বান্দরবানের লামা উপজেলায় এক স্কুল শিক্ষকের ১০ লক্ষ টাকার গাছ বিক্রি করে জায়গা দখল করে নিতে চেষ্টা করছে এলাকার কিছু প্রভাবশালীরা ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে স্কুল শিক্ষক অরুন কান্তি কর্মকার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ১৮ নভেম্বর লামা থানায় একটি সাধারন ডায়েরী(জিডি) করেছেন।
লোহাগাড়া উপজেলার উজিরভিটা হাই স্কুলের সহকারি শিক্ষক অরুন কান্তি কর্মকার তার জিডিতে উল্লেখ করেছেন, সাড়ে ৪ একর পাহাড়ী জমি রেজিষ্ট্রি নিয়ে ও আরো সাড়ে ৪ একর জমি উপর মোট ৯ একর পাহাড়ী জমিতে প্রায় ৯ হাজার আকাশমনি চারা লাগান। ২০০৬ সালে ওই জমির পাশে লোহাগাড়া মোহাম্মদ আলমগীর ও ফরিদুল আলম লোহাগাড়া থেকে ২ শতাধিক সন্ত্রাসী নিয়ে ১৫ দরিদ্র কৃষক পরিবারের বসতবাড়ীসহ দখল করে রাতারাতি প্রায় ৩৫ একর জমিতে আকাশমনি গাছ লাগায়। দরিদ্র কৃষকরা তাদের জমি ফেরত পেতে ২০০৮ সালে লামা সেনাবাহিনীর জোন কমান্ডার ও ২০০৯ সালে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কাছে বিচার চেয়েও না পেয়ে এলাকাছাড়া হন।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, ২০১২ সালে ফরিদুল আলম ও আলমগীর মিলে অর্ধশতাধিক সশস্ত্র লোক নিয়ে গিয়ে শিক্ষক অরুন কান্তি কর্মকারের বাগান তাদের দাবী করে জোর পুর্বক দিনে দুপুরে প্রায় ২ লাখ টাকার বড় বড় গাছ কেটে নেন। শিক্ষক অরুন কান্তি কর্মকার সে সময় থানা পুলিশ ইউনিয়ন পরিষদসহ সব জায়গায় দৌড়ঝাপ করলেও কোথাও ফরিদ ও আলমগীরের বিচার পাননি। পরে তিনি কোর্টে মামলা করেন। তবে তার গাছগুলো ঠিকই ফরিদ ও আলমগীর বিক্রি করে দেন।
অভিযোগে আরো জানা গেছে,আলমগীরের চাচাভাই লোহাগাড়া থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী এবং ফরিদুল আলমের সাথে কেন্দ্রীয় এক আওয়ামীলীগ নেতার সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে। যার কারনে তারা ওই নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে এসব অপকর্ম করলেও কেউ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজি হয় না। এছাড়াও বাগানের পাশ^বর্তী বসবাসকারী মোহাম্মদ রবিউল হচ্ছেন তাদের মুল সহযোগী। তাদের বিরুদ্ধে অরুন কান্তি কর্মকার গাছ কাটা মামলা করার পর থেকে তিনি রবিউলের ভয়ে সেখানে যেতে পারছেন না দুই বছর ধরে। আর এই সুযোগে গত দুই বছরে রবিউল সেখান থেকে প্রায় ২ লক্ষ টাকার গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন।
শিক্ষক অরুন কান্তি কর্মকার সাংবাদিকদের বলেন, ২০০১ সালে যখন তিনি বাগানটি করেন সেখানে তখন দিনদুপুরে বাঘ, ভাল্লুকের আনাগোনা ছিল। তবু অনেক কষ্ট করে তিনি জায়গাটি আবাদ করেন। তিলে তিলে কষ্ট করে তিনি গাছগুলো বড় করেছেন। আশা করেছিলেন গাছ বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি তার দুই মেয়ের বিয়ে দেবেন এবং তার ছেলের পড়ার খরচ চালাবেন। শিক্ষকতার জীবনে যা আয় হয়েছে সবই পরিবার ও বাগানের পিছনে ব্যয় করেনে ব্যাংকে কোন টাকা জমাতে পারেননি। বাগানের গাছ ও জমিগুলো জবরদখল হয়ে গেলে তার বেঁচে থাকার অবলম্বন বলতে আর কিছুই থাকবে না।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফরিদুল তার স্কুল ছাত্র ছিল। তাকে তিনি পড়িছেন। তার কাছে বাগানের গাছের বিষয় নিয়ে অনেকবার গিয়ে কান্নাকাটি করেছি। কিন্তু সে বারবারই তাকে অপমানিত করেছে। সারাজীবনের পরিশ্রমের অর্থে সৃজিত বাগান ও জমি হারানোর ভয়ে বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন শিক্ষক তিনি। যার কারণে বাধ্য হয়ে লামা থানার জিডি করতে হয়েছে।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম বলেন জবর দখলকারী আলমগীর, ফরিদ ও রবিউল এতই প্রভাবশালী যে উচ্ছেদকৃত ১৫ টি পরিবার লাগাতার দুই বছর সংগ্রাম করেও তাদের বসত বাড়ি রক্ষা করতে পারেননি। পরে ওই দরিদ্র কৃষকেরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.