বান্দরবানের লামা পৌরসভার ধারাবাহিক উন্নয়ন ও ব্যাপক অর্জনে ইষার্ণিত হয়ে একটি মহল আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ফলাফল নিজেদের দখলে নিতে পৌরসভার বিরুদ্ধে অপপ্রচারসহ নীলনক্সা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, লামা পৌর মেয়র আমির হোসেন অভিযোগ করে বলেছেন, বর্তমান পৌর পরিষদ কর্তৃক অধিক উন্নয়নের কারণে আগামী নির্বাচনে জনমত না পাওয়ার ভয়ে একটি মহল এই ভুয়া অভিযোগ ও ভুল তথ্য প্রচার করে উন্নয়ন কাজে বাধাসহ আগামীতে সম্ভাব্য ৩০ কোটি টাকার প্রকল্পে স্থগিত করতে চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
জেলার প্রশাসকের নিকট করা অভিযোগ ও বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, পৌর কর্র্তৃপক্ষ ২০১৪-১৫ আর্থিক সালে এডিপি’র (বিশেষ) অর্থায়নে উন্নয়ন সহায়তা তহবিল এর ৪টি প্যাকেজের ১৫টি কাজের মধ্যে ৭টি প্রকল্পের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তবে ঠিকাদাররা দাবী করেছেন, ৭টি প্রকল্পে ৮০-১০০ শতাংশ কাজ সম্পাদিত হলেও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ২০-৮০ শতাংশ বিল পরিশোধ করেছে। যেখানে প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজ হওয়ার পরেও পূর্ণ বিল দেয়া হয়নি সেখানে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অমূলক বলে জানায় ৪টি প্যাকেজের ঠিকাদাররা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ এর প্রোপাইটর বদরুল আলম চৌধুরী এ প্রতিবেদকে জানান, তারা কাজের ওয়ার্ক অর্ডার পাওয়ার পর থেকে গত দু’মাস যাবৎ লাগাতার বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল, পাহাড় ধস ও ৫বারের বন্যার কারণে কাজ করার কোন পরিবেশ ছিল না। বৃষ্টির মধ্যে এইচবিবি ও সিসি দ্বারা রাস্তা উন্নয়ন, রাস্তা সংস্কার, ড্রেন কালভার্ট এর কাজ করলে তার গুণগত মান ও স্থায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে বলে তারা অতিরিক্ত সময় পেতে যথাযথভাবে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা জানান, যে ৭টি প্রকল্পের কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার মধ্যে চস্পাতলী আঃ চালামের বাড়ী হইতে গণির বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা এইচবিবি দ্বারা উন্নয়ন, পশ্চিম কলিঙ্গাবিলে ব্রিক ড্রেন সহ ড্রেন কালভার্ট নির্মাণ, রাজবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাতামুহুরী নদী অভিমূখি রাস্তা সিসি দ্বারা উন্নয়ন, ছাগলখাইয়া লামা-আলীকদম সড়ক থেকে মাতামুহুরী নদী পর্যন্ত ব্রিক ড্রেইন নির্মাণ, নয়া পাড়া আদর্শ সরকারি প্রাধমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তা সিসি দ্বারা উন্নয়ন প্রকল্পের কোন টাকা পৌরসভা তহবিল থেকে এখনো ছাড় দেয়া হয়নি এবং বৃষ্টির কারণে কাজ শুরু সম্ভব হয়নি। ৫ বারের বন্যায় ও অতিবৃষ্টির জন্য কাজ শুরু করতে পারেনি বলে জানায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। যেখানে বৈইরি আবহাওয়ার কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি এবং এই ৫টি প্রকল্পে কোন বিল ছাড় দেয়া হয়নি সেখানে অর্থ আত্মসাৎ বিষয়ে অভিযোগ ও প্রচার মাধ্যমে লিখালেখি করে নির্দিষ্ট একটি মহলকে খুশি করার জন্য এবং পৌরসভা সম্মান ক্ষুন্ন করার নীলনক্সা ছাড়া কিছুই নয়। এছাড়া লামা সিনেমা হল থেকে মঞ্জুর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজে ২০ শতাংশ কাজ হলেও কোন বিল দেয়া হয়নি। পূর্ব চেয়ারম্যান পাড়া মসজিদের কলাম, গ্রেড বীম ও ছাদ নির্মাণ প্রকল্পে ৪০ শতাংশ কাজ হলেও ২০ শতাংশ বিল দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে, কাদামাটি পরিষ্কারের প্রায় ৬লক্ষ টাকা পৌর মেয়রের আত্মসাৎ বিষয়ে লামা বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, পর পর ৫ বারের বন্যায় পৌরসভার প্রত্যেকটি ওয়ার্ড ও লামা বাজারের সব কয়টি গলির রাস্তা ৫ দফায় পরিষ্কার করতে হয়েছে। পৌরসভা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে।
লামা পৌরসভা মেয়র আমির হোসেন জানান, এডিপি’র প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে অভিযোগ ও কিছু পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ আদৌ সত্য নয় দাবী করে জানান, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে জনমত পরিবর্তনের পায়তারা করছে একটি মহল। বিগত দিনে একই মহল লামা পৌরসভার বিরুদ্ধে শতাধিক অভিযোগ দিয়েছে সরকারী বিভিন্ন অধিদপ্তরে। দুদকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়নি।
তিনি আরও জানান, লামা পৌরসভা ২০১৫-১৬ অর্ধ বছরে সাড়ে ৯ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। এ বাজেট বাস্তবায়িত করতে না দেয়াই এ মহলটির উদ্দেশ্য। এডিবি’র যাবতীয় কাজ সরকারী নীতিমালা অনুসরণ করে সম্পাদন করা হয়েছে। গত দুমাসে ৫বারের বন্যায় কাজ করার সুযোগ না থাকায় ঠিকাদারদের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত সময় দেয়া হয়েছে মাত্র। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে জানান তিনি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.