পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট —জ্ঞান মিত্র চাকমা

Published: 11 Nov 2013   Monday   

 

 

 

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় অঞ্চল হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের নাম খুবই উল্লেখযোগ্য একটি অঞ্চলের নাম। এছাড়াও এ অঞ্চল একটি অশান্ত অঞ্চল হিসেবেও পরিচিত। তাই এখানকার সমস্যা নিঃসন্দেহে ব্যাপক। এখানে সমস্যার শেষ নেই, ভুমি সমস্যা, কৃষি সমস্যা, জীবন জীবিকার সমস্যা, শিক্ষার সমস্যা, সামাজিক সমস্যা ইত্যাদি আরো কতই না সমস্যা এ অঞ্চলে বিদ্যমান তা দু- চার কথায় বর্ণনা করা দুস্কর। পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক প্রোপত একটি জটিল বিষয় কারণ এর সমস্যা ও সমাধান খুবই কঠিন বাস্তবতার মধ্যে অবস্থান করছে। অর্থনীতির সঙ্গে মাটি ও মানুষের অবিচ্ছেদ্য সর্ম্পক। তাই এ ব্যপারে কোন আলোচনা করতে গেলেই প্রথমে দরকার এখানকার মাটি ও মানুষের সঙ্গে। অপরদিকে অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো- শ্রম ও উৎপাদন। এই উভয় ব্যাপারই এখানে মূলত মাটি কেন্দ্রীক। এই জন্য এখানকার জনগন কৃষিজীবি। তাই ভুমি প্রকৃতি বা মাটি নিয়ে আলোচনা করা যাক। পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট আয়তন ৫,০৯৩ বর্গমাইল বা ৩২,৫৯,৫২০ একর। অর্থাৎ আয়তনে বাংলাদেশের বৃহৎ একটি অঞ্চল। এই বির্স্তীন এলাকার স্থানই পাহাড় ও অরণ্য সংকুল। এখানে উল্লেখ্য যে পার্বত্য চট্টগ্রাম ১৯০০ শাসন বিধি বিলুপ্ত হওয়ার পর এ অঞ্চলে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ফলে ভূমি ব্যাবস্থাপনা খুবই জটিল আকারে ধারন করেছে। তাই আমি পাকিস্তান আমলে ১৯৬৫-৬৬ ইং সনে ভুমি রাজস্ব প্রশাসন রিপোর্ট মুলে কিছু আলোচনা করব। তখনকার রেকর্ড অনুসারে অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার অরণ্য ভুমির পরিমাণ ২৯,০২,৭৩৯ একর এবং সর্বমোট চাষযোগ্য জমির পরিমান ২,২৩,০০২ একর। এর মধ্যে ফসলকৃত জমি হলো ৯৩,০০২ একর ও নীট ফসলকৃতদ জমির পরিমান ১,৩০,০০০ একর। সংশ্লিষ্ট বছরে পতিত জমির পরিমাণ ১,০৮,০০০ একর। অন্যদিকে সমগ্র এলাকার ৪৫,০০০ একর জমি চাষাবাদের অযোগ্য এবং ১,৭০,৮৯১ একর চাষাবাদেও জন্য একেবারেই অনুপোযোগী অর্থাৎ এ স্থানে নদী নালা খাল বিল ইত্যাদি। আরও উল্লেখ্য যে ১৯৬৪-৬৬ সালে কানাডার ফরেষ্টাল ইন্টরন্যাশনাল কোম্পানি তৎকালিন কৃষি সংস্থার পে এ অঞ্চলের মাটি ও ভুমি ব্যাবহার জরিপ সম্পাদন করেন। এই জরিপের রির্পোটে এ অঞ্চলে সমগ্র ভুমিকে প্রধান ৫টি ভাগে ভাগ করাা হয় এবং কোন জমিতে কি ধরনের ফসল হবে তার সুপারিশও করা হয়। ক্রমিক নং জমির শ্রেনী জমির প্রকৃতি শতকরা হার একর কী ধরনের চাষকরা চলে।

