তিনবারের বন্যায় লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৬টি সড়কের প্রায় ৫৮ কিলোমিটার গ্রামীন কাঁচারাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
জানা যায়, চলতি বর্ষায় টানা ছোট বড় তিনবারের বন্যায় লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৬টি সড়কের প্রায় ৫৮ কিলোমিটার গ্রামীন কাঁচারাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে । পানি কমে গেলেও দুর্গত এলাকার গ্রাম থেকে শহরের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বিদ্যালয়ের ছাত্র- ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছেনা। এ সমস্যার কারণে ইউনিয়নের প্রায় ১০হাজার মানুষের চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
ইয়াছা থেকে কাঠাল ছড়া সড়কের কাঠাল ছড়া ত্রিপুরা গ্রামের বাসিন্দা চিমুল জলাই ত্রিপুরা, মেন ওয়াই মুরুং, পোয়াং বাড়ীর ইউনুচ সর্দা ও নূরুচ্ছপা সর্দার জানান, বলেন, বন্যায় তাঁদের বাড়িঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার একমাত্র সড়কটির শতাধিক স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ সড়কে হেঁটেও চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারা আরো বলেন, এ রাস্তা দিয়ে এলাকার প্রায় আড়াইশত থেকে ৩শত জন ছাত্র - ছাত্রী অহ্লারী পাড়া সরকারী প্রাথমি বিদ্যায়, ইয়াংছা উচ্চ বিদ্যালয় ও ফয়জুল উলুম হামিউচ্ছন্না ইয়াংছা মাদ্রাসা এবং হেফজ খানা, এতিম খানায় পড়াশুনা করে থাকে। বন্যায় সড়কটির শামুখ ঝিরির ব্রীজের দক্ষিন অংশের রাস্তার মাটি সরে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পড়ে এ ছাত্র- ছাত্রীরা এখন বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না।
ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইয়াংছা এলাকায় অবস্থিত অংহ্লারীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষাক মোঃ নাজেম উদ্দিন জানান, ইয়াংছা থেকে কাঠাল ছড়া পর্যন্ত এ এলাকা থেকে প্রায় আড়াইশত ছাত্র- ছাত্রী তার বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। পুরো রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের পাশে শামুক ঝিরি ব্রীজের দক্ষিণ অংশের রাস্তার মাটি ভেঙ্গে যাওয়ায় বুধবার ও বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে ছাত্র- ছাত্রী অনেক অনুপস্থিত ছিল।
ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ কামাল উদ্দিন জানান,বন্যায় পানিতে অনেক রাস্তা ও জায়গা পানির স্রোতে ভেঙে কোমর সমান গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে কাঁচা রাস্তা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এ ছাড়া অনেক জায়গায় পাকা রাস্তার ইট ও খোয়া পানির স্রোতে ভেসে গেছে।
উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জাকের হোসেন মজুমদার জানান, ইউনিয়নের ফাঁসিয়াখালীর হারগাজা থেকে ফাঁসিয়াখালী পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়ক, ডুলহাজারা থেকে ফাঁসিয়াখালী পর্যনৃত ২০ কিলোমিটার সড়ক, কবিরার দোকান থেকে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন পর্যন্ত সড়ক ৬ কিলোমিটার, পাহাড় ধ্বসে ইয়াংছা থেকে বনফুর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক, হারগাজা-সাপের গারা থেকে পাগলীর আগা পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়কসহ মোট প্রায় ৫৮ কিলোমিটার রাস্তা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে রাস্তা গুলোতে যানচলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। দুর্গত লোকজন হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছেন।
তিনি আরো জানান,ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করতে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে, এখন তা নিরূপণের কাজ চলছে। বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনো প্রাথমিক রাস্তার মেরামতের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
লামা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা খিন ওয়ান নু বলেন, লামায় বন্যায় বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তৎমধ্যে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ক্ষতির পরিমান বেশি হয়েছে। এরপর লামা পৌরসভা সকল ইউনিয়নে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমান এতো বেশি যে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা তাড়াতাড়ি ক্ষয়ক্ষতির তালিকা দিতে পারছেন না। তবে গ্রামীণ সড়ক গুলো প্রায় ভেঙ্গে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এলাকার লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ঘরে যাচ্ছেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.