বান্দরবানের রুমা উপজেলার গ্যালেঙ্গা ইউনিয়নে এক কার্বারি(পাড়া প্রধান)সহ একই পরিবারের পাঁচজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে গ্যালেঙ্গা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের দুর্গম আবৈ ম্রো পাড়ায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। শুক্রবার পুলিশ ৫জনের লাশ উদ্ধার করেছে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জাদুটোনা বা সামাজিক কুসংস্কারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে স্থানীয়রা জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
নিহতরা হলেন বোমাং সার্কেলের আবৈ ম্রো পাড়া কার্বারি (পাড়া প্রধান) ল্যংরুই ম্রো (৬২), তার তিন ছেলে রুই থুই ম্রো(৪৫), লেং রুং ম্রো(৪০), রিংরাও ম্রো (৩৫) এবং পরিবারের আরেক সদস্য মেন ওয়াই ম্রো(৩৮)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রুমা উপজেলার গ্যালেঙ্গা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের দুর্গম আবৈ ম্রো পাড়া এলাকার বোমাং সার্কেলের কার্বারির পরিবারের বিরুদ্ধে জাদুটোনা বা তাবিজ-কবচ করে পাড়াবাসীদের হত্যার অভিযোগ উঠে আসছে বেশ কিছুদিন ধরে। সম্প্রতি জাদুটোনায় পাড়াবাসীরা মারা যাচ্ছেন- এমন গুজব ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ পাড়াবাসীরা বৈঠক করে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে অভিযুক্ত কার্বারি পরিবারের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কার্বারিসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য নিহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে। ঘটনার পর রুমা জোনের সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
গ্যালেঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বোমাং সার্কেলের মৌজা হেডম্যান মেন রথ ম্রো জানান, পাড়াবাসীদের অভিযোগ-কার্বারি পরিবারপাড়ার লোকজনের ওপর জাদুটোনা করছিলেন। তাবিজ-কবচের কারণে পাড়ার মানুষ মারা যাচ্ছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে ক্ষুব্ধ পাড়াবাসীরা পরিবারটির ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কার্বারিসহ পরিবারের পাঁচজনকে হত্যা করা হয়। আহত অবস্থায় পরিবারের আরেক সদস্য পালিয়ে রক্ষা পায়।
এদিকে আরেক জনপ্রতিনিধি জানান, জুম ক্ষেতের সীমানা প্রাচীর নিয়ে সম্প্রতি কার্বারি পরিবারটির সাথে পাড়ার লোকজনদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। যাদুটোনা নিয়ে কারবারী পরিবারের সাথে পাড়ার লোকজনদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ ছিলো। দীর্ঘদিনের ােভ থেকে পাড়াবাসীরা বৈঠক করে বৃহস্পতিবার রাতে কার্বারি পরিবারের ওপর হামলা চালায়। তবে এ হত্যাকান্ডে পেছনে অন্য কোনো রহস্য থাকতে পারে।
রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম জানান, খবর পেয়ে শুক্রবার দুুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে কারবারীসহ ৫ জনের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বান্দরবান পুলিশ সুপার জেরীন আখতার জানান, কার্বারিসহ পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। দুর্গম ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকা হওয়ায় আগের দিন রাতের ঘটনাটি শুক্রবার সকালে জানা গেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের দুটি টিম পাঠানো হয়েছে। কারবারী পরিবারের সাথে পাড়াবাসীর বিরোধের জের ধরে দুপক্ষের সংঘর্ষে ৫ জন মারা গেছে বলে জেনেছি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.