 ১. এ- ৫% ঢালু ৩.২% ১,০৪,৩০৪.৬৪ কৃষি/ সব কাজে উপযোগী
২. বি- ২০% ঢালু ২.৯% ৯৪,৫২৬.০৮ টেরেস/ থাক কাতার পর কৃষি ও উদ্যান কাজে উপযোগী
৩.সি- ৪০% ঢালু ১৫.৫% ৫.০৫,২২৫.৬০ উদ্যান ও বন উন্নয়নে উপযোগী
৪. সি -ডি ৪০% উর্ধে ঢালু ১.৪% ৪৫,৬৩৩.২৮ বন উন্নয়ন
৫. ডি-৭৭% ২৫,০৯,৮৩০.৪০ কেবল বন উন্নয়ন
১০০% ৩২.৫৯,৫২০.০০

এই সূত্র ধরে বলে রাখা দরকার ফরস্টেরাল জরিপের ভিওি ছিল ১৯৫৮-১৯৫৯ইং সালের আকাশ জরিপের মানচিত্র। এ কারণে উপরোক্ত পরিসংখ্যানে এ অঞ্চলের ভূমি প্রকৃতির ব্যাপারে একটি প্রধান তথ্যের ফাক রয়েছে। ১৯৬০-৬১ সালে এ অঞ্চলের ভূমি প্রকৃতিতে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে এবং কর্ণফুলীর বিদ্যুৎ বাধের ফলে এ অঞ্চলে পৃথিবীর বৃহত্তম মনুষ্য সৃষ্টি জলাশয় কাপ্তাই হ্রদেও জন্ম হয়। এ হ্রদের জলাঞ্চলের ২৫৬ বর্গমাইল এলাকা বা ১,৬৪,৮৪০ একর জমি জলমগ্ন হয়ে যায়। উক্ত জমির অধিকাংশ ছিল এ বি ও সি শ্রেনীভূক্ত এবং তার মধ্যে ৫৪,০০০ একর জমি ছিল উৎকৃষ্ট ধান জমি। অর্থাৎ সমগ্র অঞ্চলের ’এ’ শ্রেনীর মোট ১,০৪,৩০৪.৬৪ একর জমির প্রায় ৫২% জমি এই হ্রদের জলে ডুবে যায়। সরকারী ভাবেও তৎকালীন সরকার স্বীকার করে আবাদকৃত জমির ৪০% জলে নিমগ্ন হল। মাটির কথা রেখে এখন আসা যাক এখনকার মানুষের। এই অঞ্চলের বিশেষত্ব হলো এর আদি ও প্রধান জনসংখ্যা আদিবাসী। সুতরাং এখানে আদিবাসী জনসংখ্যার প্রাধান্য সেহেতু এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমস্যা মূলত এখনকার আদিবাসীদের সমস্যাকেই বুঝতে হবে। এই সূত্র ধরে এখান বলে রাখা প্রয়োজন এই আদিবাসী জনগণ মূলত মঙ্গোলীয় নরবংশ হলওে তারা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীতে বিভক্ত। এদের মধ্যে চাকমা, মারমা এবং  ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীই প্রধান। কিন্তু অপরাপর ক্ষুদ্র আদিবাসর জনগোষ্ঠীগুলরি অনেকেই এখনো অন্ধকারে নিমজ্জিত এবং অরণ্য চাষী। তাদের প্রত্যেকের রয়েছে নিজস্ব ভাষা এবং সামাজিক রীতিনীতি আলাদা। তাই এখনকার কোন সমস্যার সমাধানে এই কথা মনে রাখতে হবে যে এখানকার আদবিাসীদরে জীবনযাত্রা, সমাজ-ব্যবস্থা ইত্যাদি বাংলাদশেরে অপরাপর এলাকার জনসংখ্যা  থাকে যেমন সর্ম্পূণ বিভিন্নতর তেমনি তাদরে মানসকিতাতওে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। র্পূবইে বলেছি এ  অঞ্চলের অধিবাসীরা মূলত কৃষিজীবি। কিন্তু এখানে তিন ধরনের কৃষি ব্যবস্থা প্রচলিত জুম কৃষি, হাল কৃষি এবং উদ্যান কৃষি। জুম  কৃষি পৃথিবীর একটি আদমি কৃষি পদ্ধতি। এই কৃষি চাষ পাহাড় অঞ্চলে করা হয়।  যেখানে একবার চাষ হলে ৫ থেকে ৬ বছর পর আবার করা যায়। এ কারনে জুম চাষরে বিস্তীর্ন বনভূমির প্রয়োজন। জুম চাষে আগরে মতন লাভজনক নয়। তাছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জুম চাষরে জায়গা লোপ পাচ্ছ। প্রাচীনকালে এ অঞ্চলে হাল কৃষি ব্যবস্থা ছিল না। এ পদ্বতি এখানে প্রবর্তন করা হয় উনবিংশ শতকরে প্রথম ভাগে। উদ্যান কৃষিকে প্রধানত কাপ্তাই বাধের ফলশ্রুতি বলা চলে কারন এখানে র্পূবে উদ্যান কৃষি ছিল বটে। কিন্তু তার পরিমাণ ছিল অতি নগন্য।