১৭ ডিসেম্বর, রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় এই দিনে হানাদার মুক্ত হয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দিবসের একদিন পর এই দিনে পার্বত্য রাঙামাটিতে প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা লেঃকর্নেল(অবঃ) মনিষ দেওয়ান জানান, ১৭ ডিসেম্বর সকালে ভারতীয় মিত্র বাহিনীকে সাথে নিয়ে তিনি ও শামসুদ্দিনসহ মুক্তিযোদ্ধারা রাঙামাটি সদরে প্রবেশ করার পর তৎকালীন জেলা প্রশাসন কার্যালয় বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের সামনে হাজার হাজার জনতার সম্মুখে প্রথম স্বাধীন পতাকা উত্তোলন করেন।
পর দিন ১৮ ডিসেম্বর কোর্ট বিল্ডিং মাঠে বর্তমানে পুরাতন কোর্ট বিল্ডিং মাঠে প্রথম জনসভা করেন শেখ ফজলুর মনির, শেখ সেলিম ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর চট্টগ্রাম সেক্টরে দায়িত্বে থাকা মেজর জেনারেল সুজন সিং ওভান।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রাঙামাটি জেলা ইউনিট কমান্ডার রবার্ট রোনাল্ড পিন্টু জানান, ১৬ ডিসেম্বর সকালের দিকে শামসুদ্দিন ও মনিষ দেওয়ানের নেতৃত্বে মুক্তি বাহিনীরা মানিকছড়ি হয়ে রাঙামাটি সদরে প্রবেশ করেন এবং পুরাতন জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে স্বাধীন পতাকা উত্তোলন করেন।
জানা যায়,১৯৭১ সালের মার্চে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মে মাসে পাক বাহিনীর সৈন্যরা সে সময়ের অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, রামগড় ও বান্দরবান দখল করে নেয়। এরপর মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টরের আওতায় সর্বপ্রথম ৫ মে ২৫ জন সদস্যের পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করা হয়।
এ দলকে পরবর্তীতে কোম্পানী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরাকে কোম্পানী কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। শুরু হয় পাক বাহিনীর সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তি যুদ্ধের একেবারে শেষ সময়ে ১৪ ডিসেম্বর রাঙামাটির বরকলে বিমান বাহিনীর ২টি যুদ্ধ বিমানযোগে পাকবাহিনীর সামরিক অবস্থানের উপর আক্রমন চালায়।
১৫ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা বরকল উপজেলার পাক বাহিনীর উপর আক্রমন শুরু করে। যৌথ বাহিনীর রকেট লাঞ্চার ও এলএমজি থেকে অনবরত গুলি চালিয়ে যেতে থাকে। পাক সৈন্যরা যৌথ বাহিনীর উপর আক্রমণ করতে থাকে।
সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত উভয় পক্ষে তুমূল যুদ্ধ চলে। যৌথ বাহিনীর আক্রমনে ঠিকতে না পেরে পাক সৈন্যরা পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং মিত্র বাহিনী ও মুক্তি বাহিনীরা অগ্রসর হয়ে রাঙামাটি দখল করে নেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.