১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ বছর পরও পাহাড়ে শান্তি ফিরে না আসায় পার্বত্য চুক্তিতে অন্তর্নিহিত দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে দাবী করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)।
রোববার ইউপিডিএফের দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় কমিটির থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে এই দাবী করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইউপিডিএফ কোন একটি নির্দিষ্ট জাতি বা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে না। ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল জাতিসত্তার মুক্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে। পার্টি কর্মসুচির প্রথম দফাতেই স্পষ্ট করা হয়েছে যে, ইউপিডিএফ উগ্রজাতীয়তাবাদ ও সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ এই উভয়বিধ বাদকে প্রত্যাখ্যান করে। আমরা উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ, উগ্র জুম্ম জাতীয়তাবাদ, উগ্র চাকমা জাতীয়তাবাদ, উগ্র মারমা জাতীয়তাবাদ ইত্যাদির যেমন বিরোধী, তেমনি সংকীর্ণ জুম্ম জাতীয়তাবাদ, সংকীর্ণ চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা জাতীয়তাবাদেরও সমর্থক নই। কারণ উগ্র ও সংকীর্ণ এই উভয় জাতীয়তাবাদই বিভিন্ন জাতির জনগণের মধ্যে ঐক্যের পথে বড় বাধা। আমরা প্রত্যেক জাতিকে তার নিজস্ব অধিকার প্রদানের মাধ্যমে জাতিগত ঐক্য প্রতিষ্ঠার পক্ষে। বাস্তবত: এ ছাড়া দেশের মধ্যে বসবাস করা ভিন্ন ভিন্ন জাতির মধ্যে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠার আর কোন বিকল্প কোন পথ নেই।
বিবৃতিতে আরো দাবী করা হয়, পার্বত্য চুক্তি-পরবর্তী গেল ২৪ বছরে ১৯টি বড় ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঘটেছে ১৩টি। এসব হামলায় বহু পাহাড়ি প্রাণ হারিয়েছেন, নিজ জমিজমা ও বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়েছেন ও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শাসকগোষ্ঠীর একটি লক্ষ্য হলো ছলেবলে কৌশলে ও উন্নয়ন-পর্যটন-রাবার বাগান-বাঁধ ইত্যাদির নামে পাহাড়িদের জমি বেদখল করা। সেটলার হামলার পেছনের একটি বড় কারণও হলো এই ভূমি বেদখল। বান্দরবানের লামায় ম্রো-ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জমি জবরদখলের জন্য লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ নামে বহিরাগত ভূমি দস্যুদের একটি কোম্পানি মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে সেখানে পাহাড়িদের জুম চাষের জমি সংকুচিত হওয়ায় তাদের জীবিকা চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, একদিকে আদর্শচ্যুত ও দেউলিয়াগ্রস্ত জেএসএসের ইউপিডিএফ নির্মূলের কর্মসুচী ও অন্যদিকে ভবিষ্যত আন্দোলনের বীজ ধ্বংস করে দেয়ার সরকারী নীতি এই দুইয়ের বিরুদ্ধে পার্টিকে যুগপৎ লড়াই চালাতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। এই লড়াইয়ে ইউপিডিএফের ৩শ ৩৮ জন কর্মী ও সমর্থক নিহত হলেও আন্দোলনের অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করতে পারেনি। বরং নিরন্তর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দিনে দিনে জনগণের আস্থা অর্জন এবং সুদৃঢ় গণভিত্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
বিৃবতিতে ইউপিডিএফের প্রতিষ্ঠার দুই যুগ পূর্তির উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল স্তরের জনগণ, বিদেশে প্রবাসী পাহাড়ি সম্প্রদায়, আন্দোলনের সমর্থক, শুভাকাংখী ও শুভানুধ্যায়ী তথা সমগ্র দেশবাসীকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) প্রতিষ্ঠিত হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.