কর্ণফুলী বাধের ফলে এখানকার  এক লাখের অধিক আদিবাসী লোকজন উদ্বাস্তু হয়। ফলে চাষ যোগ্য জমির অভাব,জুমরে অর্পযাপ্ত ফলন ইত্যাদির কারনে উদ্বাস্তু জনগনরে নতুন জীবিকার সন্ধান করতে হয়। ফলে  অনেকে উদ্যান কৃষিতে ঝুকে পড়। পরবর্তিতে বাংলাদশে স্বাধীন হওয়ার পর রাজনতৈকি পটভূমি পরিবর্তন হওয়ার ফলে এখানকার র্অথনতৈকি স্থবিরতা দেখা দেয়।  তবে আগের তুলনায় শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং সরকারী চাকরিতে অনেকর প্রবেশ ঘটে। এবার এখানকার অন্যান্য জীবকিাগুলরি দিকে তাকানো যাক। সময় যত গড়য়িছে এখানকার লোকজন শিক্ষার দিকে ঝুকে পড়।ফলে শিক্ষিতের সংখ্যা বেড়ে চাকরি করা লোকজনরে সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং অবধি বেড়েই চলেছে। কিন্তু এখানকার যাবতীয় ব্যবসা প্রায়ই র্বহি জেলার লোকদের হাত। কাপ্তাই বাধরে ফলে এখানে মৎস্য জীবকিা নি:সন্দেহে উল্লখেযোগ্য।এখানকার আদবিাসীদরে মধ্য মৎস্য জীবকিায় নিযুক্ত ব্যক্তদিরে তেমন পাওয়া যায় না।র্বতমানে আদবিাসীদরে বহু ব্যক্তি মাছ ধরতে দখো যায় বট। কিন্তু অন্য বাইররে জলো থেকে আগত মৎস্য জীবকিাদের  হাতে এখনো এই ব্যবসার মূল চাবিকাঠি। অন্য জেলাবাসী অস্থায়ী মৎস্য জীবকিাদরে সংখ্যায় এবং র্আথকি সংগতিতেও এখানকার আদবিাসীদরে চেএয় বহুগুনে সচ্ছল।ফলে এ ক্ষেত্রে এখানকার জনগন মধ্যসত্বভোগী ফড়িয়াদের অনিবার্য শিকার হয়ে  জীবন ধারন করছে। ১৯৯৭ সালরে এখানে র্পাবত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ফলে এ অঞ্চলের লোকদের  রাজনতৈকি ক্ষমতা কিছুটা অনুকূলে আসায় এখানকার র্অথনীতির সামান্য প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। অনেক দেশী-বিদেশী এনজওি এবং সরকারী প্রতষ্ঠিানে আদবিাসীদরে নিয়োগ  বৃদ্ধি পাওয়ায় এখানে কিছু মধ্যবত্তি শ্রেনীর উত্তান ঘটে এবং উদ্যান কৃষির ফলাফল হিসেবে এখানে জোট পারমিট গাছ ব্যবসার ফলে আদবিাসীরা কিছু মূলধনরে যোগান পায়।এর ফলে অনেকে নানা ব্যবসায় ঝুকে পড়ে এবং একশ্রনেীর ব্যবসায়ী সমাজ সৃষ্টি হয়। এখানকার আদবিাসীদরে দারদ্র্যি বা র্অথনতৈকি সমস্যা শুধু সাম্প্রতিককালের ব্যাপার নয়। এই সমস্যা একশত বছর র্পৃবেও ছিল। বৃটিশ, পাকস্তিান এবং শুরুর বাংলাদেশের আমলে বাঙালী ব্যবসায়ী ও মহাজনদের দ্বারা অতিরিক্ত হারে সুদ আদায়ের ফলে বহু আদবাসী পরিবার  যে র্সবশান্ত  হয়েছে তা নিশ্চিত। তেমনি মদ্যপানের ব্যাপারেও এখানকার জনগন যে শিথিল মনোভাব সর্ম্পূন এই কথাও অনস্বীর্কায কিন্তু এই কারনগুলো তাদরে সমষ্টিগত দারদ্র্যির মুখ্য্ কারন নয়। তবে এখানকার  অর্র্থনৈতিক উন্নতির জন্য বিভিন্ন সময় সরকাররে কিছু পদক্ষপে গ্রহন কর। বৃটিশ শাসনের প্রবর্তনের প্রারম্ভকি কাল থেকে অতিরিক্ত হারে সুদ আদায় নিয়ন্ত্রন ও কাবুলীওয়ালাদের প্রবেশের এ অঞ্চলে নিষিদ্ধ করা হয়। ঠিক তেমনি পাকিস্তান ও বাংলাদশে আমলে নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুবধিা থাকলওে বিভিন্ন কারনে গ্রহন না করার প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া বেশিরভাগ শিক্ষিত তরুনরা চাকরির দিকে প্রবনতা থাকার কারনে আদবিাসীদের থেকে উদোগ সৃষ্টি  হচ্ছে না।  