• Hillbd newsletter page
  • Hillbd rss page
  • Hillbd twitter page
  • Hillbd facebook page
সর্বশেষ
আহত অবস্থায় উদ্ধার করা সাম্বার হরিণটিকে বাঁচানো গেল না                    রাঙামাটিতে সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক বিষয়ক যুব প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত                    রাবিপ্রবি’র রিজেন্ট বোর্ডের ৭ম সভা অনুষ্ঠিত                    রাবিপ্রবি`র নির্মানাধীন দুটি ভবন থেকে চাঁদার দাবিতে দুর্বৃত্তদের সশস্ত্র মহড়া                    রাঙামাটি জেলা পরিষদে নিয়োগ ও শিক্ষা বৃত্তিতে বৈষম্য বন্ধ না হলে কঠোর আন্দোলন                    রাঙামাটিতে এইচএসসির পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক                    বিলাইছড়িতে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন                    রাবিপ্রবি’তে একাডেমিক কাউন্সিলের ১২তম সভা অনুষ্ঠিত                    রাবিপ্রবি’তে পরিকল্পিত বনায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন                    রাঙামাটিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে সনাক-টিআইবি’র অ্যাডভোকেসি সভা                    খাগড়াছড়িতে বীর শহীদদের প্রতি আরাফাত রহমান কোকোর ক্রীড়া পরিষদের শ্রদ্ধাঞ্জলী                    সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের গ্রেড উন্নীতকরণের দাবীতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি                    পাহাড়ে খড়ের পরিবর্তে শুকনা কলা পাতায় মাশরুম চাষে সাফল্য                    লংগদুতে গৃহবধূকে ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগে এক যুবক আটক                    পাহাড়ে হাতি ও মানুষরে দ্বন্দ্ব কমছে                    রাঙামাটিতে ৮৫ হাজার ৮৬০ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস খাওয়ানো হবে                    শিশুর যৌন নির্যাতনকারী দাদুকে আটক করেছে পুলিশ                    রাঙামাটিতে দাদুর যৌন নির্যতানের শিকার নাতিনী                    রাজস্থলীতে বাচ্চা প্রসবকালে বন্য হাতির মা ও শাবকের মৃত্যু                    সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ আঃলীগের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা                    পাহাড়ে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার কমাতে মিডওয়াইফারি নার্সিং সেবা বৃদ্ধির উদ্যোগ                    
 
ads

৯ আগষ্ট আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে
আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমি অধিকার সরকার সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে চলেছে-সন্তু লারমা

স্টাফ রিপোর্টার : হিলবিডি টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 05 Aug 2015   Wednesday

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা) সংবিধান সংশোধন করে আদিবাসীদের অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নে সময়সূচি-ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। 

আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন,আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে স্বীকৃত আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমি অধিকার সরকার সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে চলেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আদিবাসীদের ভূমি জবরদখল ও তাদের চিরায়ত ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার হীন উদ্দেশ্যে আদিবাসীদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা, আদিবাসীদের ভূমি জবরদখল ও উচ্ছেদ, আদিবাসী নারীর উপর ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণসহ নৃশংস সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে ফারাক বা ব্যবধান রয়েছে তা কমিয়ে আনতে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের প্রস্তাবিত “বাংলাদেশ আদিবাসী অধিকার আইন”টি জাতীয় সংসদে পাশেরও দাবি জানান।

বুধবার রাজধানীর হোটেল সুন্দরবনে আয়োজিত আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস উপক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন। এ বারের জাতিসংঘের ঘোষিত ২০১৫ সালের আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে “২০১৫-উত্তর এজেন্ডা:আদিবাসী জাতিসমূহের জীবনধারা উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ।”

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে এ সময় অন্যান্যর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য্য, গবেষক ও কলামিষ্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল,বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার আইইডি-এর নির্বাহী পরিচালক নোমান আহমেদ খান ও আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আদিবাসী ফোরামের সাধারন সম্পাদক সঞ্জীব দ্রুং।

সন্তু লারমা সংবাদ সন্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন বলেন, দেশে আদিবাসী ভূমি দখলের উৎসব চলছে। আদিবাসীদের জীবনে মূল অবলম্বন হলো ভূমি। প্রভাবশালী ভূমিগ্রাসী চক্র ক্রমাগতভাবে আদিবাসীদের জমিজমা কেড়ে নিচ্ছে জোরজবর দস্তি করে। জাল দলিল দেখিয়ে, হুমকি দিয়ে, আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে স্বর্বশান্ত করছে আদিবাসীদের। আর দেশের সরকার যাদের রক্ষা করার কথা আদিবাসীদের অধিকার, তারাই অনেক ক্ষেত্রে ভূমিদস্যুদের সহায়তা করছে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে। আদিবাসীরা হয়তো কখনও কখনও আইনের আশ্রয় নিয়েছে, মামলা করেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মামলা চালাতে গিয়ে আরও নিঃস্ব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১৮ বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলোর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম (উপজাতীয়) অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ; পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতাধীন বিষয় ও কার্যাবলী কার্যকরকরণ এবং জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিতকরণ; পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিকরণ; আভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তু ও প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের জায়গা-জমি প্রত্যর্পণ ও পুনর্বাসন; সেনা শাসন ‘অপারেশন উত্তরণ’সহ সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার; অস্থানীয়দের নিকট প্রদত্ত ভূমি ইজারা বাতিলকরণ; পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল চাকুরীতে জুম্মদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তিন পার্বত্য জেলার স্থায়ী অধিবাসীদের নিয়োগ; চুক্তির সাথে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইনসমূহ সংশোধন; সেটেলার বাঙালিদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন ইত্যাদি বিষয়গুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান এখনো কাক্সিক্ষত পর্যায়ে অগ্রগতি লাভ করেনি।

তিনি বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার অন্যতম প্রধান দিক হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ। এ ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষে চলতি বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১-এর বিরোধাত্মক ধারা সংশোধনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও সরকার পূর্বের মতো গড়িমসি করে চলেছে। গত ৯ জানুয়ারি ২০১৫ চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন সংক্রান্ত বৈঠকে উক্ত আইনের ১৩-দফা সংশোধনী প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সে সময় চলমান জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে উক্ত ১৩-দফা অনুসারে আইনটি সংশোধনেরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তী সময়ে ২০ জানুয়ারি ২০১৫ অনুষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির সভায়ও উক্ত ১৩-দফা সংশোধনী প্রস্তাব পুনরায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। কিন্তু তার পরবর্তী সময়ে জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশন এবং অতি সম্প্রতি বাজেট অধিবেশন শেষ হয়ে গেলেও উক্ত আইনটি এখনো সংশোধিত হয়নি।

তিনি আরও বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণরূপে একপাশে ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে, পক্ষান্তরে সরকার একের পর এক চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম-স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও আইন মোতাবেক জুম্ম জনগণের ভূমি অধিকার নিশ্চিত না করে বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের নামে, পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের নামে, রিজার্ভ ফরেষ্ট ঘোষণার নামে, ব্যবসায়ী এবং প্রভাবশালী আমলা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিকে হর্টিকালচার ও রাবার চাষের নামে ইজারা প্রদান করে হাজার হাজার একর জুম্মদের সামাজিক মালিকানাধীন জুমভূমি ও মৌজাভূমি জবরদখল করা হচ্ছে। সরকার চুক্তি অনুযায়ী ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না করে উত্তরোত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যাকে জটিল করে তুলছে। পার্বত্যবাসীর চরম বিরোধিতা সত্ত্বেও জনমতকে পদদলিত করে উন্নয়নের নামে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রহরায় রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। একই কায়দায় জনমতকে উপেক্ষা করে সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজও শুরু করতে যাচ্ছে। এভাবে সরকার চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম-স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে জুম্মদের জাতিগতভাবে নির্মূলীকরণের কাজ জোরালোভাবে বাস্তবায়ন করে চলেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

