খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য এবং জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নিলোৎপল খীসা একজন শিক্ষাবিদ এবং সুহৃদ ব্যক্তিত্ব। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তাঁর নিজ এলাকা মহালছড়িসহ সারা জেলায় তিনি অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ হিসেবেই পরিচিত। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ লালন করে মহালছড়ির মাইসছড়িতে ৬ বছর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের উপদেষ্ঠা এবং দীর্ঘ ১৬ বছর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে দৃঢ়তার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সর্বশেষ পূনর্গঠিত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সন্মানিত সদস্য মনোনিত হন। এবং যোগ্যতার কারণেই তাঁকে জেলা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। যা তিনি দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছেন।
পরমত সহিঞ্চুনা দেখিয়ে নীতিবান রাজনীতিক নেতৃত্ব এবং সরকারের উন্নয়ন ধারা এগিয়ে নিতে নিলোৎপল খীসার একাগ্রতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে নীতিভ্রষ্ট একটি মহল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মহলটি তাঁকে রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা, উৎকর্ষতা দমিয়ে রাখা এবং ভবিষ্যতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরির উদ্দেশ্যে নানা অপপ্রচার শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে তাঁর প্রয়াত পিতা বিন্দু কুমার খীসাকে নিয়ে কুৎসা রটনাতেও দ্বিধা করেনি মহলটি।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের একাংশে নিলোৎপল খীসার পিতা বিন্দু কুমার খীসা ‘রাজাকার’ ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়। এমন ধরণের খবরে তাঁর নিজের এলাকায় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসী থেকে শুরু করে বীর মুক্তিযোদ্ধা-হেডম্যান-কার্বারি-মুরব্বি ও বয়স্ক নাগরিকরা পর্যন্ত বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে একাত্তরের রণাঙ্গনের মহালছড়ির বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অবিভক্ত মাইসছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে মানবিক গুনাবলীসম্পন্ন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন বিন্দু কুমার খীসা। মূলত: তখন তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে ভূমিকা রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা করেছেন। তারা জানিয়েছেন, ‘বিন্দু কুমার খীসা রাজাকার ছিলেন’ এই তথ্যটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
মহালছড়ি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার চাইহ্লাপ্রু চৌধুরী বলেন, তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান বিন্দু কুমার খীসা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেননি। তাকে নিয়ে অপপ্রচারের প্রশ্নই উঠেনা। একাত্তর সালে মহালছড়িতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগ্রাম কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন ডা. স্বপন চক্রবর্তী। তিনি জানালেন, বিন্দু কুমার খীসা অত্যন্ত ভদ্র ও পরোপকারী চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি তখন সংগ্রাম কমিটির পক্ষের একজন চাকমা নেতা ছিলেন। এমনকি খোঁজ খবর নিতেন এবং টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করতেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষ ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁকে নিয়ে অপপ্রচারে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান জানান তিনি।
মাইসছড়ি বাজার চৌধুরী উগ্য মারমা জানান, ‘বিন্দু কুমার খীসা আমাকে ছেলের মত জানতেন। ভালো মানুষ ছিলেন। একাত্তর সালে মুক্তিবাহিনীকে সহাযোগিতার অভিযোগ এনে তাকেও পাঞ্জাবীরা (স্বাধীনতা বিরোধি) ধরে নিয়ে গুলি করেছিল। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরেন। অথচ তাকে নিয়ে যে অপপ্রচার করা হচ্ছে, তাতে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। অপপ্রচারকে ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন।
লেমুছড়ির হেডম্যান দীনেন্দ্র চাকমা বলেন, সত্তরের জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী চারু বিকাশ চাকমার ভোটের এজেন্ট ছিলেন তিনি। বিন্দু কুমার খীসা সম্পর্কে তখন তিনি খারাপ কিছু শোনেননি। বরং তিনি মুক্তিবাহিনীর পক্ষেই ছিলেন বলে জেনেছেন। একই কথা বললেন মাইসছড়ির হেডম্যান স্বদেশ প্রীতি চাকমা। কেয়াংঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সুনীল জীবন চাকমা বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি বিন্দু কুমার খীসা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কাজ করেছিলেন। নানাভাবে সহযোগিতাও করেন মুক্তিযোদ্ধাদের। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা সঠিক নয়।’
মাইসছড়ি এলাকার আওয়ামীলীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন লিডার জানান, জনপ্রতিনিধি হিসেবে পাহাড়ি ও বাঙ্গালীদের কাছে সমান জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন বিন্দু কুমার খীসা। তার যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই দীর্ঘ সময় ধরে মাইসছড়িসহ আশপাশের বাসিন্দারা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পেরেছিলেন। শুনেছি তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীনতার স্বপক্ষে নানা ধরণের ভূমিকা রেখেছিলেন। কখনো তাঁকে নিয়ে সুনাম ছাড়া দূর্নাম শুনিনি। এলাকার বাসিন্দা মনির আহমদও একই কথা জানালেন।
এ নিয়ে পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য নিলোৎপল খীসা জানান, ‘পিতা বিন্দু কুমার খীসাকে নিয়ে পত্রিকাটি মিথ্যাচার করেছে। একটি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র আমাকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতেই এই ধরণের বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার চালিয়েছে। এলাকার নেতৃস্থানীয়দের সাথে কথা বললেই প্রকৃত সত্যতা উঠে আসবে। তার বাবার বিষয়ে জানতে হলে তিনি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা-হেডম্যান-কার্বারি এবং বয়স্কদের সাথে কথা বলার জন্য বলেছেন।
---হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/এ,ই