ফলে এখাকার আর্র্থিক প্রতিষ্ঠানের  সুবধিা সমূহ বহিরাগত  জেলার ব্যবসায়ীদের হাতে থেকেই যাচ্ছে। কথায় কথায় বলা হয় আদবিাসীদর অর্ধেকের আয় মদ্যপানে ব্যয়িত হয়। আমি মনে করি এ কথা ডাহা ভূল। তবে আদবিাসী সমাজের পুরুষদের কেউ কেউ মদ্যপানে অভ্যস্ত  হলেও এর সংখ্যা নিতান্তই নগন্য বলা চল। এখনকার সমাজ ব্যবস্থার বিবাহ মৃত্য ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রায়ই প্রত্যকেই  মদ ব্যবহার করে থাকে।সুতরাং মদ্যপানকে তারা শিথিলিভাবেই  গ্রহন করে থাক। কিন্তু মদ নিজেদের ঘরে তৈরী করা হয় বলে এখানে ব্যয় সীমিত। তাই এই কারনটা এখানকার দারদ্র্যি বা অর্থনৈতিক সমস্যার কারন হতে পারে না।তাহলে কারন কি হতে পারে ? লোকমূখে শোনা যায় এ অঞ্চলের তৎকালিন বৃটিশ জেলা প্রসাশক ক্যাপ্টিন লুইন ওসঢ়ৎড়ারফবহপব অর্থাৎ ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদাসীনতা এ সমস্যার মুল কারন চিহ্নিত করে গেছেন । আসলে কি তাই? এই সমস্যাটি বাহ্যিকভাবে অনেকটা তাই বলে মনে হয়, কিন্তু আসলে সমস্যাটি আরো গভীরে রযেছে। যাই হোক বাহ্যিক দৃষ্টি থেকে ওসঢ়ৎড়ারফবহপব অর্থাৎ ভবিষ্যৎ সমপর্কে উদাসীনতা ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত আসার কারন কি? অনেকে বলে শিক্ষার অনগ্রসতা কিন্তু এটা হতে পারে না। কারণ বাংলাদেশ তথা সারা উপমহাদেশে শিক্ষার হার বেশি উন্নত বলা চলে না। অথচ এই সমস্যা সেখানে মোটেও জাতি বা সমষ্টিগত নয়, অপরপক্ষে এখানকার আদিবাসী শিক্ষিত ব্যক্তিরাই অধিকাংসই ভবিষ্যৎ  সম্পর্কে উদাসীনতা থেকে সমর্পুন মুক্ত বলা যায় না। সুতরাং এ সমস্যার প্রকৃত কারন এখানকার আদিবাসী সমাজ ব্যবস্থার মুলে রয়েছে বলে ধরে নিতে হবে ।আদিবাসী সমাজ ব্যবস্থার মুলত আদিম সাম্যবাদ ভিত্তিক । আদিম সাম্যবাদে পুজিতন্ত্রের কোন স্থান নেই কারন তার ফলাফল ব্যক্তি মুখী নয় বরং সমাজ মুখী । তবে বর্তমানে এখানকার আদিবাসীদের আদিম সাম্যবাদ বহুলাংছে লোপ পাচ্ছে, তবে সর্ম্পুন বিলুপ্ত ঘটেনি । তার দুএকটা উদাহরন উল্লেখ করছি। আদিবাসীরা এখনো শিকার লব্ধ জন্তু ও মাংস পাড়া ভিত্তিক প্রতি ঘরে ঘরে ভাগ করে খায় । এই রিতি বহু প্রাচীন হলেও এখনো দেখা যায় ।এই ব্যবস্থা নি:সন্দেহে আদিম সাম্যবাদ ভিত্তিক । এই সব সামাজিক রীতির ভিত্তি হলো এই মাটি ও তার বন এলাকার সম্পত্তি । এ কারনে তার সব কিছুতে জনগনের সমান অধিকার। আরো দখো যায় আদিবাসীদরে জুম চাষরে ভূমি নির্নয় পদ্ধতি ও ঘর নির্মাণের ব্যাপারে এখানকার লোকেরা যে কোন স্থানইে জুম চাষ ও ঘর করতে পার(অপরের বন্দোবস্তীকৃত এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চল ব্যাতীত)। রাজন্যর্বগরে এখানে হস্তক্ষেপ করত না। শুধুমাএ এক বা একাধিক দাবী উঠলে তারা নিষ্পতি করে দিত। ।