আদিবাসী নেতা সন্তু লারমা বলেন,আদিবাসী দিবস উদযাপনের মূল লক্ষ্য হল আদিবাসীদের জীবনধারা, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার, আদিবাসী জাতিসমূহের ভাষা ও সংস্কৃতি তথা আত্ম-নিয়ন্ত্রণাধিকার সম্পর্কে সদস্য রাষ্ট্র, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, সংখ্যাগরিষ্ঠ অ-আদিবাসী জনগণ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন করে তোলা এবং আদিবাসীদের অধিকারের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করা। দুঃখের বিষয় বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে আইএলও’র আদিবাসী ও ট্রাইবাল জনগোষ্ঠী কনভেনশন নং ১০৭ অনুস্বাক্ষর করলেও উক্ত কনভেনশনে স্বীকৃত আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমি অধিকার তথা ভূমির উপর ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত অধিকার, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ লাভ, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি, সিদ্ধান্ত-নির্ধারণী ভূমিকা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি অধিকার বাস্তবায়নে সরকার এগিয়ে আসেনি।

সন্তু লারমা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে এখনো আদিবাসী জাতিসমূহের জাতিসত্তা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভূমি অধিকারসহ মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি নেই। আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বীকৃতি প্রদানের জন্য খুব ভালো সুযোগ এসেছিল ২০১১ সালের জুন মাসে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সময়। দুঃখের বিষয়, আদিবাসী সংগঠনসমূহের দাবিকে উপেক্ষা করে সরকার সংবিধানে ২৩ক ধারায় “উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়” হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে নতুন ৬(২) ধারা যুক্ত করে বলেছে, “বাংলাদেশের জনগণ জাতিতে বাঙালী বলিয়া পরিচিত হইবে।” আদিবাসী জনগণ স্বভাবতই এটি গ্রহণ করেনি, তারা দুঃখ পেয়েছে, দেশব্যাপী মানববন্ধন করে প্রতিবাদ করেছে। আদিবাসীরা এভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হতে চায়নি। এখন প্রতি বছর ‘আদিবাসী পরিচয়’ নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। সংবিধানে কোথাও বলা নেই যে, আদিবাসীদের ‘আদিবাসী’ বলা যাবে না। তারপরও প্রশাসনে এবং সরকারি পর্যায়ে এ ধারণা প্রবলভাবে প্রচার করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে আদিবাসী নেই। যারা আছে তাদের ‘উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ বলতে হবে। মিডিয়াতেও এ ধারণা প্রচার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এসব কিছুর পরও আমরা আশান্বিত যে, বেশির ভাগ মিডিয়া আদিবাসী শব্দটিই ব্যবহার করছেন। আমরা আদিবাসী সংগঠনের পক্ষ থেকে বার বার বলার চেষ্টা করেছি যে, আদিবাসী জনগণের আত্ম-পরিচয়ের অধিকার রয়েছে। এটি আমাদের মানবাধিকার। আন্তর্জাতিকভাবেও আদিবাসীদের আত্ম-পরিচয়ের অধিকার স্বীকৃত। কেউ ইচ্ছে করলেই কোনো জাতিসত্তার পরিচয় বদলে দিতে পারে না। এটি নৈতিকতা সম্পন্ন নয়, গ্রহণযোগ্যও নয়। তবু এ পরিচয়ের বিতর্কের ফলে মাঠ পর্যায়ে আদিবাসীদের নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকারকে অস্বীকার করে তাদের জমি দখলের চেষ্টা চলছে। অনেক জায়গায় আদিবাসীদের ভূমি কেড়ে নেয়া হয়েছে, আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আবার রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পরিচয়ের এই বিভ্রান্তির কারণে জেলা পর্যায়ে আদিবাসী সনদ মিলছে না। এনজিও পর্যায়ে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আদিবাসী পরিচয়কে অস্বীকৃতির কারণে প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে এক ধরনের নেতিবাচক বার্তা বা মেসেজ যাচ্ছে যে কারণে আদিবাসীদের উপর আক্রমণ, ভূমি দখল, হত্যা, নারী নির্যাতনসহ মানবাধিকার লংঘন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এসব মানবাধিকার লংঘনের বিচার হচ্ছে না। ফলে আদিবাসীদের আত্ম-পরিচয়, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, ভূমির অধিকার, নিজস্ব জীবনধারা নিয়ে বিকশিত হওয়ার অধিকার, উন্নয়নের নিয়ন্ত্রণ, সব কিছু অনিশ্চয়তার মধ্যে আটকে গেছে। তাই সংবিধান সংশোধন করে আদিবাসী জাতিসমূহের আশা-আকাক্সক্ষা ও দাবির ভিত্তিতে আদিবাসীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভূমি অধিকারসহ মৌলিক অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের জন্য বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে।

