পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা) দেশের শাসক গোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বলেছেন, শুধু মুখের কথা ও কাগজে লেখা নয় বাস্তবে অন্তর্ভূক্তিমূলক দেখতে চাই। তিনি বলেন, বিগত ছাত্র-জনতার অভ্যত্থানে দেশের যে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল সেখানে বারে বারে উচ্চারিত হয়েছে বৈষম্যহীন শোষনমুক্ত জীবন সমাজ বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গঠনের কথা। বলা হয়েছে অন্তর্ভূক্তিমূলকের কথা। এখানে সকল পক্ষকে নিয়ে আমাদের যা কিছু করার তা করে দেওয়ার আকাংখার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। সংস্কারের জন্য অনেক কমিশন হয়েছে সেখানে বাংলাদেশের বহু জাতি, বহু সংস্কৃতি রয়েছে অনেকে তাদের আবেদন-নিবেদন রয়েছে। কিন্তু সেগুলোকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি।
মঙ্গলবার রাঙামাটিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।
সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের যুব সমাজ অনেক কিছু জানলেও অধিকার না থাকায় তাদের জীবনকে উন্নত তথা পার্বত্য চট্টগ্রামকে উন্নয়নে এগিয়ে নিতে প্রযুক্তি কিভাবে ব্যবহার করবে। প্রযুক্তি নির্ভর যুব শক্তি হতে পারে না। এখানে নীতি আদর্শ ও অধিকারের প্রশ্নটি জড়িয়ে রয়েছে। পাহাড়ের বাস্তবতায় অধিকার অনস্বীকার্য। কারণ অধিকার যদি না থাকে সেই প্রযুক্তির অবিস্কার,উদ্ভাবন ও কৌশল কিভাবে জীবনের স্বার্থে ব্যবহৃত হবে। এ জন্য অধিকারের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি নীতি নৈকিতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। আজকে বাংলাদেশের যুব সমাজকে কিছু সংখ্যক কর্মের সীমাবদ্ধ রেখে ওখানে ওখানে যুব উন্নয়ন সাধিত হতে পারে না।
সন্তু লারমা বলেন, বাংলাদেশে বহু ভাষাভাষি মানুষের বসবাস রয়েছে। তবে সংখ্যার দিক দিয়ে নয় বাস্তবতার নিরিখে বাঙালী জাতিসহ ৫২টি জাতির বসবাস রয়েছে। বাংলাদেশ একটি বহু জাতি, সংস্কৃতির দেশ। সুতরাং বহু জাতিকে অর্ন্তভূক্ত করে আমাদেরকে এগিয়ে নিতে হবে। যুব সমাজকে সেটাই ভাবতে হবে। যুবদের উন্নয়ন করতে হলে যত বেশী প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, মানবতাবাদী নীতি আদর্শকে সামনে রেখে যুব সমাজের যে কুক্ষিগত অধিকার রয়েছে সেই অধিকার সম্পন্ন করে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে। তাই আজকের এ দিবসে যুব সমাজকে সেটাই ভাবা উচিত বলে মনে করি।
সন্তু লারমা আরো বলেন, এক সময় পাহাড়ী যুবকরা মদ্যপান করলে শাসকগোষ্ঠী মাদকাসক্তে উৎসাহিত করেছিল। যাতে পার্বত্যাঞ্চলের যুব সমাজ নিজেদের ও তাদের অস্তিত্বকে হারিয়ে ফেলে এটাই ছিল এক সময়ের বাস্তবতা।
সন্তু লারমা বলেন, আমাদের দেশের যুব সমাজের তথা সমাজ ব্যবস্থপনায় নীতি আদর্শে দেখা যায় সাম্প্রদায়িকতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অভাব, দুর্নীতি সন্ত্রাস ইত্যাদি রয়েছে। যা মানব সভ্যতাকে অবদমিত, মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে সে ধরনের মানবতা বিরোধী অনেক অনেক কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ করি। সেজন্য নীতি আদর্শ হতে হলে তাকে প্রগতিশীল, সাম্যবাদী, মানবতাবাদী হতে হবে। তবে এ নীতি আদর্শের সাথে এ প্রযুক্তি যুক্ত থাকতে হবে। তা না হলে এ প্রযুক্তি অবশ্যই মানুষের ধ্বংসের কাজে ব্যবহৃত হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের উদ্যোগে পরিষদ সন্মলেন কক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সুর্বনা চাকমা। এতে অন্যান্যর মধ্য বক্তব্য দেন, শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা, রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইষ্টিটিউটের পরিচালক জীতেন চাকমা, ব্যবসায়ী তনয় দেওয়ান, মোনঘর আবাসিক শিশু সদনের পরিচালক আশোক কুমার চাকমা, এ্যাডভোকেট ভবতোষ দেওয়ান,সুজনের রাঙামাটি শাখার সাধারন সম্পাদক এমজিসান বখতেয়ার উদ্দীন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি রুমেন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী আশিকা চাকমা, ম্রানু মারমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি নিপন ত্রিপুরা, সাংবাদিক সৈকত রঞ্জন চৌধুরী, হিমেল চাকমা, ইরফানুল হক প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্যে দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য চঞ্চু চাকমা। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ যুব সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.