এ কারনেই  বলা যায় এখানকার রাজারা ভূ-পতি নন তারা নরপতি মাত্র। আবার যদি লক্ষ্য করি আগের তুলনায় এখানকার আদিম পাড়ায় জুমরে শষ্য আহরনরে পর একজন পাড়ার মুরুব্বী র্কতৃক কে কত ফলন পেল এবং উৎপাদনকৃত ফসল দিয়ে  সারাবছর পারবে আর কে পারবে না। যে পারবে না তাদের যারা বেশি পেয়েছে তাদরে উদ্বৃত্ত  থেকে ঘাটতি পূরন করে দেয়া হত। সুতরাং এ রকম সমাজব্যাবস্থায় পূজিতান্ত্রিক র্অথনীতি গড়ে ওঠা যেমন  সম্ভব ছিল না  তেমনি পুজি গঠনরে মানসিকতাও এখানকার লোকদের  গড়ে ওঠেনি। তবে সেই সমাজ ব্যবস্থার আয়ু এখন শেষের পথে  হলেও মানসিকতা সর্ম্পূন বিলুপ্তি হয়নি। ফলে এখানকার লোকজন এখনও উদ্বৃত্ত মূল্যকে কদর করতে শিখেনি এবং সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে উঠে পারেনি। এখনেআ দেখা যায় বিবাহ,র্ধমীয় ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত ব্যয় বহুল অনুষ্ঠানের অভাবকে রোধ করতে  গিয়ে অল্প সময়েই জমা র্অথ ব্যায় করা হয়। আদিম সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা জীবন ধারনাপোযোগী র্অথনীতি ভিত্তিক।এই সমাজ ব্যাবস্থা জীবন ধারনের  জন্য বৈষয়িক প্রয়োজন অতি সীমিত।কোন ক্ষেত্রে শষ্যর ঘাটতি সম্মুখীন হলেও তা যে কোন উদ্বৃত্ত উৎপাদক  থেকে পূরনের সম্ভাবনা থাকায় সেখানে পরোক্ষভাবে র্কম বিমূখ ঘটা স্বাভাবকি, র্অথনীতি ভাষায় বললে -উদ্বৃত্ত উৎপন্ন এর ব্যক্তিগত কোন মূল্যই না থাকায় এই ব্যাপারে উৎপাদকরে আগ্রহ ক্রমেই সীমিত আকার ধারন করতে থাক। ফলে এখানে ব্যবসা মূল র্অথনীতি গড়ে উঠেনি। এই পরিস্থিতি ভূমিজ ও শল্পি উৎপাদন উভয়  ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। প্রাচীনকালে যে সমস্ত দ্রব্য পাওয়া যতো না তার আমদানী করা হতো বিনিময় নীতির মাধ্যমে।র্পাশ্বর্বতী এলাকার বাঙালী ব্যবসায়ীরা সেই সময়ের জন্য উন্মুখ হয়ে বসে থাকতো। কারন এতে তাদরে মুনাফা হতো প্রচুর। প্রধানত লোহা নির্মিত দ্রব্য ,মৃৎশল্পিরে দ্রব্য,লবন এবং কেরোসিনের  অভাব এখানে ছিল। শোনা যায় প্রাচীন কালে নাকি এখানে একমন লৌহা দ্রব্যর বিনিময়ে দুই মন তুলা  বিনিময় করা হত। উক্ত প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বাঙালী ব্যবসায়ীদরে নিকট থেকে বিনিময়ের ভিত্তিতে সহজ প্রাপ্য ছিল  বিধায়  এ সমস্ত শিল্প বিদ্যায় আয়ত্ব করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব কারণে। তাছাড়া লোহা আর লবন এবং কেরোসিন  দুষ্প্রাপ্য ছিল। তা ছাড়া এখানকার  শিল্শপ দ্রব্য অনুৎর্কষতার প্রধান কারন এখানে শুধু পুরুষ ও নারী ভিত্তিক ডিভিশিন অব লেভার ছাড়া অন্য কোন ধরনের শে্রনী ভিত্তিক শ্রেনী গড়ে উঠেনি। শ্রেনী ভিক্তিক শ্রম  বিভাগের কোন শ্রেনী বা গোষ্ঠী একই শিল্পের বংশ পরস্পরা নিয়োজিত থাকার ফলে তাদরে শিল্প দ্রব্য উৎপাদনে উৎর্কষতা স্বাভাবিকভাবইে আসে এবং উক্ত কাজে পেশাধারী বুৎপত্তি লাভ কর। তাই বলা যায় এখাকার আদবিাসীদের মধ্য কেবল পুরুষ ও স্ত্রী ভেদাভেদ সাধারন শ্রেনী ভিত্তিক শ্রম সৃষ্টি হওয়ায় এখানকার নারীরা বয়ন শিল্পে ও পুরুষরা জুমের কাজে বিশেষ পারদর্শিতা র্অজন করছে।