• Hillbd newsletter page
  • Hillbd rss page
  • Hillbd twitter page
  • Hillbd facebook page
সর্বশেষ
কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে এক যুবকের মৃত্যু                    কাউখালী বেতবুিনিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত                    রাঙামাটি রাজ বন বিহারে দুদিনের কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন                    রাঙামাটির রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু                    বৃহস্পতিবার থেকে দুদিন ব্যাপী শুরু হচ্ছে রাজ বনবিহারে ৪৯তম কঠিন চীবর দান                    রাঙামাটির সীমান্তবর্তী দুর্গম হরিণায় বিজিবির মানবিক সহায়তা                    বিলাইছড়িতে প্রকল্প পরিদর্শনে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক                    বিলাইছড়িতে বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শনে ডিপিও                    বিলাইছড়িতে ২২ লিটার মদসহ আটক ১                    কাপ্তাই হ্রদ খননে পরিকল্পনা নেওয়া হবে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টা                    রাঙামাটির বিএফডিসির বেহাল অবস্থায় দেখে হতাশা প্রকাশ মৎস্য উপদেষ্টার                    জুরাছড়ির ধামাইপাড়া বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দান সম্পন্ন                    কাউখালীতে পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটি চাপায় নিহত ১: আহত ১                    ইইউ’র অর্থায়নে বিলাইছড়িতে নগদ অর্থ সহায়তা পেল ১৭৯ পরিবার                    ৮৬ দিন পর ভেসে উঠল রাঙামাটির পর্যটনের ঝুলন্ত সেতু                    রাঙামাটিতে প্রধান শিক্ষককের বিদায় সংবর্ধনা ও শিক্ষক সম্মাননা প্রদান                    রাঙামাটিতে বিরল প্রজাতির গোপালী বুনো হাতি শাবকের মৃত্যু                    চাকমা ও মারমা ভাষার পাঠ্যপুস্তকে নিজস্ব লিপিতেই প্রকাশের দাবি ২৪ বিশিষ্ট নাগরিকের                    বিলাইছড়ি বহুতল ভবন থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু                    রাঙামাটিতে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ                    জুরাছড়ি বরকলক শান্তিদান বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত                    
 
ads

পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ম্লান দেশের মারমা জাতির প্রাচীনতম বর্ণমালা

খাগড়াছড়ি প্রতিবেদক : হিলবিডি টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 21 Feb 2015   Saturday

আনুমানিক ২৫০০ বছরের কাছাকাছি বয়সী উপমহাদেশের প্রাচীনতম ‘মারমা বর্ণমালা’। মারমা ভাষাভাষী লোকসংখ্যাও প্রায় দু’লক্ষাধিক। কিন্তু এই বিপুল জনগোষ্ঠির মধ্যে নিজ বর্ণমালায় স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন লোকের পরিমাণ খুব বেশী আছে বলে মনে করেন মারমা জাতির অভিজ্ঞজনরা।

 

ইতিহাসবিদদের মতে, গৌতম বুদ্ধ জীবদ্দশায় আরাকান রাজ্যে ‘বর্ষাবাস’ করেছিলেন। ধারণা করা হয়, সে সময়কালেই পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘ত্রিপিটক’র প্রায় অধিকাংশই মারমা বর্ণমালায় অনুদিত হয়। পালি ভাষার সাথে বর্ণমালার মিল লক্ষ্যণীয়। কিছুটা সাদৃশ্য আছে বার্মিজ ও রাখাইন বর্ণমালার সাথেও। মারমা ভাষার বর্ণমালার সাথে বার্মিজ বর্ণমালার মিল থাকলেও উচ্চারণ-ধ্বনিগত।

 

মারমা ভান্তে ও ধর্মীয় গুরুরা সেই প্রাচীনকাল থেকেই মারমা ভাষায় ধর্ম প্রচার করার কারণে ভাষাটি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। তাঁরাই এখন পর্যন্ত ভাষাটির শক্তিমান ধারক ও বাহক। মারমা বর্ণমালায় লিখিত পুঁথি, কীর্ত্তন, রুপকথা থাকলেও পাওয়া যেনো দুষ্কর হয়ে উঠেছে।

 

মোট বর্ণমালা ৪৫টি’র মধ্যে স্বরবর্ণ ১২টা এবং ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৩টি। আছে নিজস্ব সংখ্যাও। মারমা ভাষা চর্চার উর্বরভূমি বলা হয় বান্দরবান জেলাকেই। সেই জেলারই একজন দরিদ্র গ্রামপ্রধান (কার্বারী) শৈফুচিং মারমা ১২ বছর ধরে শ্রম দিয়ে মারমা ভাষার অভিধানের পান্ডুলিপি প্রস্তুত করেন। সেই অভিধানে প্রায় দেড় লক্ষ মৌলিক শব্দ, এবং প্রতিশব্দসহ তিন লক্ষাধিক শব্দ আছে। অথচ সরকারী-বেসরকারী সহায়তার অভাবে সেটি আলোর মুখ দেখেনি এখনো। তবে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ‘ইকো ডেভলপমেন্ট’র উদ্যোগে এবং জেলা পরিষদের অর্থায়নে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা উপকরণ রচিত হয়েছে।

 

বান্দরবান সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটটি মুলতঃ সংস্কৃতি নিয়েই ব্যস্ত থাকে। ভাষা নিয়ে উল্লেখ করার মতো কোন কাজই হয়নি। তরুণ প্রজন্মদের মধ্যে হাতেগোনা লোক পাওয়া যাবে যাঁরা মারমা বর্ণমালায় লিখতে পারেন। তবে ধর্মীয় গুরুদের মধ্যে শতভাগ নিজস্ব বর্ণমালায় লিখতে-পড়তে পারেন।

