পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৯তম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে রাঙামাটিতে গণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গণ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাঙামাটি আসনের নির্বাচিত সাংসদ উষাতন তালুকদার পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষগুলোকে কার্যকর করে পার্বত্য চুক্তির মোতাবেক ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানান। তিনি বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার আন্তরিকতার অভাব নেই। কিন্তু সরকারের ও দলের শীর্ষ পদে থাকা চুক্তি বিরোধী একটি অংশের বিরোধিতার কারণে পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
তিনি পাহাড়ের জনগণের ধৈর্য্যচ্যূাতি না ঘটাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, চুক্তি পূর্নাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন না হলে ভবিষ্যতের পরিণতি ভয়াবহ আকার নেবে। তখন তার দায়ভার সরকারকে নিতে হবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জেলা শাখার উদ্যোগে রাঙামাটি জিমনেসিয়াম চত্বরে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি আসনের নির্বাচিত সাংসদ ও জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতিা উষাতন তালুকদার। জনসংহতি সমিতির জেলা শাখার সভাপতি সুবর্ণ চাকমারসভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ ফারুখ হোসেন, ঐক্য ন্যাপের কেন্দ্রীয় সদস্য পাহাড়ি ভট্টাচার্য্য, আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা। বক্তব্যে দেন জনসংহতি সমিতির নেতা উদয়ন ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির নেত্রী সুপ্রভা চাকমা, যুব সমিতির নেতা অরুন ত্রিপুরা ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের জেলা শাখার সভাপতি আন্তিক চাকমা। সমাবেশ শেষে একটি প্রতিবাদ র্যালী জিমনেসিয়াম চত্বর থেকে বনরুপা চত্বর পর্ষন্ত বের করা হয়।
পার্বত্য ভূমি কমিশন নিয়ে অনেক তালবাহান হচ্ছে উল্লেখ করে উষাতন তালুকদার এমপি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা ভূমি। এ সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক বছর পর পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন হয়েছে। এটা একটা মাইল ফলক। কিন্তু ভূমি কমিশন নিয়ে নানান অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আবার অপপ্রচার চালানো হচ্ছে ভূমি কমিশন কার্যকর হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালীদের চলে যেতে হবে। মানুষকে বিভ্রান্ত ও ভয় দেখানো হচ্ছে। ভূমি কমিশন বাতিলের দাবি জানানো হচ্ছে। তারা কি জানে কমিশনের কর্তব্য দায়িত্ব পরিধি। তিনি ভূমি কমিশন নিয়ে তালবাহান না করতে সবাইকে আহ্বান জানান।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মুরুং, খুমী,চাক ও মারমারা মিনায়নমারে ও ভারতে দিকে পাহাড়ী জমাচ্ছে। আর আদিবাসেিদর মধ্যে যারা শিক্ষিত তারা বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছে। আর যারা সাধারন মানুষ তারা একটা অনিশ্চিত অবস্থায় ও নিরাপত্তাহীনতা অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বলেন,পাহাড়ের মানুষ বাংলাদেশের নাগরিক। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাহাড়ের মানুষ এভাবে পরবাসী করে তাদেরকে বৈষম্যমূলক আচারণ, তাদের উপর নানান ধরনের হামলা মামলা, নির্যাতন অত্যাচার করা হলে এরা যাবে কোথায়?
তিনি পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুরকে সমালোচনা করে বলেন, বীর বাহাদুরের নামের পেছনে অনেক ভেল্কিবাজি করতে পারেন। কারণ তিনি মাঝে মধ্যে বাহাদুর, মাঝে মধ্যে বীর বাহাদুর উশৈশিং মারমা হয়ে যান। উনি তো নেপালী মানুষ। আবার তিনি মাঝে মধ্যে মারমাও হয়ে যান। আদতে তিনি নেপালী। তার আদি পুরুষ নেপালের।
তিনি অভিযোগ করে অরো বলেন, বীর বাহাদুর আজকে লক্ষী বাবু, জাহাঙ্গীর বাবুদের নিয়ে এমনভাবে বান্দরবানে রাজত্ব কায়েম করছেন সেখানে কেউই মাথা উচু করে দাড়িয়ে কথা বলার সাহস পান না। তিনি দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কিভাবে তিনি এত টাকার মালিক হলেন তার তদন্ত করা হচ্ছে। এখন তার ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
যদি জনসংহতি সমিতি বান্দরবান আসনের সিটটি কেড়ে নেড়ে নেয়। এজন্য বীর বাহাদুর জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, বান্দরবানে একজন আওয়ামীলীগ সদস্য অপহরণকে কেন্দ্র করে দুই শতাধিক যুবক ছাত্র ও দুজন আঞ্চলিক পরিষদ সদস্যর বিরুদ্ধে মামলার কারণে বর্তমানে তারা পলাতক রয়েছেন। তাদের পরিবার পরিজন, শিক্ষা, ব্যবসা-বানিজ্য রয়েছে। কিন্তু তারা ৬ মাস ধরে পলাতক রয়েছেন। তারা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন। এরপরও পুলিশ ও জেলা প্রশাসককে বাধ্য করে মামলা খারিজ করা যাবে না, জামিন দেয়া যাবে না চাপ প্রয়োগ করছে। এভাবে ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে মানুষের উপর জুলুম অত্যাচার চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আমরা শান্তি চাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, শান্তি চাই বলে আমরা অনেক সহ্য করে যাচ্ছি। নিরন্তর নির্যাযিত হচ্ছি, অন্যায় অবিচার করা হচ্ছে। সব কিছুই মূখ বুঝে সহ্য করে আমরা সেই দিনের অপেক্ষায় রয়েছি। যেদিন সত্যিকার অর্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.