তবে এখানকার আদবিাসীদের শিল্প উৎপাদন এবং কারগরি বিদ্যায় র্বতমান অগ্রসরতা তাদের অক্ষমতা বা গ্রহন করার অভাব মনে করলে ভূল হবে। তাদের রয়েছে গ্রহন করার প্রচুর বিচক্ষনতা এবং প্রশিক্ষণ সাপেক্ষে তারা যে কোন কারগরি বিদ্যাই  তারা করতে পারে । যেমন র্বতমান এখানকার আদবিাসী ডাক্তার ও  ইঞ্জিনিয়ারদের কথা বলা যেতে পারে।  অপরাপর অন্যান্য সম্প্রদায়রে ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ারদের থেকে তারাও পিছিয়ে নয়। তাছাড়া অনেকে বেকারী, ফার্নিচার ও অন্যান্য উৎপাদন  শিল্পের প্রসার ঘটানোরও  চেষ্টারত রয়েছেন। সুতরাং বলা যেতে পারে কেবল অতীতের আদিম সাম্যবাদ সমাজব্যবস্থা ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার শিকার হয়ে এখানকার আদবিাসীরা র্বতমান পুজিতান্ত্রিক র্অথনীতির সংগে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছে না। ফলে তারা অর্থণৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছ। অন্যদিকে দেখা যায় কোন বাঙালী ব্যবসায়ী এখানে কিছুদিন ব্যবসা করার পর আর্থিক  সফলতা পায়। কারন তারা পুজিতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় গড়ে উঠেছেন।  ফলে অর্থনীতিতে আদবিাসীদের মানিসক অ-প্রস্তুতি বা এক কথায় র্দুবলতার সুযোগে অনায়াসেই তারা নজি র্স্বাথ হাসিল করা। এর ফলে এখানকার আদিবাসীরা নিজ এলাকায় আভ্যন্তরীন অর্থনীতির উপর ক্রমেই র্কতৃত্ব হারাচ্ছে এবং র্বহি জেলার  আগত ব্যক্তিরা সর্ম্পূন দখল করে নিয়েছে। কেবলমাত্র  কৃষি ক্ষেত্রে তাদরে  কিছু ভূমিকা রয়েছে। তবে তা এখন হুমকির মূখে কারন বৃটশি ও পাকিস্তান সরকার আদবিাসীদের ভূমি কিছুটা  রক্ষা করে দিলেও  র্বতমান সরকার এ ব্যাপারে উদাসীন ।আভ্যন্তরীন অর্থনীতেত র্কতৃত্ব বিলোপ শিল্প ক্ষেত্রে অনুৎর্কষতা,কারিগরী বিদ্যায় ও অন্যান্য জীবিকায় অনগ্রসরতা এবং স্থানীয় ভূ-প্রকৃতি অনুসারে অনুন্নত কৃষি ব্যাবস্থা প্রভৃতি সামগ্রকি পরিস্থিতি শেষ পরিণতি যা হওয়া স্বাভাববকি র্অথাৎ জনশক্তির বেকারত্ব এ অঞ্চলরে ঘরে ঘরে। তাহলে প্রশ্ন জাগে এখানকার আদবিাসীদের র্অথনতৈকি সমস্যার সমাধান কি? র্বতমান সরকার সারাদেশের তথা এ অঞ্চলের ব্যবসা বান্ধব প্রক্রিয়া শুরু করছে।দ্রারদ্র্যি বিমোচনের  অনেক প্রকল্প চলছ। তাছাড়া এখানে দেশী-বিদেশী অনেক এনজওি এখানকার আদবিাসীদরে র্আথসামাজি ও  অর্থণৈতিক উন্নতির জন্য কাজ করছে। কিন্তু বৃহৎ এই সমস্যার তাৎক্ষনকি সমাধান কেউ দিতে পারবে না এবং একা সরকারের পক্ষেও সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সরকার ও এখাকার জনগনের যৌথ উদোগ। তা ছাড়া এই সমস্যা সমাধান করতে র্দীঘ সময় লাগব।