 

বিগত ২০১১ সালে ভাষার সুরক্ষা ও বর্ণমালার চর্চা বাড়াতে মারমা সমাজের শিক্ষা অনুরাগীরা গঠন করেন, বাংলাদেশ মারমা ভাষা একাডেমী। একাডেমীর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বান্দরবানের প্রবীন লেখক ও শিক্ষাবিদ ক্যশৈ প্রু খোকা এবং সাঃ সম্পাদক সংস্কৃতি সংগঠক জলিমং মারমা। এর আগে জেলা পর্যায়ে আলাদা আলাদাভাবে নানা নামে বেশক’টি সংগঠন সক্রিয় ছিলো।

 

আশির দশকে প্রয়াত চাবাই মগের নেতৃত্বে খাগড়াছড়িতে মারমা ভাষার কথ্য ও লেখ্যরুপের প্রকাশ-প্রচার প্রসারের লক্ষ্যে জনমত সংগঠনের পদক্ষেপ নেন। ১৯৮৭ সালের ৩ জানুয়ারী নির্মমভাবে গুম হবার আগ পর্যন্ত তিনি অব্যাহতভাবে মারমা সমাজ সংস্কারে ব্রতী ছিলেন।

 

সংগঠনটির অন্যতম উদ্যোক্তা ও মারমা ভাষা গবেষক ডাঃ অংক্যজাই মারমা ‘মারমা অক্ষরমালা’ (২০১২) এবং ‘মারমা ধারাপাত ও বর্ণমালা’ (২০১৪) প্রকাশিত হয়। সংগঠনটির উদ্যোগের ফলে স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বর্ণমালা শেখার প্রবণতা শুরু হয়েছে।

 

তিনি বলেন, সরকারীভাবে (পার্বত্য জেলা পরিষদ বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান) কোন সাহায্য পাননি। সবেধন নীলমনি একটি ল্যাপটপ দিয়েছেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান চাইথোঅং মারমা।

 

তাঁর সাথে আলাপে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলাসদরের ধর্মঘর এলাকায় সামাজিক উদ্যোগেই প্রায় আধাযুগ ধরে ‘মারমা বর্ণমালা’র একটি শিক্ষা কেন্দ্র’ চালু আছে। এছাড়া বেসরকারী উদ্যোগে বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে প্রায় ৫০টির মতো উপ-আনুষ্ঠানিক স্কুল রয়েছে।

 

মারমা জনজাতির ইতিহাস-সংস্কৃতির গবেষক ও লেখক অংসুই মারমা বলেন, ব্যবহারের ওপরই ভাষা টিকে থাকে। কিন্তু কুষ্টি-ঠিকুজি মারমা বর্ণমালায় লিখিত আছে। আগে পাকিস্তান আমলে পালিটোলে মারমা ভাষার চর্চা ছিলো। মুলতঃ ভান্তেদের শিক্ষকতায় চালিত প্রকল্পটি আশি দশকের দিকে বন্ধ হয়ে যায়। সরকারীভাবে শিক্ষা বিভাগ সম্মানী দিতো। আগে পারিবারিক-সামাজিক কাজে মারমা বর্ণমালায় লিখিত স্ক্রিপ্টের ব্যবহার দেখা গেলেও এখন শুধু একচ্ছত্রভাবে ধর্মীয় কাজেই দেখা মেলে।

 

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত শতভাগ মারমা বর্ণমালায় রচিত পূর্নাঙ্গ কোন সংকলন প্রকাশিত হয়নি। তাই নিরুপায় হয়ে বাংলা হরফে মারমা ভাষার একটি সংকলন প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বান্দরবানে বিয়ে-শাদীসহ কিছু কিছু সামাজিক উদ্যোগে মারমা বর্ণমালায় আমন্ত্রনপত্র দেয়ার রেয়াজ চালু আছে।

 

গবেষক অংসুই মারমা তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, মাতৃভাষাকে জীবনের অবলম্বন করতেই হবে। কারণ ভাষার মাঝেই জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক অস্তিত্ব লুকিয়ে থাকে।

 

বাংলাদেশ মারমা একাডেমীর কেন্দ্রীয় সভাপতি ক্যশৈ প্রু খোকা বলেন, মারমা জাতির ভাষা ও বর্ণমালার পৃষ্ঠপোষকতার ঘাটতি লক্ষ্যনীয়। অথচ তরুণ-শিক্ষার্থীরাই নিজস্ব শ্রম আর আন্তরিকতায় বেশ ক’বছর ধরে ঢাকা থেকে ‘ঞিঞারে’ নামে শতভাগ মারমা বর্ণমালায় লেখা একটি অনিয়মিত সংকলন প্রকাশ করছে। এছাড়া বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল (বিএমএসসি), মারমা উন্নয়ন সংসদসহ বেশ কিছু সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন সীমিত সামর্থ্যে ভাষার সুরক্ষায় নিবেদিত রয়েছে।

 

তিনি মনে করেন, বহুজাতি ও সংস্কৃতির মৈত্রী বন্ধনকে সুরক্ষিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। অথচ মারমাদের সমৃদ্ধ নন্দন সম্পদও বিলুপ্তির পথে। এখন থেকেই ভাষা আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট প্রিয় এই জন্মভূমিতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ও আদিবাসীদের সুকুমার অনুষঙ্গ রক্ষার পদক্ষেপ প্রয়োজন সর্বাগ্রে।

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

ads
ads
আর্কাইভ