ আরো অনেকে। মানববন্ধনে আরো সংহতি প্রকাশ করেন, কাপেং ফাউন্ডেশন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, হিউমেন রাইটস ডিফেন্ডারস, গারো স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (গাসু), বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) ও বাংলাদেশ কাথলিক স্টুডেন্ট্স মুভমেন্ট (বিসিএসএম)। সমাবেশে সঞ্চলনা করেন উইলিয়ম নকরেকের।
মানববন্ধনের ৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হল মোনালিসা নংক্রট এর হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে তাদের শাস্তি ও আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ঝিমাই পুঞ্জিতে খাসিয়া আদিবাসীদের জুম গাছ কাটার সিদ্ধান্ত বাতিল এবং সেখানকার বসবাসকারী খাসিয়া আদিবাসীদের নামে ভূমি মালিকানা নিশ্চিত করা, আদিবাসীদের ভূমি, সংস্কৃতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ও সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ তাদের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও স্বতন্ত্র ভূমি কমিশন গঠন করে সমস্ত ভূমি সমস্যার সমাধান করা, পার্বত্য চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন করে যে সকল সমস্যা বিদ্যমান তার সমাধান করা এবং এ পর্যন্ত আদিবাসীদের উপর ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি প্রদান, ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সমাবেশে সংহতি বক্তব্যে সাংসদ হাজেরা সুলতানা এমপি বলেন, আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী হয়েও আমাদের একজন আদিবাসী বোনকে হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় দাড়াতে হয়। তিনি অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন।
বর্ষীয়ান রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্রাচার্য বলেন, পাঞ্জাবীরা যেমন বাঙ্গালীদের পায়ের নিচে পিষে রেখেছিল ঠিক তেমনি আমরা বাঙালিরাও এদেশের আদিবাসীদের পায়ের তলায় পিষে রেখেছি। এটা ঠিক নয় এভাবে গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের রাষ্ট্রকে আদিবাসীদের স্বীকৃতিসহ আমাদের আদিবাসী মেয়েকে যে হত্যা করা হয়েছে এটাসহ সকল নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে এবং এটার সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। আমাদের সবার মিলিত প্রচেষ্টায় খাসিয়া পুঞ্জি দখলের অপচেষ্টা প্রতিরোধ করতে হবে ।
বিশিষ্ট নাট্যকার মামুনুর রশীদ তার সংহতি বক্তব্যে বলেন, আমাদের ভাষার মাসে আমরা আদিবাসীদের ভাষার স্বীকৃতি তো দিচ্ছিই না বরং উল্টো তাদের উপর বিভিন্ন রকমের নিপীড়ন নির্যাতন চালাচ্ছি। আর তার উজ্জল প্রমান আজ আমরা এই রাজপথে দাড়িয়ে আমাদের আদিবাসী তরুণী মোনালিসার হত্যার বিচার, খাসিয়া পুঞ্জি দখলের অপচেষ্টা ও আদিবাসীদের নির্যাতনের প্রতিবাদে বিচার চাইতে হচ্ছে এই স্বাধীন দেশে থেকেও। এ থেকে বড় লজ্জা আমাদের আর কি হতে পারে?
বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আব্দুল মতিন বলেন, আদিবাসীদের যে কোন আন্দোলনে আমরা সাথে আছি। আমরা আগামীতে সেই পুঞ্জি পরিদর্শনে যাবো এবং যা যা করতে হয় আমরা তাই করবো। প্রয়োজনে সেখানকার স্থানীয় জনগণ ও আদিবাসীদের নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, যেখানে বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে প্রণোদনা আনছে দেশের পরিবেশ রক্ষা করার জন্য সেখানে কিভাবে আবার একই সরকার গাছকাটার মতো এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে পারে? আমি মনে করি বাংলাদেশ সরকার এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রকে আদিবাসীদের প্রতি আরও আন্তরিক হতে হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.