প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির আলোকে গঠিত পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন গঠন করে দেওয়া হয়েছে। যাতে ভূমি সমস্যাগুলো তাড়াতাড়ি সমাধান হয়। এসব সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে সমতল এলাকার মতো পার্বত্য এলাকায় সরকারের অধিগ্রহণকৃত ভূমির ক্ষতিপুরণের পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়ে বিবেচনা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাঙামাটি জেলার তৃণমুল পর্যায়ের জনগনের সাথে জঙ্গিবাদ,সন্ত্রাস,মাদকদ্রব্য বিরোধী এবং সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড বিষয়ে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আগে মোবাইল টেলিফোনের নেটওয়ার্ক ছিল না। আমরা আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় গিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় এর নেটওয়ার্ক চালু করেছি। রাঙামাটি সরকারী মহিলা কলেজসহ সমগ্র বাংলাদেশের কোন কোন কলেজে শিক্ষকের স্বপ্লতা রয়েছে এবং শিক্ষকরা যাতে কলেজে উপস্থিত থাকেন তার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী রাঙামাটি সরকারী মহিলা কলেজকে একটি বাস প্রদানেরও প্রতিশ্রুতি দেন।
রাঙামাটির পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় প্রাঙ্গনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে রাঙামাটি জেলার তৃণমুল পর্যায়ের জনগনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান। এসময় অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন,রাঙামাটি আসনের সাংসদ ঊষাতন তালুকদার,সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ফিরোজা বেগম চিনু, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার,রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয় বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান তরুণ কান্তি ঘোষ, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা,রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ টিপু সুলতান,রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জেলার সরকারী উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক, সামাজিক নেতা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির মানুষ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এছাড়া রাঙামাটি শহরের জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণ, রাঙামাটি সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ, রাঙামাটি পাবলিক কলেজ প্রাঙ্গণ ও মোনঘর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এসব সমাবেশে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
অপরদিকে বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল, লংগদু, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর, কাপ্তাই, কাউখালী, রাজস্থলী উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সিং সম্প্রচার করা হয়। এতে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
ভিডিও কনফারেন্সে সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিতে উদ্বিগ্ন এ অঞ্চলের মানুষ। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি নির্মূল করা না গেলে এখানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে না। এজন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে দ্রুত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং অস্ত্রধারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
এছাড়া তিনি কাপ্তাই হ্রদের তিনটি নদী- কাচালং, কর্ণফুলি ও চেঙ্গির নাব্যতা আনতে এসব নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং কর্ণফুলি পেপার মিলের উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
হেডম্যানদের(মৌজা প্রধান) পক্ষে হেডম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা কেরোল চাকমা বলেন, বর্তমানে তিনটি পার্বত্য জেলায় সরকারের যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হলে তার ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় মাত্র শতকরা ১৫ ভাগ। অথচ দেশের অন্য স্থানে এক্ষেত্রে শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পার্বত্য তিন জেলাতেও ভূমি অধিগ্রহণের জন্য শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী কনফারেন্সে রাঙামাটি সরকারী মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী টিনুচিং মারমা কলেজের একটি বাস প্রদানের আবেদন জানালে প্রধানমন্ত্রী বাস প্রদানে প্রতিশ্রুতি দেন। কাঠমিস্ত্রী মোঃ আবুল হাশেম প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাঙামাটিতে কাঠ শিল্পকে শিল্প হিসেবে ঘোষণার দাবী জানান।
এদিকে কনফারেন্সে উন্নয়ন কর্মকান্ডের সংক্ষিপ্ত তথ্য দিয়ে জানানো হয়, রাঙামাটি জেলায় মোট ৬৫ উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এগুলোর মধ্যে ৩৮টি বাস্তবায়িত হয়েছে, ২৭টি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। আগে রাঙামাটির সবগুলো উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। ১০ উপজেলার সবকটিতেই বিদ্যুতায়নের কাজ চলছে। এছাড়া মৎস্যচাষ ও উৎপাদনে একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.