সন্তু লারমা বলেন,২০১৪ সালে ৭টি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা আদিবাসীদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং সহায়-সম্পদ লুন্ঠন করেছে। এ বছরে ১৫ জন আদিবাসীকে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতাসহ ৭ আদিবাসী নারীকে হত্যা করা হয়েছে। মোট ১২৬ জন আদিবাসীকে শারিরীকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের ৫৪টির বেশি বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে সেটেলারা। এ সব ঘটনায় প্রকৃত আসামী অনেক ক্ষেত্রে ধরা ছোঁয়াও বাইরে রয়ে গেছে। অভিযুক্ত কাউকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বা বিচারের নজির নেই বললে চলে। কাপেং ফাউন্ডেশনের মতে, বান্দরবান জেলার আলিকদম-থানচির মধ্যবর্তী পাহাড়ি এলাকার কমপক্ষে ১৫০টি পরিবারের পাঁচ শতাধিক আদিবাসী নিরাপত্তার অভাবে মায়ানমারে দেশান্তরিত হয়েছে। উত্তরবঙ্গে ৬০টি পরিবারের ৩০০ জন আদিবাসী সাম্প্রদায়িক হুমকি ও আক্রমণের কারণে এবং ভূমি দস্যুর ভয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।

তিনি আদিবাসী ইস্যুতে জনসচেতনতা তৈরিতে সরকার,জাতিসংঘ,নাগরিক সমাজ ও গণ-মাধ্যমের বিশেষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন,জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, মানবাধিকার সংগঠন, এনজিওসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আদিবাসী অধিকার রক্ষায় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে। আদিবাসী জনগণের সাথে বাঙালি জনগণের মধ্যে সংহতি স্থাপন ও সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় আদিবাসী জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংলাপ ও আলাপ-আলোচনার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেখানে আস্থাহীনতা ও পারস্পরিক বিশ্বাসের অভাব রয়েছে, সেখানে আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তি রচনায় কাজ করতে হবে।

সন্তু লারমা সংবাদ সন্মেলনের মাধ্যমে সরকারের কাছে দশ দফা দাবি-দাওয়া উত্থাপন করেন। সেগুলো হল, আদিবাসী আদিবাসী জাতিসমূহের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ও জীবনমান উন্নয়নের রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসা, সংবিধান সংশোধন করে আদিবাসীদের অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান,পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে সময়সূচি-ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ ঘোষণা করা,জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ২০০৭ সালে গৃহীত আদিবাসী অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র অনুসমর্থন ও বাস্তবায়ন,আইএলও কনভেনশন ১০৭ বাস্তবায়ন ও ১৬৯ নং কনভেনশন অনুস্বাক্ষর,আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ও প্রথাগত ভূমি অধিকারের যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান,সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য ভূমি কমিশন গঠন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক “পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন আইন ২০০১” সংশোধন, আদিবাসী অধিকার আইন প্রণয়ন, মৌলভীবাজার জেলার ঝিমাই ও নাহার খাসিয়া পুঞ্জির আদিবাসীদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের উপর প্রশাসনিক ও অবৈধ চাপ প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে এবং চা বাগানের লীজ বাতিল করা এবং জাতিসংঘ ঘোষিত ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

 

সংশ্লিষ্ট খবর:
ads
ads
এই বিভাগের সর্বশেষ
আর্কাইভ