পাহাড়ে মানুষের এখন নিজেদের কোন নিরাপত্তা নেই বলে দাবী করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পাহাড়ের মানুষের মাঝে আজ আনন্দ নেই, নিরানন্দের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। তার কারন পাহাড়ে এক ধরনের শাসন চলছে। সারাদেশে একই রকম শাসন চললেও পাহাড়ে চলছে আলাদা শাসন।
শনিবার আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে রাঙামাটিতে আয়োজিত র্যালীর উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উষাতন তালুকদার এ মন্তব্য করেন।
উষাতন তালুকদার আরো বলেন, পাহাড়ের মানুষ শিক্ষার অধিকার থেকে সব কিছুই বঞ্চিত। যা রয়েছে বঞ্চনা নিপড়ীন শোষন শাসনের করুন ইতিহাস। এ ইতিহাস বদলাতে গেলে আমাদেরকেও বদলাতে হবে। আদিবাসীদের পেছনে ফেলে রেখে ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে শত্রু ভেবে সেই আচরণ করা হলে তার পরিনতি কোন দিনই শুভ হবে না। গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদীসরকারের পতন ঘটিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষনা করা হয়েছে। সেই সরকারের কমিশনের আদিবাসীদের নেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র নারী কমিশনে দুজনকে নেওয়া হয়েছে।
রাঙামাটি পৌর সভা চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে র্যালীর উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা। আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার সভাপতিক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা সভাপতিত্বে অন্যন্যর মধ্যে বক্তব্যে দেন নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান, পাংখোয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নিকোলাই পাংখোয়া, রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি উচিংছা রাখাইন কায়েস প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্যে দেন আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল শাখার সাধারন সম্পাদক ইন্টুমনি তালুকদার। এর আগে বেলুন উড়িয়ে ও গিরিসুর শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্যরা আদিবাসী বাদ্য যন্ত্র বাজিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এরপর আদিবাসীদের নৃত্যু শিল্পীদের মনোজ্ঞ ডিসপ্লেলের প্রদর্শিত হয়। পরে একটি বর্নাঢ্য র্যালী পৌর প্রাঙ্গন থেকে বের করা হয়। র্যালীটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমী চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। র্যালীতে বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা ঐতিহ্যবাহী পোশাকে অংশ নেন।
উদ্বোধকের বক্তব্যে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা বলেন, শাসকগোষ্ঠী যেই সরকারই চালায় সেই সরকারের অধীনে পাহাড়ে আইন-কানুন ও নীতি নির্ধারিত থাকলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারে না। একটি অদৃশ্য শক্তি রয়েছে তাদের কথা ছাড়া পাহাড় এক চুলও নড়চড়ে বসে না। রাষ্ট্র যদি পাহাড়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করে ততক্ষন পর্ষন্ত পাহাড়ের মানুষের ভাগ্যের কোন দিনই পরির্বতন হবে না।
তিনি আরো বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮ বছরেও চুক্তির পুর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। আজ যদি চুক্তি বাস্তবায়িত হতো তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি পাল্টে যেতো। অন্তর্বতী সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষনা পত্র ঘোষনা করলেও পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে জুলাই ঘোষনা নিয়ে কোন শব্দই বলেনি। এতে বুঝা যায় যে সরকারই আসুক না কেন আদিবাসীরা অবজ্ঞায় থেকে যায়। নতুন বাংলাদেশে আদিবাসীদের অন্তর্ভূক্তিমুলক অংশ গ্রহন থাকবে কি, থাকবে না কোন কিছুই বলা হয়নি। তাই এখন আদিবাসসী ভাগ্যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে কেউই জানে না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উষাতন তালুকদার আদিবাসীদের অধিকার ও সাংবিধানে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি চাই দাবী জানিয়ে বলেন, সরকার আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিচ্ছে না তার অন্যতম কারন জাতিসংঘের ঘোষনা অনুযায়ী আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। আর রীতি প্রথাতেও ভূমি অধিকার কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, একটি বিপ্লবী সংগঠন পাহাড়ের জুম্ম জনগণকে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। তারা জেএসএসের বিরুদ্ধে বিরুদ্বাচার করেছে এখনো করে যাচ্ছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে তারাই অন্যতম দায়ী। পাহাড়ের জুম্ম জনগণকে বিভেদ সৃষ্টির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করছে না।
সাবেক এ গেরিলা নেতা আরো বলেন, এ ক্রান্তিলগ্নে, জাতির সন্নিকনে ও এ সংকট মহুর্তে হাতে গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না। দর্শক হয়ে থাকলে হবে না সাহসের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম ও লড়াইয়ের পথে এগিয়ে আসতে। আমাদের জয় অবশ্যই হবে। কারণ আমরা কোন অন্যায় ও অহেতুকভাবে এসব দাবি করছি না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের যত সরকার এসেছে কোন সরকারই আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেয়নি বরং অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যখন কথা বললেন তখন একটি পক্ষ দাবি করলেন তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে, না হলে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। সে কারণে আমরাও আদিবাসী হয়ে অপরাধ করেছি। তিনি সাম্প্রদায়িকতা ও উস্কানি নয়, আদিবাসী বললে রেগে যাওয়ার নয়, পরমত সহিঞ্চুতার মাধ্যমে এগিয়ে আসতে হবে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে। পাশাপাশি আদিবাসীদের মানুষ হিসেবে স্বীকার, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সমাধিকার ও সমমর্যাদা দিয়ে দেশের বহৎ জনগোষ্ঠীকে উদার মন মানসিকতায় এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.