• Hillbd newsletter page
  • Hillbd rss page
  • Hillbd twitter page
  • Hillbd facebook page
সর্বশেষ
খাগড়াছড়ির অনন্য এক প্রাথমিক শিক্ষক রুপা মল্লিক,যাঁর পথচলার বাঁকে বাঁকে শ্রম আর সাফল্য                    পরবর্তী বাংলাদেশের এনসিপি নেতৃত্বে দেবে-হাসনাত আবদুল্লাহ                    রাঙামাটিতে তিন দিনের সাবাংগী মেলার উদ্বোধন                    চট্টগ্রাম আঞ্চলিক তথ্য অফিসের গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা                    বিলাইছড়িতে যুবদলের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন                    কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে এক যুবকের মৃত্যু                    কাউখালী বেতবুিনিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত                    রাঙামাটি রাজ বন বিহারে দুদিনের কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন                    রাঙামাটির রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু                    বৃহস্পতিবার থেকে দুদিন ব্যাপী শুরু হচ্ছে রাজ বনবিহারে ৪৯তম কঠিন চীবর দান                    রাঙামাটির সীমান্তবর্তী দুর্গম হরিণায় বিজিবির মানবিক সহায়তা                    বিলাইছড়িতে প্রকল্প পরিদর্শনে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক                    বিলাইছড়িতে বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শনে ডিপিও                    বিলাইছড়িতে ২২ লিটার মদসহ আটক ১                    কাপ্তাই হ্রদ খননে পরিকল্পনা নেওয়া হবে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টা                    রাঙামাটির বিএফডিসির বেহাল অবস্থায় দেখে হতাশা প্রকাশ মৎস্য উপদেষ্টার                    জুরাছড়ির ধামাইপাড়া বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দান সম্পন্ন                    কাউখালীতে পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটি চাপায় নিহত ১: আহত ১                    ইইউ’র অর্থায়নে বিলাইছড়িতে নগদ অর্থ সহায়তা পেল ১৭৯ পরিবার                    ৮৬ দিন পর ভেসে উঠল রাঙামাটির পর্যটনের ঝুলন্ত সেতু                    রাঙামাটিতে প্রধান শিক্ষককের বিদায় সংবর্ধনা ও শিক্ষক সম্মাননা প্রদান                    
 
ads

পার্বত্য চট্টগ্রামঃ কে নির্ধারণ করে কার ‘উন্নয়ন’?

ডেক্স রিপোর্ট : হিলবিডি টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 14 May 2014   Wednesday

