রাঙামাটিতে অন্য সম্প্রদায়কে বিয়ের অভিযোগে অপহরণ ঘটনার শিকার এক দম্পত্তির সংবাদ সম্মেলন

Published: 19 Jan 2017   Thursday   

অন্য সম্প্রদায়কে বিয়ে করার অভিযোগে অপহরনের দীর্ঘ দুই মাস বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে বিচারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অপহৃত  জোসনা চাকমা ও তার স্বামী অপু চন্দ্র সিংহ।

 

রাঙামাটি প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে বন্দিদশা  থেকে মুক্তি পাওয়া জোসনা চাকমা বলেন, তিনি নানিয়ারচর উপজেলার নানাকুরুম নামক এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম জহর লাল চাকমা ও মাতার নাম রত্না চাকমা। তিনি ২০০৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এরপর চলে যান চট্টগ্রামে গার্মেন্টস চাকরিতে। থাকতেন চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায়। সেখানে পরিচয় ঘটে কুমিল্লার আলীশ্বর গ্রামের বাসিন্দা স্বপন চন্দ্র সিংহ ও গীতারাণী সিংহের ছেলে অপু চন্দ্র সিংহের সঙ্গে। ধর্মে তারাও বৌদ্ধ। অপু চন্দ্র সিংহ চট্টগ্রামে টেলিটক কাস্টমার কেয়ারে চাকরি করতেন। এক পর্যায়ে একে অপরের মধ্যে ভালো লাগা আর মন দেয়া-নেয়া থেকে জন্ম নেয় দু’জনের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসার। এর শেষ পরিণতির এক পর্যায়ে গত বছর ১৮ জুলাই চট্টগ্রামে আদালতের মাধ্যমে বিয়ের হলফনামা সম্পাদন করি। পাশাপাশি ধর্মীয় রীতিমতেও তা সম্পাদন করি। এরপর স্বামী-স্ত্রী চট্টগ্রামে বসবাসের কয়েক মাস পর বাবা-মা’র সম্মতি ও পরামর্শে সামাজিকভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে দু’জনেই নানিয়ারচরের নানাকুরুমের তাদের গ্রামের বাড়ি যান।

 

তিনি আরো দাবী করেন, অন্য সম্প্রদায়ের পুরুষকে বিয়ে করার  অভিযোগে গেল বছর ১৮ নভেম্বর অতর্কিত বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে আমাদের বর-কনে দু’জনকেই অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডেকে নিয়ে যায় অস্ত্রধারী চার যুবক। তারা সবাই পাহাড়ী। তখন তারা নিজেদের ইউপিডিএফের লোক পরিচয় দেয়। পরে রাস্তার অর্ধেক পথ থেকে আমার বর অপু চন্দ্র সিংহকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে কিছুক্ষণ পর পাঠানোর কথা বলা হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আমাকে গলায় শেকল দিয়ে বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ওই সময় নিজের জাতির ছেলে রেখে কেন বাঙালি বিয়ে করেছি, সেই অপরাধে আমার ওপর দিনরাত বেদম মারধর ও অমানুষিক নির্যাতন চালাতো দুর্বৃত্তরা।

 

এভাবে প্রথমে রাঙমাটি সদরের কুতুকছড়ির ডলুছড়ির কালাবিচা চাকমার বাড়িতে তিন সপ্তাহ, চোংড়াছড়ির শান্তি চাকমার বাড়িতে প্রায় এক সপ্তাহের অধিক এবং শেষে শুকরছড়ির আনন্দ মণি চাকমার বাড়িতে তিন সপ্তাহ রাখা হয়েছে। পরে অবশ্য শেখলের বাঁধা খুলে দেয়া হয়। এর মধ্যে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক ডিভোর্স লেটারে আমার স্বাক্ষর নেয়া হয় এবং অন্যের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার জন্য ঠিকঠাক করা হয়। সর্বশেষ জীবনবাজি রেখে আনন্দ মনি চাকমার বাড়ি থেকে গেল ১৬ জানুয়ারি গভীর রাতে পালিয়ে গিয়ে কুতুকছড়ির সেনাক্যাম্পে গিয়ে আশ্রয়  নেন তিনি। 

 

পরদিন নানিয়ারচর থানায় পুলিশের নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠান সেনাবাহিনীর সদস্যরা। গেল ১৮ জানুয়ারি রাঙামাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির করে আমার ইচ্ছাতে স্বামীর কাছে হস্তান্তর করেন আদালত। তাকে বাঁচাতে সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়ায় আদালত, সেনাবাহিনী ও পুলিশের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জোসনা চাকমা।

 

সংবাদ সম্মেলনে অপু চন্দ্র সিংহ বলেন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ সহায়তা না করলে আমার স্ত্রীকে জীবিত ফিরে আসার কোনো সুযোগ ছিল না। অবিলম্বে প্রশাসনের কাছে চিহ্নিত অপহরণকারিদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও পরিবারের নিরাপত্তা দাবি জানান তারা।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত