• Hillbd newsletter page
  • Hillbd rss page
  • Hillbd twitter page
  • Hillbd facebook page
সর্বশেষ
খাগড়াছড়ির অনন্য এক প্রাথমিক শিক্ষক রুপা মল্লিক,যাঁর পথচলার বাঁকে বাঁকে শ্রম আর সাফল্য                    পরবর্তী বাংলাদেশের এনসিপি নেতৃত্বে দেবে-হাসনাত আবদুল্লাহ                    রাঙামাটিতে তিন দিনের সাবাংগী মেলার উদ্বোধন                    চট্টগ্রাম আঞ্চলিক তথ্য অফিসের গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা                    বিলাইছড়িতে যুবদলের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন                    কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে এক যুবকের মৃত্যু                    কাউখালী বেতবুিনিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত                    রাঙামাটি রাজ বন বিহারে দুদিনের কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন                    রাঙামাটির রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু                    বৃহস্পতিবার থেকে দুদিন ব্যাপী শুরু হচ্ছে রাজ বনবিহারে ৪৯তম কঠিন চীবর দান                    রাঙামাটির সীমান্তবর্তী দুর্গম হরিণায় বিজিবির মানবিক সহায়তা                    বিলাইছড়িতে প্রকল্প পরিদর্শনে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক                    বিলাইছড়িতে বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শনে ডিপিও                    বিলাইছড়িতে ২২ লিটার মদসহ আটক ১                    কাপ্তাই হ্রদ খননে পরিকল্পনা নেওয়া হবে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টা                    রাঙামাটির বিএফডিসির বেহাল অবস্থায় দেখে হতাশা প্রকাশ মৎস্য উপদেষ্টার                    জুরাছড়ির ধামাইপাড়া বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দান সম্পন্ন                    কাউখালীতে পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটি চাপায় নিহত ১: আহত ১                    ইইউ’র অর্থায়নে বিলাইছড়িতে নগদ অর্থ সহায়তা পেল ১৭৯ পরিবার                    ৮৬ দিন পর ভেসে উঠল রাঙামাটির পর্যটনের ঝুলন্ত সেতু                    রাঙামাটিতে প্রধান শিক্ষককের বিদায় সংবর্ধনা ও শিক্ষক সম্মাননা প্রদান                    
 
ads

খাগড়াছড়ির অনন্য এক প্রাথমিক শিক্ষক রুপা মল্লিক,যাঁর পথচলার বাঁকে বাঁকে শ্রম আর সাফল্য

বিশেষ রিপোটার : হিলবিডি টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 06 Nov 2025   Thursday

রূপা মল্লিক, একজন সহকারী শিক্ষক। খাগড়াছড়ি টি এন্ড টি গেইট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন কর্মরত। পাহাড়ের মতোই দৃঢ়, নদীর মতোই শান্ত, আর আলোর মতোই উদ্ভাসিত এক গল্পেগাঁথা তার পেশা জীবন। শিক্ষকতা তার কাছে শুধুমাত্র একটি পেশা নয়, এটি এক অবিরাম যাত্রা স্বপ্ন, শ্রম আর ভালোবাসায় বোনা একটি জীবন প্রদীপ।

শুরুর সেই দিনে: ২০১১ সালের ২৮ জুন এই শিক্ষকের এক স্মরণীয় দিন। জীবনের চাকরি অনুসন্ধানের প্রথম পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি যোগ দেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে। যোগ দেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কমলছড়ি মুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেদিনের সেই তরুণী শিক্ষক জানতেন না যে, সামনে তার জন্য অপেক্ষা করছে এক ভিন্নধর্মী আলোকময় পথচলা। দীর্ঘ ৮ টি বছর সেখানে সফলতার সাথে চাকরী করে পরবর্তীতে বদলী হয়ে আসেন সদরের টি এন্ড টি গেইট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখনো সেই বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন।

শিক্ষক বাতায়নের সঙ্গে নতুন দিগন্ত: ২০১৯ সালে তিনি অংশ নেন আইসিটি ইন এডুকেশন প্রশিক্ষণে, যা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এখানেই পরিচয় ঘটে শিক্ষক বাতায়ন নামের এক বিশাল ডিজিটাল মঞ্চের সঙ্গে। বলাবাহুল্য যে, এ টু আই হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি বিশেষ কর্মসূচি, যার মূল লক্ষ্য হলো সরকারি সেবাকে সহজ, দ্রুত এবং নাগরিক-বান্ধব করার জন্য ডিজিটাল উদ্ভাবন এবং রূপান্তরের মাধ্যমে জনসেবার উন্নয়ন করা। আর শিক্ষক বাতায়ন হলো এটুআই এর অধীনে শিক্ষকদের জন্য এবং শিক্ষকদের মানোন্নয়নে নির্মিত একটি ওয়েব পোর্টাল।

আইসিটি ডিভিশানের শিক্ষা বিষয়ক এই বাতায়নই হয়ে ওঠে তার প্রেরণার উৎস। রুপা মল্লিক তখন দেখতে পান দেশের নানা প্রান্তের অসংখ্য মেধাবী শিক্ষক কনটেন্ট তৈরি করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন শিক্ষার আলো। তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি নিজেও নামেন এই ডিজিটাল যাত্রায়। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে গভীর রাতে কনটেন্ট তৈরি, ভিডিও সম্পাদনা আর আপলোড; সেই পরিশ্রমই একদিন তাকে পৌঁছে দেয় অনন্য উচ্চতায়।

সেই বছরই, অর্থাৎ ২০১৯ সালে, তিনি অর্জন করেন শিক্ষক বাতায়নের সেরা কনটেন্ট নির্মাতা হিসেবে দুইবারের স্বীকৃতি। পাশাপাশি অর্জন করেন উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হওয়ার সম্মাননা।

করোনা মহামারীতে এক আলোর দিশারী: ২০২০ সাল সারাবিশ্ব তখন স্থবির। স্কুল বন্ধ, শিক্ষার্থীরা ঘরে বন্দি। ঠিক তখনই তিনি হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীদের জন্য এক আলোকবর্তিকা।

এক বছরে ৫০০-রও বেশি অনলাইন ক্লাস তৈরি করেন তিনি, যার মধ্যে প্রায় ৩০০টি কনটেন্ট ছিল তার নিজস্ব সৃষ্টি। শুধুমাত্র নিজের বিদ্যালয় নয়, জেলার বিভিন্ন শিক্ষককেও তিনি এই কনটেন্টগুলো পেনড্রাইভে সরবরাহ করেছেন নিঃস্বার্থভাবে।

একই বছর এটু আই এর পরিচালিত শিক্ষক বাতায়ন কর্তৃক আইসিটি ফোর ই এর  জেলা অ্যাম্বাসেডর শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি পান তিনি। সেই স্বীকৃতি শুধু তার কাজের নয়, বরং তার অদম্য নিষ্ঠা ও ভালোবাসারও প্রতিফলন।

সাফল্যের ধারায় নতুন অধ্যায়: ২০২২ সাল ছিল রুপা মল্লিক’র জীবনের আরেক সোনালি বছর। সে বছর তিনি নির্বাচিত হন খাগড়াছড়ি জেলার শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক হিসেবে। একইসঙ্গে অর্জন করেন শিক্ষক বাতায়নের সেরা উদ্ভাবক সম্মাননা।

একই বছর দেশের অসংখ্য মেধাবী শিক্ষকের সঙ্গে কন্টেস্টে জয়ী হয়ে খাগড়াছড়ি জেলার এক মাত্র শিক্ষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, ইউনিসেফ, a2i ও বিশ্বব্যাংকের অধীনে CSSR প্রজেক্টে। তৈরি করেন টেলিভিশন ও বেতার এর জন্য বিভিন্ন শ্রেণির পাঠের জন্য অসংখ্য স্ক্রিপ্ট, যেগুলো পরবর্তীতে ভিডিও শ্যুটিং ও বাংলাদেশ বেতারে রেকর্ড করা হয়। এরপর তার বেশ কিছু ভিডিও ক্লাস প্রচারিত হয় সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে, যা দেশের হাজারো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের কাছে তাকে পরিচিত করে তোলে।

এই বছরেই প্রকাশিত হয় তার প্রথম গল্পগ্রন্থ “অব্যক্ত আলাপন’। ২১শে বইমেলায় পাঠকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি যৌথভাবে প্রকাশ করেন `সূবর্ণ বিজয় কাব্য` নামে একটি কবিতার সংকলন, যেখানে উঠে এসেছে জীবনের আবেগ, সংগ্রাম ও মানবিকতার বার্তা।

অর্জনের পর অর্জন: ২০২৩ সালে শিক্ষক বাতায়ন তার জীবনের এই অনন্য যাত্রাকে স্বীকৃতি দেয় “সফলতার গল্প” হিসেবে। একই বছর তিনি তৃতীয়বারের মতো উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন।

২০২৪ সালে  ও ২০২৫ সালে তিনি উপজেলায় পান ‘গুণী শিক্ষক’ উপাধি, যা তার দীর্ঘদিনের পরিশ্রম, সততা এবং শিক্ষার প্রতি ভালোবাসারই প্রতিদান।

শিক্ষকতার মানে তার কাছে অন্য এক ভালোবাসা: রুপা মল্লিক’র চোখে শিক্ষকতা মানে— দায়িত্ব, ভালোবাসা আর আত্মত্যাগের এক অদৃশ্য বন্ধন। তিনি বলেন, ``আমার ডিপার্টমেন্ট আমাকে মূল্যায়িত করেছে, শিক্ষক বাতায়ন আমাকে দিয়েছে প্রেরণা; আমার পরিবার দিয়েছে শক্তি; আর সহকর্মীরা দিয়েছেন সাহস। আমি কৃতজ্ঞ প্রতিটি মানুষ ও প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে, যারা আমার কাজের অনুপ্রেরণা।”

তার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাকে শুধু শিক্ষক নয়, একজন মা, বন্ধু ও প্রেরণার উৎস হিসেবে দেখে।

আলোর পথে চলা:দুই সন্তানের জননী, স্নাতকোত্তরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিপার্টমেন্ট ফার্স্ট হওয়া বিনয়ী এই শিক্ষক পরিবার-বিদ্যালয় সব সামলিয়ে আজও  নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন শিশুদের জন্য, প্রাথমিক শিক্ষার আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য। পাহাড়ের ছোট ছোট মুখে হাসি ফোটানোই যেন তার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ।

তার গল্প শেখায় একজন শিক্ষক যখন হৃদয় দিয়ে কাজ করেন, তখন তিনি শুধু শ্রেণিকক্ষে নয়, সমাজেও আলো ছড়ান। রূপা মল্লিক আজ প্রমাণ করেছেন “প্রেরণা, পরিশ্রম আর ভালোবাসাই পারে এক সাধারণ মানুষকে অসাধারণ করে তুলতে।”

--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

ads
ads
এই বিভাগের সর্বশেষ
আর্কাইভ