রাঙামাটিতে বিভিন্ন কলেজে ২০২০-২১ শিক্ষা বর্ষে একাদশ শ্রেনীতে অধ্যয়নরত তংচংগ্যা সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের শুক্রবার নবীন বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইষ্টিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশ তংচংগ্যা স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফোরামের রাঙামাটি শাখার উদ্যোগে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য দীপ্তিময় তালুকদার। বাংলাদেশ তংচংগ্যা স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফোরামের রাঙামাটি শাখার সভাপতি লক্ষী সাগর তংচংগ্যার সভপতিত্বে সন্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ তংচংগ্যা কল্যাণ সংস্থার মহাসচিব এ্যাডভোকেট দ্বীন নাথ তংচংগ্যা, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টের ট্রাষ্টি জয়সেন তংচংগ্যা, ত্রিপিটক বিশারদ শ্রীমৎ আর্য্যজ্যোতি মহাস্থবির, কবি ও সাহিত্যক অজিত কুমার তংচংগ্যা, সরকারী কর্মকর্তা ঐশ্য কুমার তংচংগ্যা, রত্না তংচংগ্যা প্রমুখ। বক্তব্যে দেন তংচংগ্যা স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফোরামের রাঙামাটি শাখার অর্থ সম্পাদক তুহিন তংচংগ্যা, কৌশল প্রিয় তংচংগ্যা ও আদিলাল তংচংগ্যা। অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন দুর্গম এলাকা থেকে রাঙামাটি শহরে বিভিন্ন কলেজে অধ্যয়নরত প্রায় শতাধিক শিক্ষাথীদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সমাজে অবদান রাখায় এ্যাডভোকেট দ্বীন নাথ তংচংগ্যা, অজিত কুমার তংচংগ্যা ও রত্ন কুমার তংচংগ্যাকে সন্মাননা দেওয়া হয়। পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন তহবিলে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য দীপ্তিময় তালুকদার বিশ হাজার টাকা তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য দীপ্তিময় তালুকদার ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্য করেন বলেন, শুধু কলেজে ভর্তি হলে হবে না, ভালো ফলাফলের চেতনা ও মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। দিনে রাতে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকলে কোন কাজ হবে না। মা-বাবারা কত আশা নিয়ে রাঙামাটি শহরে পাঠিয়েছে টাকা পয়সা খরচ করে পড়ালেখার জন্য। তাই লেখাপড়ায় শিক্ষিত হয়ে মানুষের মতো গড়ে তুলতে হবে। দেশের একজন সুনাগরিক হতে হলে নিজেদের চিত্তকে ঠিক রাখতে হবে। নিজের চিত্তকে কাজে লাগিয়ে সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরো বলেন, তংচংগ্যা ভাষার শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে কথা হয়েছে জেলা পরিষদ চেয়ারমানের সাথে। দরকার হলে আবারও কথা বলবো যাতে তা দ্রুত বাস্তবায়ন হয়।
সন্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ তংচংগ্যা কল্যাণ সংস্থার মহাসচিব ও বিশিষ্ট আইনজীবি দ্বীন নাথ তংচংগ্যা বলেন, আমাদের নিজেদের মাতৃভাষাকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের যে সামাজিক রীতিনীতি রয়েছে বা সুদম রয়েছে সেগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। সেগুলো যাতে হারিয়ে না সে জন্য বই লেখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যে প্রথাগুলো রয়েছে সেগুলোর জন্য ভারত ও মিনায়নমার সফর করেছি। উদ্দেশ্য হচ্ছে যে তংচংগ্যাদের সামাজিক রীতি প্রথা রয়েছে সেগুলোর খোঁজ নিতে। ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরামে তংচংগ্যা রয়েছে। কিন্তু মিনায়নমারে তংচংগ্যা থাকলেও তারা রীতিনীতিগুলো হারিয়ে ফেলেছে। তবে বাংলাদেশের তংচংগ্যাদের সাথে ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্যে যারা তংচংগ্যা রয়েছে তাদের সাথে একটা সেতুবন্ধন হয়েছে। আমাদের জাতি গোষ্ঠীর যে কৃষ্টি সংস্কৃতি সামাজিক প্রথা রয়েছে তার মধ্যে বড় হচ্ছে সামাজিক প্রথা। এর মধ্যে মিজোরাম ও ত্রিপুরার তংচংগ্যাদের সাথে সংস্কৃতি বিনিময় হয়েছে। একটা আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য আমার চেষ্টা চালাচ্ছি। পাশাপাশি বাংলাদেশের সকল জনগোষ্ঠীদের নিয়ে একসাথে কাজ করে সরকারকে কিছু একটা দিতে পারি তার জন্য আমাদের কাজ করে যেতে হবে।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বলেন, প্রত্যেককে স্বপ্ন থাকতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে। এইচএসসি ভর্তি হয়েছ। পাশ করে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, জজ ব্যারিষ্টার, আইনজীবি, সাংবাদিক হবে সেটা ঠিক করতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে। তার জন্য পড়াশুনা মনোযোগ দিয়ে করতে হবে সময়ক নষ্ট করা চলবে না। আর নিজেদের আত্ন মর্যাদা বৃদ্ধি করে নৈতিকতা উন্নত করতে হলে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে হবে। যত উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে মন উদার হবে এবং সংক্ষিন্নতা দুর হবে।
বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টের ট্রাষ্টি জয়সেন তংচংগ্যা বলেন, একটি জাতির সবচেয়ে বড় সম্পদ নীতি নৈতিকতা, তার চিন্তা চেতনা। বৌদ্ধ দর্শনের সাথে একটি জনগোষ্ঠীর নীতি নৈতিকতা, চিন্তা ভাবনা মূল্যবোধ ও সমাজের মূল্যবোধ ঘটাতে হবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বলেন, আজ থেকে তোমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে। হয়তো তোমাদের স্বপন রয়েছে। স্বপন ছাড়া মানুষ নেই। শুধু স্বপ্ন থাকলে হবে না, স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। শত বাধা বিপত্তির সাথে নিজেকে মানুষের মত গড়ে তুলতে সর্বদায় লেগে থাকতে হবে। তংচংগ্যাদের জীবন মান ভালো নয়। সবাইয়ের আত্ন সামাজিক অবস্থা মোটামোটি প্রান্তিক। তবে শিক্ষার বিষয়ে গত দুএক দশকে তংচংগ্যাদের সচেতনা, বিপ্লব ঘটেছে। তংচংগ্যারা শিক্ষায় এগিয়ে গেছে, শিক্ষায় মনোনিবেশ বেড়ে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের যে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের সাথে একট সামঞ্জ্যতে পৌছাতে পেরেছি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.