 এই সমস্যা সমাধান করতে আমার ব্যক্তিগত পরিকল্পনা হচ্ছে:-
১.এখানকার আদবিাসীদরে মানসকিতার পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদরে দ্বারা বিভিন্ন জীবিকার ক্ষেত্রে তৈরী করা।
২.সাধারন শিক্ষার সাথে কারিগরি শিক্ষায় জোর দেয়া।
৩.আভ্যন্তরীণ র্অথনীতিতে আদিবাসীদরে পুন প্রতিষ্ঠা ঘটানোর জন্য এ অঞ্চলের জন্য নিজস্ব ব্যাংক ও সহজ ঋণ ব্যবস্থা করা।
৪. এখানকার  অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষি। তাই কৃষি শিল্প গড়ে উঠার জন্য কালেস্টল স্থাপন করা।
৫. র্অথকরী ফসলের সঙ্গে মুল্যবান বৃক্ষ রোপন  প্রকল্প হাতে নেয়া, যেমন- চা, কফি, রাবার, আগর, কাজুবাদাম, সুপারী, নারকেল ও বিভিন্ন ফলের বাগান।
৬. মৎস্য ধরার কাজে এ অঞ্চলে কাপ্তাই হ্রদরে তীরবর্তী এলাকার মানুদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন দিয়ে মৎস্য ধরার সামগ্রী অনুদান ও ঋণ প্রদান করা। স্থানীয় মৎসজীবিদের  প্রধান্য দিয়ে  বাইরে মৎস্যজীবদিরে হ্রাস করা। বিভিন্ন পশু-পাখীর খামার গড়ে তোলা।
৭. দোকানপাত স্থাপনে ব্যবসায় সহজ র্শতে ঋণ প্রদানে সরকারী নির্দেশনামা এখানকার ব্যাংকগুলাতে চালু করা যেতে পারে।

