খাগড়াছড়ির রামগড়ে স্থলবন্দর প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে ২০২০ সালে শতকপ্রতি সরকারি মূল্য ছিলো ৭ লক্ষ টাকা। তার পাঁচ বছর পর এবার নতুন করে অধিগ্রহণ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা। যেটি বেসরকারিখাতে জমি বেচাকেনার মূল্য থেকে অনেকাংশে কম। আবার সময়ের ব্যবধানে জমির মূল্য স্বাভাবিক নিয়মে বাড়ার কথা। অথচ কী এক রহস্যজনক কারণে একই এলাকা একই মৌজার একই দাগের একই খতিয়ানের এমন সরকারি দরপতনে ভূমি মালিকরা ক্ষুব্ধতো প্রকাশ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রামগড় স্থলবন্দর সম্প্রসারণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬ একর জমি নতুন করে অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারিত জমির মালিকদের কাছে জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে নোটিশ জারি করা হয়। নোটিশে প্রতি শতক জমির ক্ষতিপূরণ অর্থের পরিমাণ এক লক্ষ ৯২ হাজার ৪০১ টাকা উল্লেখ করা হয়।
নোটিশ হাতে পাওয়ার পর ক্ষতিপূরণের টাকার পরিমাণ দেখে জমির মালিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়।
উগ্যজাই মারমা নামে জমির মালিক বলেন, ২০২০ সালে স্থলবন্দরের জন্য একই খতিয়ানের একই দাগের অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় প্রতি শতক প্রায় সাত লক্ষ টাকা হারে। অথচ পাঁচ বছর পর একই জায়গার ক্ষতিপূরণের পরমিাণ নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র এক লক্ষ ৯২ হাজার টাকা। দীলিপ রক্ষিত নামে অপর এক মালিক বলেন, বর্তমানে ঐ জমির প্রতি শতকের মূল্য ৩-৪ লক্ষ টাকা। ক্ষতিপূরণের নিয়ম অনুযায়ী তিনগুণ মূল্যে প্রতি শতক ৯ থেকে ১২ লক্ষ টাকা হওয়ার কথা। রিভা মারমা নামে আরেকজন মালিকবলেন, অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারিত ৬ একর জমির মালিক প্রায় ৪০ পরিবার। এদের মধ্যে অনেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবার। অধিকাংশ মালিকই অত্যন্ত দরিদ্র ও অসহায়। দেশের উন্নয়নে আমরা সকলেই জমি দিতে রাজী। কিন্তু আমাদের ন্যায্য মূল্য দিতে হবে।
আরেক জমির মালিক আবু তাহের বলেন, নিয়ম অনুযায়ী নোটিশ জারির পূর্বের ১২ মাসে সম-সুবিধা ও সম-শ্রেণীভূক্ত জমির ক্রয়-বিক্রয়ের মূল্য পর্যালোচনা করে ক্ষতিপূরণের জন্য গড় মূল্য নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু এ নিয়ম না মেনে প্রত্যন্ত এলাকার অনুন্নত জমির কেনা-বেচার মূল্য অনুপাতে আমাদের উচ্চমূল্যের জমিগুলোর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ভূমি সংক্রান্ত মামলার কারণে আমাদের মৌজার ছয়টি খতিয়ান ও একটি হোল্ডিংয়ের জমি ক্রয়-বিক্রয়, নামজারি, রেজিষ্ট্রি কার্যক্রম ২০২৩ সালের জানুয়ারি হতে এখনও বন্ধ রয়েছে। এ জমিগুলো স্থলবন্দর প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত। মামলার কারণে ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ থাকায় অধিগ্রহণ শাখা অন্য খতিয়ান ও হোল্ডিংয়ের অনুন্নত জমির বেচাকেনার মূল্য অনুসরণ করেছে। ভূমির মালিকরা জানান, অধিগ্রহণে ন্যায্যমূল্যে ক্ষতিপূরণের জন্য তারা চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগে লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছেন।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের একটি সূত্র ভূমি অধিগ্রহণের মূল্য নিয়ে জমির মালিকদের ক্ষোভ ও অসন্তোষের ব্যাপারে জানান, ‘ জমির মালিকরা যেন ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পান তা অবশ্যই দেখা হবে।
খাগড়াছড়ি দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এড. জসিমউদ্দিন মজুমদার বলেন, পাঁচ বছর আগে এবং পরের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে হয়তো একটি শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। আগের অধিগ্রহণমূল্য নিয়ে জেলা প্রশাসনের অফিস এবং ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের এখনও সুরাহা হয়নি। তাই এক্ষেত্রেও ভূমি মালিকদের কাছ থেকে টাকা হাতানোর অসৎ উদ্দেশ্যে কর্মচারিরা কম মূল্য দেখিয়ে ফাইল রেডি করেছে।
এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ‘অধিগ্রহণ আইনের ধারা অনুসরণ করে এ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ভূমি মালিকরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছেও প্রতিবিধান চায়তে পারেন। সেক্ষেত্রে একটি গ্রহণযোগ্য বিকল্প বেরিয়ে আসতে পারে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.