‘উন্নয়ন’ শব্দটাই যেন এক বিরাট অভিশাপ পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্মদের জন্য(দেশের অন্যান্য অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্যও তা সত্য)। ষাটের দশকের কাপ্তাই বাধ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য আমাদের সরকারগুলো যতগুলো উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সবগুলো যদি একত্রিত করা হয় তাহলে মহাভারতের মত অনেকগুলো মহাকাব্য লেখা হয়ে যাবে! সেখানে উচু পাহাড় কেটে সমান করে, সবুজ বনানী তছনছ করে রাস্তাঘাট নির্মাণ করে, প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে সেগুন-আগর-রাবারের বাগান বানিয়ে, মানুষ উচ্ছেদ করে সেতু-ইমারত-কারখানা গড়ে তুলে উন্নয়ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। আপাতঃদৃষ্টিতে মনে হতে পারে এগুলো অত্যন্ত ভাল জিনিস। এতে আবার আপত্তি কিসের! এই আদিবাসীগুলো আসলেই আদিম, অসভ্য, বর্বর, পশ্চাদপদ, … ! বহু বছর ধরে আদিবাসীদের উদ্দেশ্যে এ ধরণের বিশেষণগুলোই ব্যাবহার করেছে বিভিন্ন দেশের সরকার, বহুজাতিক কোম্পানি, দেশীয় কোম্পানি, … এবং সংখ্যাগুরু জাতির সিংহভাগ মানুষ। এদের অনেকেই এ যাবত বলে এসেছেন যে আদিবাসীরা উন্নয়নবিরোধী। আদিমতায় ‘সভ্যতা’ নিয়ে আসলে, বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাকৃতিক বন-জঙ্গল ধ্বংস করে এক প্রজাতির গাছের ‘বাগানায়ন’ করলে, মানুষ উচ্ছেদ করে মাটির নিচের খনিজ আহরণ করলে, পাহাড় কেটে সমান করলে, নদীর উপর বাধ দিয়ে বিদ্যুত উতপাদন করলে, পরিবেশের ক্ষতি করে কারখানা বানালে,… মানুষের বসতি উচ্ছেদ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করলে আদিবাসীরা মানে না। উন্নয়ন কী জিনিস বোঝে না! উন্নয়ন চায় না!ইদানিং সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে আবারো কিছু উন্নয়নের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। সেখানে নাকি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হবে, মেডিকেল কলেজ হবে, পর্যটন শিল্পের প্রসার হবে। অনেকেই বলবেন, উন্নয়ন হবে সেতো ভালো কথা! এখানে আবার বিরোধিতা কিসের? মানুষজন ‘শিক্ষিত’ হলে, তাদের আয়-উপার্জন বেড়ে গেলে সমস্যাটা কোথায়? প্রশ্নের উত্তরটা সহজ। পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়নের যে উদ্যোগগুলো নেয়ে হচ্ছে সেগুলো যথাযথভাবে হচ্ছে না। যে জনগোষ্ঠির উন্নয়ন করা হবে তারা কী চায়, কোন রকমের উন্নয়ন চায়, কীভাবে চায়, কখন চায়, এসব বিষয়ের কোন খোজ নেয়া হয়নি। তাই প্রথমেই একটা প্রশ্নের উত্তর পেতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামে যে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মেডিকেল কলেজ চালুর যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা সেখানকার মানুষ আদৌ চায় কিনা? কিন্তু সরকার তা কখনও জানতে চায়নি। তবুও যতদূর জানি পাহাড়ের মানুষও তা চায়। এখন প্রশ্ন আসে পাহাড়ের মানুষ কীভাবে তা চায়? সরকার কখনও তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করেনি। একই প্রশ্ন আসে কখন সেই উন্নয়নের উদ্যোগের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা হবে তার বেলায়ও। এদিকে আন্তর্জাতিক আইন বলছে কোন আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে উন্নয়নের উদ্যোগের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে হলে সেখানকার আদিবাসীদের স্বাধীন ও পুর্বাবহিত সম্মতি নিয়েই করতে হবে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা’র ১৬৯ নং কনভেনশন, জীববৈচিত্র্যবিষয়ক কনভেনশন, আদিবাসী বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্রসহ মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইন ও নীতিতে এর উল্লেখ রয়েছে। অথচ পার্বত্য এলাকায় উপরোক্ত উন্নয়ন কর্মসূচিগুলো হাতে নেয়ার বেলায় সরকার এসব আন্তর্জাতিক আইন-নীতির কোন তোয়াক্কাই করেনি। আগেই বলেছি যে পার্বত্য এলাকার আদিবাসীরা নিজেরাই সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ইত্যাদি চায়। কিন্তু এখন নয়। পার্বত্য এলাকার আদিবাসীমানুষ এসব উন্নয়ন হজম করার জন্য এখনই প্রস্তুত নয়। যেমন ধরা যাক এই যে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হবে সেগুলোতে পড়াশোনা করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত স্থানীয় শিক্ষার্থি কোথায় পাওয়া যাবে, যেখানে দুর্গমতা, পশ্চাৎপদতা, দারিদ্র্য ইত্যাদি কারণে প্রতি বছর অত্যন্ত সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থি স্নাতক পর্যায়ে গমণ করতে পারে? আর সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় কারা পড়াবে, স্থানীয় শিক্ষকেরা? কারা সেখানে চাকুরি করবে, স্থানীয় জনগণ? যেখানে দেশের ‘নামী-দামী’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোই নানা-ধরণের সমস্যায় জর্জরিত সেখানে নতুন যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠিত হবে সেগুলোর মান কেমন হবে? আর পর্যটন নিয়ে নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। পর্যটন শিল্প যদি কিছু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে এসে থাকে তা মূলত কিছু ব্যাবসায়ীর জন্যই, সংখ্যাগুরু স্থানীয় জনগণ তা থেকে বঞ্চিতই থেকে যায়। বিপরীতে পর্যটন যে স্থানীয়দের জন্য কত ধরণের সামাজিক সমস্যা নিয়ে আসে তার কোন ইয়ত্তা নেই। তাই প্রশ্ন জাগে এই উন্নয়ন কাদের জন্য? কেবল কি একটা সুবিধাভোগী গোষ্ঠির জন্য? উন্নয়ন হতে হবে সত্যিকার অর্থেই স্থানীয় মানুষের জন্য উন্নয়ন। তা হতে হবে সুষম। হতে হবে টেকসই। তবে সুষম বলুন আর টেকসই উন্নয়ন বলুন, তা হতে হবে সেই এলাকার মানুষের অংশগ্রহণে (কিংবা নেতৃত্বে), তাদের সম্মতিতে, তাদের পরামর্শ নিয়ে। কারণ একজন মা-ই সবচেয়ে ভাল জানে তার সন্তানদের খবর, তাদেরকে কিভাবে বড় করতে হবে, তাদের চাওয়া পাওয়া কী। অন্যথায় সেই উন্নয়ন পর্যবসিত হবে ব্যর্থতায়, ঠিক কাপ্তাই বাধের মত। উন্নয়ন না হয়ে তা হয়ে দাড়াবে দুর্যোগ। দুর্যোগ নিয়ে আসবে অশান্তি। অশান্তি বয়ে আনবে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে দাবী, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জন্য যেসব উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে তা আদিবাসীদের যথাযথ সম্মতি, পরামর্শ ও অংশগ্রহণে করুন। তা করুন যথাযথভাবে, কেবলমাত্র লোক দেখানোভাবে নয়। সেখানে পার্বত্য জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ, রাজনৈতিক দল, প্রথাগত প্রতিষ্ঠান, সুশীল সমাজ রয়েছে, তাদের সাথে বসুন। আসুন, আদিবাসী মানুষের কন্ঠ শুনুন, তাদের বুকের গভীরের কষ্টগুলো বুঝুন, তাদের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের সাথি হোন। দেখুন কী ম্যাজিক হয়!

***লেখক-বাবলু চাকমা,আদিবাসী অধিকার কর্মী।***

—(লেখাটি সম্পুর্ন লেখেকর নিজস্ব মতামত। এখানে হিলবিডিটোয়েন্টিফোর-এর কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বা দায়ী নয়।) 

সংশ্লিষ্ট খবর:
ads
ads
আর্কাইভ