পাহাড়ে নারীদের সমঅধিকারে লড়তে হবে

Published: 08 Mar 2020   Sunday   

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সারাবিশ্বের ন্যায়  পাহাড় ও সমতলে একই সাথে এই দিবসটি পালিত হবে। সমতলে নারীদের সাথে পাহাড়ে জুম্ম নারীদের অধিকারের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকের। কারণ নিজেদের অস্তিত্ব ও সমঅধিকারের জন্য প্রতিনিয়তই সংগ্রামে লড়তে হচ্ছে।

 

১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে আশা জাগরিত হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান হবে। কিন্তু চুক্তির বাইশ বছর পার হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অধিকাংশ মৌলিক বিষয়ই অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়ে গেছে। পাশাপাশি এই চুক্তির  মধ্য দিয়ে আশার সঞ্চার হয়েছিল জুম্ম নারীদের নিরাপত্তা, সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে, কিন্তু হয়নি।

 

বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব সীমান্তে দেশের এক দশমাংশ জায়গা নিয়ে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম। পাহাড়ের এই তিন জেলায় ১১ ভাষাভাষি  ১৪টি জনগোষ্ঠীর বসবাস। এর মধ্যে চাকমা, মারমা,ত্রিপুরা, তংচংগ্যা,  পাংখোয়া, বম, ম্রো,খিয়াং, লুসাই,চাক,খুমি,গোর্খা,অহমিয়া ও সাওঁতাল রয়েছে। এসব জুম্ম জাতিসত্বাদের রয়েছে নিজস্ব রীতিনীতি, সমাজিক প্রথা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। আদিকাল থেকে পাহাড়ের জুম্ম নারীরা  তাদের নিজ নিজ জাতিসত্বাদের  রীতিনীতি, সমাজিক প্রথা, সংস্কৃতি  লালন পালন করে আসছে। এক কথায় জুম্ম নারীরাই যে যার  সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধারব বাহক তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। তারপরও নারীরা এই পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থায় অবহেলিত, নির্যাযিত, সমঅধিকার থেকে বঞ্চিত।

 

এছাড়া নারীদের একটা পরিবারকে অর্থনৈতিক সাবলম্বী করাসহ সকল ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সমান সমান ভূমিকা বা অবদান রয়েছে। জুম্ম নারীরা সেই সকাল থেকে রাতে ঘুমারবার আগ পর্ষন্ত জীবনের সবটুকু সময় ব্যয় করে থাকে পরিবারের জন্য।  তারা জঙ্গল থেকে লাগড়ি সংগ্রহ, দুর থেকে পানি আনাসহ পরিবারের অর্থনৈতিক আয়ের জন্য কৃষি কাজ থেকে অন্যান্য  সকল কাজের ক্ষেত্রে পুরুষের সমান সমান কাজ করে থাকে।  পরিবারের জন্য রান্না-বান্না আর সন্তানসন্তুটি লালন পালনতো-ই রয়েছে।  কিন্তু  তারপরও এই পুরুষশাসিত সমাজে পাহাড়ের নারীদের  সমঅধিকার, সম্পত্তি অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে,তারা পিছিয়ে রয়েছে পুরুষের চেয়ে।

 

তবে তার জন্য পুরুষের দৃষ্টি ভঙ্গি ও মন মানসিকতা পরির্বতন ঘটাতে হবে। এ কথা বলা যায়, সমাজের অর্ধেক অংশ নারী, নারী অংশকে অবহেলায় রেখে কোন সমাজ ব্যবস্থা এগিয়ে যেতে পারে না, আর পারবেও না। নারী মা, নারী বোন, নারী কন্যা। "মা" শিক্ষিত হোক বা অশিক্ষিত হোক সন্তানের প্রথম শিক্ষক তার মা-ই।

 

অন্যদিকে, পাহাড়ের জুম্ম নারীরা সর্বক্ষেত্রে অনিরাপদ জীবন যাপন করতে হচ্ছে। সেই ঘর থেকে কর্মক্ষেত্র পর্যন্ত নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হচ্ছে। পাহাড়ে প্রতিনিয়ত জুম্ম নারীরা যৌন নিপীড়ন, নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হচ্ছে। তবে এসব অপরাধের যথাযথ বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষেত্রেও পুরুষদের প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে এই সমাজ ব্যবস্থা থেকে নারীরা এগিয়ে আসবে কিভাবে?

 

পাহাড়ে বসবাসকারী সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর নারীরা প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন, এবং জাতিগত বৈষম্যের, ভাষাগত লাঞ্চনা, সহিংসতা ও আগ্রাসনে শিকার হতে বাধ্য হচ্ছে।  তবে নারীদের  অনেক অনেক সমস্যা হওয়ার পিছনে বহু কারণ, তার মধ্যে অন্যতম কারণ  হচ্ছে " দৃষ্টিভঙ্গি"। প্রথমে ব্যক্তি, তার পরিবার সমাজ, একজন ব্যক্তি সুন্দর  পরিবার গঠন করে একজন নারী সাহায্য। পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে বোঝাপড়া ছাড়া একটি সুন্দর পরিবার গঠন করা অসম্ভব। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সমাজ ব্যবস্থাকে পাল্টাতে হবে, এই সমাজ ব্যবস্থা থেকে উঠে আসতে হলে নারী-পুরুষ উভয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। পুরুষেরা সচেতন হয়ে যদি  নারীদের পাশে দাঁড়াতে পারে, তাহলে সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন করা সম্ভব।

 

বর্তমান প্রজন্মের প্রতি অনুরোধ আপনারা উঠে আসুন সময়ের বাস্তবতা দাবীতে শিক্ষার পাশাপাশি নিজেদের অধিকারের প্রতি সোচ্চার হয়ে প্রতিবাদ করুন।  আপনার আমার সচেতনার মধ্যে দিয়ে সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন আনা সম্ভব।

--এল,এস, প্রবন্ধটি লেখকের সম্পূর্ন নিজস্ব মতামত। 

উপদেষ্টা সম্পাদক : সুনীল কান্তি দে
সম্পাদক : সত্রং চাকমা

মোহাম্মদীয়া মার্কেট, কাটা পাহাড় লেন, বনরুপা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
ইমেইল : info@hillbd24.com
সকল স্বত্ব hillbd24.com কর্তৃক সংরক্ষিত