ভবনের মালিক আবু তৈয়ব অনুমতি ব্যবতীত নকশা প্রনয়ন বিহীন ভবন নির্মাণ করে ঝুকিপুর্ণ অবস্থায় ঘরভাড়া প্রদানের কারণে রাঙামাটিতে দ্বিতল ভবন ধ্বসে ৩ শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যূর ঘটনা ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া জল মহলের ঢালু জায়গায় ভরাট করা মাটিতে দ্বিতল ভবন নির্মাণরে ফলে ভরাট করা মাটি পানির কারণে নরম হয় এবং মাটি তার ভারবহনে ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এছাড়া ঢালু জায়গা হওয়ার কারণে নরম মাটি সরে যাওয়ার কারণে ভবনটি শূন্য হয়ে পড়ায় ভবনটি ধ্বসে পড়ে ও জলমহল পানিতে ডুবে যায়।
বুধবার বিকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয় কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনের মাধ্যমে তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশকালে জেলা প্রশাসক মোঃ মানজারুল মান্নান এসব কথা জানান।
কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশকালে এ সময় তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইন উপস্থিত ছিলেন। এসময় তিনি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের হাতে তুলে দেন।
ভবনের মালিক আবু তৈয়ব এবং কেয়ারটেকার নাঈম উদ্দীন টিটুকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা, ক্ষতিগ্রস্থ পরিজনকে ভবন মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা, অনুমোদনহীন অনেক ঘরবাড়ি রয়েছে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটে প্রাণহানীর সম্ভাবনা, ঝুঁকিপূর্ন ভবন চিহিৃত করে তালিকা প্রনয়ন করে অবৈধ ঘরবাড়ি উচ্ছেদ এবং ঝুঁকিপূর্ন ঘরবাড়ি নির্মাণ করে আর্থিক লাভবান হওয়া ভাড়া দেওয়া সিন্ডিকেট চিহিৃত করে আইনের আওতায় আনার জন্য তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ অক্টোবর রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারস্থ সরকারী মহিলা কলেজ এলাকায় দ্বিতল ভবন ধ্বসে গিয়ে তিন শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যূ ঘটে। এ ঘটনায় বাড়ীর মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তিনি পলাতক রয়েছেন। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। অপর দুই সদস্য হলেন গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও রাঙামাটি পৌর সভার নির্বাহী প্রকৌশলী।
তদন্ত প্রতিবেদনে যা আরো বলা হয়েছেঃ-
ঘটনাস্থল পরিদর্শনঃ গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যদের নিয়ে ধ্বসে পড়া এবং ডুবে যাওয়া ভবনের অবস্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকালে দেখা যায় ভবনটি রাঙামাটি সদর উপজেলাধীন রাঙামাটি স্টেশন ক্লাব সংলগ্ন জলমহলের পাড়ে। যা পৌর এলাকাধীন সরকারী মহিলা কলেজের যাতায়াতের দিক পার্শ্বে অবসস্থিত। ভবনটি বর্তমানে পানিতে অর্ধ নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে।
ভবন নির্মাণ ও অন্যান্যঃ যে স্থানে ধ্বসে পড়া ভবন নির্মাণ করা হয়েছে সে স্থানটি একেবারে ঢালু জায়গায় অবস্থিত। যা রাস্তার মাটি ভরাট করা স্থানে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মিত ভবনের জায়গার কোনো কাগজপত্রাদি নেই বা মালিক পক্ষ থেকে দেখাতে সমর্থ হননি। ভবন নির্মাণের কোনো ধরনের অনুমোদিত নকশা গ্রহন করেনি ভবনের মালিক। ভবনটি মালিক ইচ্ছে মাফিক তৈরী করেছেন বলে পরিলক্ষিত হয়েছে।
ভবনটি ধ্বসে পড়ার কারণে ক্ষয়ক্ষতিঃ ভবনটি গেল ৪ অক্টোবর বিকাল প্রায় ৫টা ৫০ মিনিটের সময় ধ্বসে পড়ে এবং খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে পানিতে ডুবে যায়। ভবনটি ধ্বসে পড়া এবং পানিতে ডুবে যাওয়ার সময় ভেতরে ৩ শিশুসহ ৫জন অবস্থান করছিলেন। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবনটি ধ্বসে পড়ে পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার কারণে ৫জনের কেউ প্রাণে বাচতে সক্ষম হয়নি। অর্থাৎ ঘটনাস্থলে পানিতে ডুবে ৫ জনের মৃত্যু হয়। মৃত ব্যক্তিরা হল জিসান আক্তার পিংকি(১১), মোঃ জাহিদ হোসেন(৩৫), মোঃ সাজিদ(৭), মোঃ সামাদুল(৪) এবং উম্মে হাবিবা(২২)।
ভবন ধ্বসের দায়-দায়িত্ব নিরুপণঃ ভবনের মালিক আবু তৈয়ব ভবনটি যে স্থানে নির্মাণ করেছেন তার কোনো প্রকার কাগজপত্রাদি অর্থাৎ রেকর্ডপত্র নেই মর্মে পরিলক্ষিত হয়। তিনি(আবু তৈয়ব) সরকারি খাস জায়গা এবং পুকুর পাড় দখল করে, রাস্তার মাটি কেটে উক্ত ভবন নির্মাণ করেছেন। একই সাথে উক্ত ভবন নির্মানের জন্য কোনো অনুমোদন প্রদানকারী সংস্থা থেকে কোন ধরনের নকশা অনুমোদন নেননি। অর্থাৎ কোনো ধরনের অনুমতি ও নকশা প্রণয়ন ব্যতীত মালিক নিজের ইচ্ছায় উক্ত ভবন নির্মাণ করে ভাড়া প্রদান করে আয় করেছিলেন। মাইন উদ্দীন টিটু(ভবন মালিকের শ্যালক) ভবন মালিকের পক্ষে উক্ত ভবনের যাবতীয় দেখাশুনারসহ ভাড়া প্রদানকৃত ঘরের মাসিক ভাড়া উত্তোলনসহ ভবনের যাবতীয় তত্ত্বাবধান করে আসছেন। যেহেতু ভবনের মালিক কোনো ধরনের রেকর্ডবিহীন জায়গায় কোনো ধরনের অনুমতি গ্রহন না করে উক্ত ভবন নির্মাণ করে ভাড়া প্রদান করে অপরাধ করেছেন।
অপরাধগুলো হল, ভবন নির্মানের জায়গায় কোন রেকর্ড গ্রহন না করা, মহিলা কলেজে যাতায়াতের রাস্তা মাটি কেটে ফেলা, ভবন নির্মাণ অনুমোদনকারী কোন সংস্থা থেকে নকশা প্রণয়ন বা অনুমোদন গ্রহন না করা, অবৈধভাবে ভরাট করা মাটিতে ঝুকিপূর্ন ভবন নির্মাণ করে ভাড়া প্রদান করা এবং জলমহলের জায়গা দখল করা।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.