তিন মাস ১৭ দিন নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকার পর বৃহস্পতিবার থেকে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকারে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিনেই ১৬০ মেট্রিক টন মাছ আহোরিত হয়েছে। যার রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা।
এদিকে, দীর্ঘ দিন পর হ্রদের মাছ শিকার খুলে দেওয়ায় জেলে ও ব্যবসায়ীদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। জেলেরা হ্রদে পুরোদমে মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে এ বছর হ্রদে পানির উচ্চতা তেমন একটা বৃদ্ধি পায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করতে এবং কাপ্তাই হ্রদের কার্প জাতীয় মাছের আধিক্য বাড়াতে গত ১লা মে থেকে তিন মাসের জন্য হ্রদে মাছ শিকার ও বিপননের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন। তবে গেল ৩১ জুলাই হ্রদে মাছ শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা সময়সীমা শেষ হলেও হ্রদের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি না পাওয়ায় জেলা প্রশাসন আরো ১৭ দিনের জন্য সময় বৃদ্ধি করে। যা বুধবার মধ্যরাতে শেষ হওয়ার পর পর জেলেরা কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন।
সূত্র জানায়, রাঙামাটির বাংলদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন(বিএফডিসি) এর অধীনে চারটি মৎস্য অবতরণ ঘাট রয়েছে। সেগুলো হল রাঙামাটি সদর, মারিশ্যা, কাপ্তাই ও মহালছড়ি ঘাট। এসব অবতরণ ঘাট থেকে প্রথম দিনেই বৃহস্পতিবার কাপ্তাই হ্রদ থেকে ১৬০ মেট্রিক টন মাছ আহরণ করা হয়েছে। যার সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। তবে প্রথম দিনে হ্রদ থেকে জেলেদের জালে বড় মাছ ধরা না পড়লে ছোট মাছ চাপিল ও কেচকি ধরা পড়েছে।
এদিকে,দীর্ঘ সময় ধরে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার ও বাজারজাতকরনের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর জেলে ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রাণ চাঞ্চল্য। গতকাল সকাল থেকে ব্যবসায়ী, জেলে ও শ্রমিকদের মাঝে কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে বিএফডিসি ঘাটে। জেলেদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা মাছ ক্রয় করে শহরের বিএফডিসি ফিসারী মৎস্য অবতরণ ঘাটে মাছ নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে বিএফডিসিকে রাজস্ব দেওয়ার পর এসব মাছ ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে এ বছর ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদে পানির উচ্চতা কিছুটা কম রয়েছে। তাই হ্রদের এই স্বপ্লতার কারণে বাড়তি মাছ আহরণের শংকা রয়েছে।
মাছ ব্যবসায়ী পলাশ বড়–য়াসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা জানান, হ্রদের পানি কম রয়েছে। এক মাস পরে হ্রদের মাছ শিকার খুলে দিতো মাছের আকার আরো বাড়তো। হ্রদে কাচকি আর চাপিলা মাছ পাওয়া গেলেও আকারে ছোট।
কাপ্তাই হ্রদ বৃহত্তর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি লিমিটেডের সভাপতি কবীর আহমেদ জানান, শহরের বিএফডিসি এর মৎস্য অবতরণ ঘাটতি ছোট হওয়ায় আমরা সঠিকভাবে মাছের প্যাকেজজাত করতে পারছি না। তাই ঘাটের আকার বৃদ্ধির দরকার। এছাড়া জ¦ালানি তেলের দাম বাড়াতে গাড়ীর পরিবহনের খরচ বেড়েছে। এই অবস্থায় আমাদের বাড়তি খরচ দিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে মাছ নিয়ে যেতে হচ্ছে।
বিএফডিসি রাঙামাটির বিপনন কর্মকর্তা মো. শোয়েব সালেহীন বলেন, কাপ্তাই হ্রদের চারটি অবতরণ ঘাট থেকে মাছ ল্যান্ডিং করার পর সেগুলো বাজারজাত করা হয়েছে। এসব ল্যান্ডিং থেকে প্রথম দিনে ১২০ মেঃাটন মাছ আহরণ করা হয়েছে। যার রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন,রাঙামাটির ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কাপ্তাই হ্রদে প্রথম দিনে জেলেরা মাছ নিয়ে আসছে তা আমরা খুশি। মাছের উৎপাদন গত বছরের ধারাবাহিকতা এবারও উৎপাদন ভালো হয়েছে। যদিওবা এ বছর ভারী বৃষ্টিপাত কম হয়েছে।
তিনি আরো জানান, হ্রদের অভয়াশ্রমগুলোতে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। জেলেরা যাতে ছোট মাছ ধরতে না পারে সে লক্ষে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো। কারণ হ্রদে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞার তুলে দেওয়ার সাথে সাথে জেলেরা ছোট মাছগুলো ধরে ফেলে।
উল্লেখ্য,১৯৬০ সালে বিদ্যূৎ উৎপাদনের জন্য রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফ‚লী নদীর উপর বাঁধ দেওয়া হয়। এ বাঁেধর ফলে ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিশাল জলধার সৃষ্টি হয়। মানব সৃষ্ট দক্ষিন-পুর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ এ হ্রদের কারণে রাঙামাটি জেলায় ৫৪ হাজার কৃষি জমি পানিতে ডুবে যায়। এক লক্ষের বেশী লোকজন উদ্বাস্তুুতে পরিণত হয়। এ হ্রদের ফলে কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট থেকে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন করে বিপুল পরিমানের রাজস্ব আয় হচ্ছে। এ হ্রদে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে প্রায় ২৫ হাজার জেলে পরিবার।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.