রাঙামাটিতে জায়গা নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হামলা ও হুমকির মুখে নিরাপত্তাহীনতায় পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে একটি পরিবার। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করতে গেলেও থানায় মামলা নেওয়া হয়নি। ফলে এই অসহায় পরিবারটি বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
মঙ্গলবার সকালে রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন শহরের ভেদভেদী পুলিশ ফাঁড়ি চেকপোস্ট সংলগ্ন এলাকায় বসাবাসকারী ওই পরিবারটির লোকজন ওই পরিবারটির লোকজন বাবু সেন, তার স্ত্রী শিফরা সেন, ছোট বোন অন্তরা ও তার স্বামী টিটু সেন।
নিজেরা অত্যন্ত অসহায় উল্লেখ করে এ পক্ষের পরিবারের লোকজন বলে দাবি করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একই এলাকার প্রভাবশালী বিটু কান্তি দে, তার পরিবার ও দলবল নিয়ে ভিটেমাটি দখল করে আমাদেরকে উচ্ছেদ করার পায়তারা চালাচ্ছে। কয়েক দিন আগে দলবল নিয়ে আমাদের নতুন একটি বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বিটু কান্তি দে পেশায় একজন অটোরিকশা চালক বলে জানান অভিযোগকারীরা।
এ সময় লিখিত বক্তব্যে অন্তরা সেন বলেন, তারা পিতৃসম্পত্তি জায়গায় দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। ২০০৪ সালে ৮ শতকের ভিটেমাটির জায়গা বন্দোবস্তুর জন্য জেলা প্রশাসকের বরাবরে আবেদন করেছিলেন তাদের পিতা বিমল সেন। মৌজা হেডম্যানের সুপারিশ ছিল আবেদনে। গত বছরের দিকে বাবা বিমল সেন মৃত্যুবরণ করেন।
আমাদের জায়গাটি দখলে নিতে মরিয়া একই এলাকার বিটু কান্তি দে ও তার পরিবার। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে টাকার জোরে নানা পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। কিন্তু আমরা অসহায় ও গরিব হওয়ায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। তারা দলবল নিয়ে আমাদেরকে নিজেদের ভিটেমাটি হতে উচ্ছেদ করতে সার্বক্ষণিক মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। এজন্য প্রায় সময় আমাদের ওপর হামলা করছে। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দিচ্ছে। সর্বশেষ ৩-৪ দিন আগে সদলবলে গিয়ে আমাদের নতুন করে বাঁধা বাড়িটি ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদেরকে এখন তাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। বসতবাড়ি ভেঙে দেয়ায় বাড়িঘর হারা হয়েছি।
অভিযোগকাররীরা আরও বলেন, ভিটেমাটি রক্ষার জন্য আমরা রাঙামাটি জজকোর্টে মামলা করি। আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন আদালত। কিন্তু বিটু কান্তি দে রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। আপিলটি বিচারাধীন রয়েছে।
পাশাপাশি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আমাদের জায়গাটি দখল, হামলা ও হুমকির অভিযোগ নিয়ে আমরা রাঙ্গামাটি কোতোয়ালি থানায় মামলা দিতে যাই। কিন্তু থানার ওসি মামলা নেননি। আপোসের নামে দফায় দফায় উভয়কে নিয়ে নামে সাজানো বৈঠক বসানো হয়েছে থানায়। কিন্তু আমাদের পক্ষে কোনো সমাধান দেয়া হয় না।
সর্বশেষ ৪ ডিসেম্বর রাঙামাটি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর উভয়কে নিয়ে একটি আপোসনামা করে দেন। আপোসে যার যার জায়গায় বসতঘর বা দোকান স্থাপনা নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর প্রায় লাখের অধিক টাকা ব্যয় করে আমরা নতুন একটি ঘর তৈরি করি। সেটি ৩-৪ দিন আগে সদলবলে গিয়ে ভেঙে দিয়েছেন বিটু কান্তি দে। এ অবস্থায় নিজেদের ভিটেমাটি রক্ষায় এবং নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের সহায়তার দাবি করেছেন বিশ্বজিত সেন, শিপ্রা সেন, অন্তরা সেন ও বাবু সেন।
এ ব্যাপারে মূঠোফোনে বিটু কান্তি দে-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অসৌজন্যমূলক আচরণ করে আসল প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
রাঙামাটি কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রশীদ জানান, জায়গাটি নিয়ে ওই দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। বর্তমানে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তর্কিত জায়গায় স্থাপনা নির্মাণের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ আছে। এজন্য ১৪৪ ধারাও জারি রয়েছে।
এ অবস্থায় আদালতের বাইরে আমার কিছুই করার ক্ষমতা নেই। তারপরও উভয়ের মধ্যে বিবাদ নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য দুই পক্ষকে নিয়ে কয়েকবার বসার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা সমাধানে যেতে পারেন না।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.