৮. আদবিাসীদের জীবিকা  অর্জনের বিভিন্ন দিক উন্মুক্ত করে বেকারত্ব কমিয়ে আনার জন্য সরকারী বা বিভিন্ন এনজিওর উদোগে বহুমুখী প্রশিক্ষন কেন্দ্র স্থাপন করা। যেমন- চুল কাটার কাজ, র্কমকারের কাজ, রাজ মিস্ত্রীর কাজ।

৯. এ অঞ্চল র্পযটন  শিল্পের জন্য খুবই সম্ভবনাময় অঞ্চল। এ অঞ্চলে আদবিাসীদের র্স্বাথ রক্ষা করে র্পযটন শিল্প গড়ে তোলা যেতে পারে।

১০. স্থানীয় রাজনৈতিক দল নেতৃবৃন্দ, র্শীষ স্থানীয় বুদ্ধিজীবিগণ ও ব্যবসায়ীবৃন্দের আন্তরকি প্রচেষ্টা সহকারে এখানকার বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সম্পদকে উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়া।

 পরিশেষে একমাত্র সুষ্ঠ পরকিল্পনা প্রনয়ণ এবং তার সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এসমস্যার সমাধান সম্ভব। যেহেতু সমস্যা অতি জটিল ও পুরানা সেহেতু অতি সাবধানে নিতে হবে, এখানে ভুল হওয়ার সম্ভবনা প্রচুর। এজন্য পরিকল্পনাকারীকে  তীক্ন দৃষ্টি দিয়ে যাবতীয় বিষয়ে বিবেচনা করে পরিকল্পনা তৈরী করতে হব। সুতরাং ধৈর্য্য সহানুভূতি ও  সুক্ষ্য দৃষ্টি নিয়ে এ সমস্যা সমাধানের জন্য অগ্রসর হতে হবে।

 

 

 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত