• Hillbd newsletter page
  • Hillbd rss page
  • Hillbd twitter page
  • Hillbd facebook page
সর্বশেষ
পার্বত্যাঞ্চল থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ১২জন ক্রীড়াবিদদের সংবর্ধনা                    ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে বিজু,সাংগ্রাই, বৈসুক উৎসব শুরু                    বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু উপলক্ষে রাঙামাটিতে বর্নাঢ্য র‌্যালী                    বান্দরবানে ধরপাকড়,হয়রানির ঘটনায় উদ্বেগ ও আটকদের মুক্তির দাবি তিন সংগঠনের                    বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটিতে সেনাবাহিনীর আর্থিক সহায়তা                    রাঙামাটিতে জুম উৎসবের আয়োজন                    বন বিভাগের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে সংবাদ সন্মেলন                    বিলাইছড়িতে আগুনে ৬টি বসতঘর পুড়েছে, আহত ১                    পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস কর্মসূচি পালন                    রাবিপ্রবি’তে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত                    বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধীতে বিজিবির মহাপরিচালকের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন                    রাঙামাটিতে নতুন সিভিল সার্জন ডাঃ নূয়েন খীসা                    রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের দরপত্র প্রকাশ নিয়ে গোপণীয়তার অভিযোগ                    কাপ্তাইয়ে গাছ কাটার অনুমতি না থাকায় ব্রীজ নির্মাণে অশ্চিয়তা                    সুখ-শান্তি কামনায় বালুখালীবাসীর মহাসংঘদান                    বরকলে অজ্ঞাত রোগে ৫ জনের মৃত্যু, ১৪ জন অসুস্থ, এলাকায় আতংক                    রাঙামাটিতে জেনারেল হাসপাতালের সাথে সনাকের অ্যাডভোকেসি সভা                    গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি                    স্বপ্ন প্রতিবন্ধীর সভাপতি ত্রিনা চাকমা ও সম্পাদক প্রদীপ চৌধুরী                    ঘাতক ট্রাক প্রাণ কেড়ে নিল রাঙামাটি সরকারি কলেজের মেধাবী শিক্ষাথী সালেহিনের                    চ্যাম্পিয়ন লেকার্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ                    
 
ads

পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটনঃ কি চাই, কেন চাই?

লেখক-ললিত সি. চাকমা : হিলবিডি টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 27 May 2015   Wednesday

পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটন শিল্প’র সম্ভাবনা নিয়ে নানা মহলে ইতিবাচক ধারণা পোষিত হলেও এ পর্যন্ত খুব একটা সমন্বিত উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো নয়। পর্যটন শিল্প বিকাশে সরকারীভাবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সীমিত উদ্যোগ পরিলক্ষিত হলেও বেসরকারী সেক্টরের উদ্যোগ ও অংশগ্রহণ এখনও তুলনামূলক হারে পিছিয়ে আছে। এর জন্য অর্ন্তনিহিত কারন যাই থাকুক না কেন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বলা যায় যে, এ শিল্প বিকাশের প্রত্যাশা এখন সমাজের নানা মহলে বিদ্যমান। তবে কিছু উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রে নানা রকম প্রতিবন্ধকতার কারণে এ শিল্পের বিকাশ অবরুদ্ধ হয়ে আছে। এ শিল্পের বিকাশ’র প্রত্যাশা থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্প বিকাশের গতিপ্রকৃতি, তার স্বরুপ এবং জনমানুষের প্রত্যাশাগুলো কী রকম তা তুলে ধরতেই এ নিবন্ধের অবতারণা।

এটি কোন কাঠামোবদ্ধ একাডেমিক গবেষণার ফল নয়। বরং সমাজের নানাস্তরের মানুষের পর্যটন সংক্রান্ত প্রত্যাশার প্রতিফলন এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট কিছু কিছু সাহিত্য পর্যালোচনার পরিসংক্ষেপ গুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণ দিয়ে পাঠকদের নিকট পর্যটন সংক্রান্ত ধারণা বিকাশের ক্ষুদ্র প্রয়াসমাত্র। 

 

নিবন্ধের শিরোনাম দেখে পাঠকদের নিশ্চয় খুব বেশী কষ্ট হওয়ার কথা নয় যে, এর বিষয় বস্তু কিভাবে বিধৃত হবে। পর্যটন শিল্পটা কেমন হলে ভাল হয় এবং কেন, কী কারণে এখানে পর্যটন শিল্পটা বিকশিত হওয়ার দরকার আছে তাহাই এখানে সাদামাটা, সংক্ষিপ্ত পরিসরে মতামত দিয়ে নীতিনির্ধারণী মহলে ইতিবাচক দৃষ্টি গঠনের প্রয়াসে নিবন্ধের বিষয়বস্তু আবর্তিত। কাজেই শুরুটা ‘কেন’ দিয়ে শুরু করা যাক।


কেন পর্যটন শিল্পের বিকাশ চাইঃ
বর্তমান অর্থনীতিতে পর্যটন শুধুমাত্র একটিা বিনোদন ব্যবস্থাই নয় বরং এটি অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর হোক তা জাতীয় কিংবা স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষেত্রে। এক হিসাব মতে দ্রুত অর্থনীতি বিকাশের দেশ হিসেবে ২০১৪ সালের জিডিপিতে ভারত ৬.৮%, ব্রাজিল ৯.৫%, নেপাল ৪.৬%, থাইল্যান্ড ১৭.০%, মালয়েশিয়া ১৬.০% পর্যটন সেক্টর থেকে অবদান পেয়েছে এবং সে সকল দেশের ক্ষেত্রে পর্যটন শিল্প দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক খাত। অথচ আমাদের দেশে পর্যটন খাতটি এখনও জাতীয় উৎপাদনের জায়গায় স্থান করে নিতে পারেনি সঠিক দৃষ্ঠি এবং সমন্বিত সরকারী উদ্যোগের অভাবের কারনে। তবে ইদানিং মনে হয় সরকার এ শিল্পের বিকাশে গুরুত্বসহকারে ভাবছে এবং এ শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে দেশের যে সকল অঞ্চল গুরুত্ব পেতে পারে তৎমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল অন্যতম। সুতরাং পর্যটনের অগ্রগণ্য এলাকা হিসেবে যদি পার্বত্য চট্টগ্রামকে বেছে নেওয়া হয় তবে সেটাই হবে সঠিক পদক্ষেপ। কিন্তু এ বিষয়ে এখানকার নাগরিকদের ভিন্ন ভাবনা যে থাকবে না তা মনে করার কোন অবকাশ নেই। সেই ভিন্নভাবনাগুলোকে আমলে নিয়েই যদি পর্যটন শিল্প বিকাশের উদ্যোগ সুচিত হয় তবে এ শিল্পর উদ্যোগের প্রারম্ভিক সুচিকাকর্ম সাধন সম্ভব হবেই এবং এ শিল্প থেকে কাংখিত ফলাফল অর্জন সহজতর হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা কোন ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এই শিল্প বিকাশে অগ্রসর হচ্ছি তার উপরই নির্ভর করছে এই শিল্পর সফলতা। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় পর্যটন শিল্প বিকাশের পক্ষে যে সকল কার্যকারন উল্লেখ করার মতো তা হলো-

বিনিয়োগ প্রবণতা পরিবর্তনঃ
আমাদের দেশে ভৌগলিক অবস্থানগত বিবেচনায় লক্ষনীয় যে, সরকারী ও বেসরকারী যাবতীয় উন্নয়ন রাজধানী, বিভাগ ও জেলা এই ক্রমানুযায়ী আর্থিক বিনিয়োগ’র ধারা বিদ্যমান। এই কেন্দ্রমুখী বিনিয়োগ প্রবণতার বিপরীতে প্রান্তিক ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থানীয় পুঁজিকে স্থানীয় উন্নয়নে বিনিয়োগ করা এবং দেশের অন্যান্য স্থান থেকে সম্ভাব্য বিনিয়োগ কারীদের পার্বত্য অঞ্চলে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ প্রয়োজন।

 

শ্রমের সদ্ব্যবহার ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্ঠিঃ
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীলদেশে দারিদ্র্যদুরীকরণে পর্যটন সেক্টরের আবদান অপরিসীম। নিম্নে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক সম্পাদিত জেলা পরিসংখ্যান, রাঙ্গামাটির একটি চিত্র তুলে ধরা হল।


ছকঃ ১। স্থাপনার সংখ্যা এবং কার্যভিত্তিক নিয়োজিত ব্যক্তির সংখ্যাঃ

 

কার্যক্রম

স্থাপনা

নিয়োজিত ব্যক্তির সংখ্যা

মোট

-শহর

-গ্রাম

-মোট

-পুরুষ

-নারী

ম্যানুফেকচারিং

-৬২৮৮

-৩৮৮৫

-২৪০৩

-১৯১৮৫

-১৩২৭২

-৫৯১৩

ইলেকট্রিসিটি, গ্যাস, পানি সরবরাহ

-১১

-৪

-৭

-৩৮

-৩৮

-০

কন্সট্রাকশন

-৮

-৮     

-০

-২৫

-২৫

-০

পাইকারী ও খুচরা ব্যবসা

-৯৭৪৮

-৫০৭৩

-৪৬৫৫

-২৩৩২৮

-২১১৪৪

-২১৮৪

হোটেল এবং রেষ্টুর‌্যান্ট

-১৩৯৮

-৪৭২

-৯২৬

-৪৮৮২

-৪২৮২

-৬০০

ট্রান্সপোর্ট,ষ্টোরেজ এন্ড কমিউনিকেশন

-১৯৩

-১৩৬

-৫৭

-৫০৭

-৫০৫

-২

ব্যাঙ্ক,বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান

-২১১

-৭৫

-১৩৬

-১৬৬৩

-১২২৫

-৪৩৮

রিয়েল এষ্টেট ও রেন্টিং

-৮৫   

-৪৮

-৩৭

-২৬৭

-২৩২

-৩৫

জনপ্রশাসন ও প্রতিরক্ষা

-৩৬৭

-২১৫

-১৫২

-১৫৭৭৭

-১৫৪৮২

-২৯৫

শিক্ষা

-১১০৯

     -২২৫

-৮৮৪

-৫০০৯

-৩৫৭৪

-১৪৩৫

স্বাস্থ্য ও সমাজকর্ম

-২১৪

-১০৫

-১০৯

-১৪৬৩

-১০৭৯

-৩৮৪

কম্যুনিটি,সোশ্যাল,পারসোনাল সার্ভিস

-২১৬০

-১০৭৭

-১০৮৪

-৫৮১৮

-৪৭৯৭

-১০২১

 মোট

-২১৭৯২

-১১৩৪৩

-১০৪৪৯

-৭৭৯৬২

-৬৫৬৫৫

-১২৩০৬

 

উপরের ছকে লক্ষ্যণীয় যে, জেলায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এমন স্থাপনার সংখ্যা ২১৭৯২টি তৎমধ্যে ১১৩৪৩ টি শহর এলাকায় এবং ১০৪৪৯ টি গ্রামীণ এলাকায় অবস্থিত যেখানে মাত্র ৭৭৯৬২ জন ব্যক্তি সরাসরি কর্মে নিয়োজিত। জেলার মোট ৫৯৫৯৭৯ জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ৭৭৯৬২ জন যদি এমন কর্মে নিয়োজিত থাকে তাহলে বাকী লোকদের কর্মসংস্থান এর বর্তমান অবস্থা সহজে অনুমেয়। জেলার ৫৯৫৯৭৯ লোকসংখ্যার যে কর্মসংস্থানের হার তা মোটেও সন্তোষজনক নয়। কাজেই এই ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্ঠির জন্য একটি শ্রমঘন এবং ব্যাপক ও বহুমাত্রিক ক্ষেত্র সৃষ্টি করার প্রয়োজন রয়েছে।


সংস্কৃতির সংরক্ষণ, লালন-পালন ও বিকাশঃ
পর্যটকরা শুধু যে বিনোদন উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়ায় তা কিন্তু নয়। তাদের অনেকেরই স্থানীয় সংস্কৃতির অনেক ইতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে জানার প্রবল আগ্রহ থাকে। এ শ্রেণীর পর্যটক গণের কাছে স্থানীয় সংস্কৃতি এক ধরণের পর্যটন উপাদান। পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বিজু, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কঠিনচীবরদান, ম্রো সম্পদায়ের গো হত্যা উৎসব ইত্যাদি পর্যটক মহলে এখন বিশেষ আকর্ষণ তৈরী করছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নাচ, গান, সঙ্গীত ইত্যাদি বিনোদন মাধ্যম হলেও আগ্রহী পর্যটকগণ সেই সকল সঙ্গীত সংগ্রহ করেন বলেই মনোহরী সঙ্গীতের এক বিশাল বাজার তৈরী হয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত শিল্পী, কলা কৌশলীগণের বিস্তৃত অঙ্গণে প্রবেশের দুয়ার খুলে যায়। সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর স্বাতন্ত্র্য সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ঠ্য আগন্তুকদের কাছে তুলে ধরে একটি মানবিক আবহ সৃষ্টি করার সুযোগ তৈরী হয় এবং দীর্ঘ সময়ে গড়ে উঠা অভ্যাস-রীতি-নীতি, ধ্যান-ধারণার একটি যৌক্তিকতা তুলে ধরার মাধ্যমে একটি জাতিসত্তার পরিচিতি গড়ে উঠার সহায়ক পরিবেশ তৈরী করে।


স্থানীয় অর্থনীতির পুনঃরুজ্জীবিতকরণঃ
অর্থনীতির কেন্দ্রমুখীতার বিপরীতে স্থানীয়ভাবে যে অর্থনীতির অস্তিত্ব বিদ্যমান তার সাথে মুলত সমাজের প্রান্তিক মানুষগুলোর যোগসুত্র বিরাজমান। এই স্থানীয় অর্থনীতিকে ভঙ্গুরতার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অর্থের একটি সুঠু প্রবাহ থাকার দরকরা হয়। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষি নির্ভর অর্থনীতি তাতে যথেষ্ট প্রভাব রাখতে পারছেনা। পর্যটনের মাধ্যমেই স্থানীয় পর্যায়ে অর্থের যোগান বেড়ে যায় এবং তা দিয়েই স্থানীয় জনসাধারণ স্থানীয় অর্থনীতির পুনঃরুজ্জীবিত করণের কাজ চালিয়ে নিতে পারে।


পার্বত্য অঞ্চলে শিল্পায়নের প্রসার তেমন একটা হয়নি। কর্ণফুলী পেপার মিল, রেয়ন মিল, রাঙ্গামাটি টেক্সটাইল মিল, কয়েকটি প্লাইউড ফ্যাক্টরী ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোন শিল্পকারখানা পার্বত্য এলাকায় গড়ে উঠেনি। এসব বৃহৎ শিল্পকারখানার মধ্যে একমাত্র রাঙ্গামাটি টেক্সটাইল মিল ছাড়া অন্যগুলোতে স্থানীয় শ্রমিক কর্মচারীদের সংখ্যা খুবই নগন্য । চলমান ভারী শিল্পগুলো যখন স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্ঠিতে ভুমিকা রাখতে পারেনি সেক্ষেত্রে এই শিল্পগুলোর বিকল্প হিসেবে পর্যটন বিকশিত হলে স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশের ধারা তরান্বিত হবে।


সামাজিক উন্নয়নে তহবিলের যোগানঃ
সমাজের দ্রুততর বিকাশ সাধনের জন্য দাতাসংস্থা মুখাপেক্ষী উন্নয়ন তৎপরতার দিন শেষ হতে চলেছে। দাতা দেশ সমূহের বর্তমান সময়ের অর্থনৈতিক মন্দা আমাদের সামাজিক উন্নয়ন সেক্টরেও প্রভাব ফেলেছে। দাতাদের সহায়তা হ্রাস পাওয়ার কারণে বেসরকারী সেক্টরের উন্নয়ন তৎপরতা বহুলাংশে কমে এসেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে উদ্ভাবিত ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম যেভাবে আভ্যন্তরীন সম্পদ সমাবেশনের মাধ্যমে বর্তমানে এক বিশাল জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বলয় তৈরী করেছে ঠিক সেভাবেই পর্যটনখাতে সেবা বিনিময়ের মাধ্যমে আয় এবং অর্জিত আয় থেকে মানুষের জীবন-জীবিকার ব্যয় মিটানোর কলা-কৌশল সহজে রপ্ত করণের পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক উন্নয়নে তহবিল সংগ্রহ বা জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করণের লক্ষ্যে পর্যটন সেক্টরে সামাজিক ব্যবসায় ধারণাকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক উন্নয়ন সেক্টরে তহবিল সংগ্রহ করার সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।


জীবন-জীবিকার বৈচিত্রীকরণঃ
আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এখনও একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। জীবিকার প্রশ্নে এখনও মানুষ গতানুগতিক পেশা সমূহে আবদ্ধ থেকেই জীবন নির্বাহ করে। বিশেষত কৃষি বা জুমচাষ, বন-বাগান সৃষ্ঠি এসব কাজে এখনও পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ বিশেষ করে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীক নিয়োজিত থাকতে দেখা যায়। অথচ পৃথিবী এখন একটি জটিল পরিবেশের মধ্য দিয়ে আবর্তিত হচ্ছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষগুলোর আশপাশও একইভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে দ্রুতলয়ে। সে তুলনায় বিশেষ পরিবর্তন ঘটছে না এখানকার মানুষগুলোর জীবিকার ধরণে। অনেক সমালোচকের দৃষ্ঠিতে এখানকার দুরবর্তী ও প্রান্তিক অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের প্রধান জীবিকা জুমচাষকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে নানাভাবে প্রচার-প্রচারনার কাজ হয়ে থাকে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পেশা সৃষ্টি হলেও এখানকার মানুষগুলোর সেদিকে খুব একটা খেয়াল নেই। ফলে সময় ও বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে চলতে না পারার কারনে পেছিয়ে পড়ছে এখানকার সমাজ। পর্যটন সেক্টরের অর্থনৈতিক সুযোগ একটু হলেও এখানকার মানুষের গতানুগতিক পেশাগত ধারা পরিবর্তনে ব্যাপক সাড়া ফেলতে পারে বলে মনে হয়।


স্থানীয় জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধিঃ
দেশের অন্যান্য পশ্চাদপদ অঞ্চলের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষেরই পেশাগত দক্ষতা অর্জনের সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। মানুষগুলোর সময়উপযোগী ‘জীবন ভিত্তিক শিক্ষা’য় অভিগম্যতা সীমিত হওয়ার কারণে পেশাভিত্তিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে নানাভাবে পিছিয়ে পড়ছে। প্রতিবেশ, বাস্তবতা এবং জীবন অভিজ্ঞতার কাছে ঋণী থেকেই জীবন দক্ষতা অর্জনের জায়গায় আমাদের সীমিত অংশগ্রহণের কারণে কার্যকর দক্ষতা গড়ে উঠছে না। ফলে প্রতিযোগিতা নির্ভর শ্রমবাজারে পিছিয়ে পড়ছে শ্রমিক শ্রেণী; সেই সাথে পিছিয়ে পড়ছে তাদের সমাজ কাঠামো।


স্থানীয় পণ্যর বাজার সৃষ্ঠিঃ
পার্বত্য চট্টগ্রামে উৎপাদিত কৃষিজ ও কুটির ও হস্তশিল্পজাত পণ্যর ব্যাপক সম্ভার রয়েছে। এ সকল পণ্যর সারাদেশ ব্যাপী চাহিদা থাকলেও উৎপীড়নমুলক বাজার প্রথা তথা সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে পণ্যর সঠিক মূল্য পাওয়া এখনও সুদুর পরাহত। কাজেই পর্যটকমহল’র পার্বত্য চট্টগ্রামে আনাগোনা বেড়ে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে এক ব্যাপক ক্রেতাগোষ্ঠী তৈরী হবে যাদের কাছে স্থানীয় কৃষি ও শিল্পজাত পণ্যর বিক্রির সম্ভানা বেড়ে যাবে। উৎপাদকমহল উৎপাদিত পণ্যর সহজভাবে বাজারজাত করণের সুযোগ লাভ করবে এবং সেই সাথে পণ্যর গুণগতমান উন্নতকরণের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এভাবে কিছু ব্যবসায়ী মহলের দৃষ্ঠি আকর্ষণ সম্ভব হলে স্থানীয় পণ্যর বাজার চাহিদা যেমনি সৃষ্টি হবে তেমনি প্রতিযোগিতা মূলক বাজারে টিকে থাকার যোগ্যতা অর্জন করবে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষগুলো।


ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়নঃ
পর্যটন শিল্পটি মুলত ভৌগলিক সৌন্দর্য্য ও শিল্পকলার সাথে সম্পর্কিত। পর্যটন বিকাশের সাথে সাথে অবকাঠামো যেমন, রাস্তাঘাট, আবাসন, বিনোদনকেন্দ্র ইত্যাদি নির্মাণের প্রয়োজন পড়ে। কাজেই পর্যটন বিকাশের স্বার্থে সরকারি উদ্যোগে অবকাঠামো উন্নয়নের সুযোগটা কাজে লাগানো যেতে পারে। এখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের নিজস্ব বয়ন এবং হস্তজাত শিল্প এর সাথে পর্যটনের একটা যোগসুত্র আছে। স্থানীয় সংস্কৃতির নান্দনিক উপস্থাপনার জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্যুভেনির জাতীয় পণ্যর মাধ্যমে স্থানীয় শিল্প স্থাপত্যর প্রসার ঘটানো সম্ভব হতে পারে।


রাঙ্গামাটি জেলায় সবমিলিয়ে পাকা রাস্তার পরিমাণঃ ৪০৮.২৫ অর্ধপাকা রাস্তার পরিমাণ ২৬৪ কি.মি. মাত্র। জেলার অধিকাংশ জায়গায় এখনও কোন প্রকার রাস্তাঘাট নির্মাণের আওতায় আসেনি। বাকী দু’টা জেলার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। পর্যটকদের আগমণ বৃদ্ধি পেলে রাজস্ব আয় সৃষ্ঠি, পণ্য পরিবহনসহ রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ড চালানোর লক্ষ্যে সরকার রাস্তাঘাটসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে দৃষ্টি দিতে পারে। যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।


প্রাকৃতিক সম্পদের ভ্যালুচেইন তৈরীঃ
পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্যমান অজস্র প্রাকৃতিক সম্পদ যেমনঃ নদী, পাহাড়, হ্রদ, ঝর্ণা, বন বনানী, বিরল প্রজাতির পশু-পাখি, উদ্ভিদ, লতা-গুল্ম ইত্যাদির মূল্য অপরিসীম। কিন্তু এই মূল্য যথাযথভাবে মুল্যায়ন ঘটছে না। এ সকল সম্পদের যতটুকু ভ্যালুচেইন তৈরী হওয়ার কথা ছিল তা আদৌ তেরী হয়নি। ফলে এ সকল সম্পদের প্রকৃতমূল্যও অবমূল্যায়িত থেকে গেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অংশ এ সকল সম্পদ পর্যটকদের কাছে তুলে ধরা গেলে এখান থেকে আর্থিক আয়ের সুযোগ রয়েছে। তবে, বলে রাখা ভাল যে এ সকল সম্পদের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব স্থানীয় জনগোষ্ঠীর হাতেই ন্যস্ত করতে হবে।


কেমন পর্যটন শিল্প’র বিকাশ চাই?
এতোক্ষণে পর্যটন শিল্পের বিকাশের পক্ষে কারণ বা পটভুমি তুলে ধরা হল। এ শিল্প যদি সত্যি সত্যিই এখানে বিকাশ লাভ করে তাহলে এখানকার পর্যটন শিল্পের স্বরুপটা কেমন হবে সে ব্যাপরে প্রত্যাশা থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এই প্রত্যাশার ধরণ বা রূপটা হতে পারে এ রকম-

 

প্রকৃতি কেন্দ্রীক বা ইকো ট্যুরিজমঃ
পার্বত্য এলাকায় যে পরিমাণ বনভূমি রয়েছে তা দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে গাছ ও বাঁশ কাটার ফলে। আর্থিক কারনেই এ সকল গাছ ও বাঁশ কাটার প্রয়োজন পড়ে এবং অর্থনৈতিক কারণেই মানুষ এখন গাছ-বাঁশ লাগাচ্ছে। যে প্রজাতির গাছ লাগালে অর্থ আসে সে প্রজাতির গাছ লাগিয়ে থাকে মানুষ জন। ফলে বন-বাগানে এখন ‘মনোকালচার’ সংস্কৃতি গড়ে উঠছে। পরিবেশ রক্ষা কিংবা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার ধারণা নিয়েই এখনও এখানকার বন গড়ে তোলা হয়না। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে বনগুলো উজাড় হচ্ছে, পানির উৎস্যগুলো শুকিয়ে গিয়ে ঝিরি-ঝর্ণাগুলো মরে যাচ্ছে, বিপন্ন হচ্ছে প্রাণীকুলের বাস্তুসংস্থানতন্ত্র। এখনও পর্যন্ত যতটুকু বন আমাদের বিদ্যমান রয়েছে সেই বন ও বাগানগুলোকে জীব বৈচিত্র্যের আধার হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেই এগুতে হবে এবং এ সকল স্থাপনা সমূহ যাতে পর্যটকদের দেখার জন্য খুলে দেওয়া যায় সেভাবেই গড়ে তুলতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রসারিত পর্বতরাজি, মধ্যবর্তী উপত্যাকা, নদী ও ছোট-বড় পাহাড় ইত্যাদি মিলিয়েই আমাদের এখানকার প্রকৃতি। প্রকৃতির এ সুন্দরের প্রতি পর্যটকদের এক ধরণের মোহ রয়েছে। পর্যটকদের আগমনে প্রকৃতির যাতে কোন ধরণের ব্যাঘাত না ঘটে সে দিকে লক্ষ্য রেখেই পর্যটন শিল্প বিকাশে এগিয়ে আসতে হবে।

 

সংস্কৃতি বান্ধব বা কালচারাল ট্যুরিজমঃ
এখানকার নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য ও তাদের বর্ণিল সংস্কৃতি এ এলাকায় পর্যটন বিকাশের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে আরও উৎকর্ষতর করতে কিংবা বিকাশের লক্ষ্যে পৃষ্টপোষকতা করতে যদি পর্যটন শিল্প সহায়ক ভূমিকা রাখে তবেই সাধুবাদ। অন্যথা এখানকার মানুষের এ শিল্পের বিকাশে অবদান হয়ে পড়বে গৌণ। পর্যটনটা হতে হবে এখানকার মানুষ’র সংস্কৃতিকে অন্যর কাছে তুলে ধরার অনন্য মাধ্যম। রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কঠিন চীবরদান, বান্দরবানের স্বর্ণমন্দির ও রামজাদি কিংবা চিংম্রং এর স্বর্ণবুদ্ধ এখানকার কালচারাল ট্যুরিজম বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। প্রতিবছর দেশীয় ও বিদেশী অনেক পর্যটক এ সকল স্থাপনা দেখতে আসে নানা সময়ে। এখানকার লোকজ উৎসব যেমন বিজু, গো হত্যা উৎসব ইত্যাদি যাতে সাংস্কৃতিক মুল্যে প্রসারিত হয় এবং র্নিঘাত উদযাপন করা যায় এমন পর্যটনকে বিকশিত হতে দেখেতে চায় এখানকার জন সমাজ। একই সাথে এখানকার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক উপাদান ও প্রতীক সমূহের করপোরাটাইজেশন থেকে মুক্ত রাখার দায়িত্বশীল পর্যটনের বিকাশ চায় এখানকার মানুষ জন।

 

সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল বা কম্যুনিটি বেইজ ট্যুরিজমঃ
পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবেই অতিথি পরায়ন এবং স্ব স্ব সমাজের প্রতি রয়েছে নিখাদ দায়িত্ববোধ। কাজেই স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, রীতিনীতি প্রথা ও বিশ্বাসের প্রতি পূর্ণমাত্রার সংবেদনশীলতাসহকারে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের এই এলাকায় আগমন ঘটুক এমনটা প্রত্যাশা করাটা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। একই সাথে এখানকার পর্যটনের বিকাশ ও ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অর্থবহ অংশগ্রহণ বিষয়ে নীতি তৈরী করতে সরকারের উচ্চমহলে ইতিবাচকভাবেই বিবেচনা করা হোক এমনটাই ভাবেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয় সংস্কৃতির সুরক্ষা, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা, ভূমির প্রথাগত মালিকানার প্রতি সম্মান কিংবা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাঠামোগত বঞ্চণা ইত্যাদি বিষয়ে দায়িত্বশীল না হয়ে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক বিকাশের তকমা এটে পর্যটন বিকাশে সরকার এগিয়ে আসুক এমন টা চায়না এখানকার মানুষরা। এখানকার শতশত বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যর প্রতি হুমকী হতে পারে এমন আচরণকারী পর্যটক কিংবা পর্যটন উদ্যোগ’র প্রতিও সংশয় রয়েছে এখানকার মানুষের। এখানকার পরিবেশ, প্রতিবেশ, জীবনধারা অথবা জনবিন্যাসের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ সম্পন্ন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি সহমর্মী যে কোন পর্যটন উদ্যোগে এখানকার মানুষের অসম্মতি থাকার কথা নয়।

 

যৌন বাণিজ্যের পরিবর্তে মানব মুখী পর্যটনঃ
পর্যটন শিল্পের অনেকগুলো ইতিবাচক দিক থাকলেও নেতিবাচক দিক যে নেই তা কিন্তু নয়। এ শিল্পের একটি নেতিবাচক দিক হল ‘যৌন বাণিজ্য’। আবার যৌন বাণিজ্যের সাথে মানব বা নারী পাচারেরও সম্পর্ক রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটন শিল্পকে ‘যৌন বাণিজ্য’ নির্ভর শিল্প হিসেবে কেউই দেখতে চায়না। এ শিল্প বিকশিত হওয়ার সাথে সাথে সম্ভাব্য ঝুঁকি যেমনঃ যৌণ দাসত্ব, নারী পাচার, এইডস সংক্রমণ ইত্যাদির পুর্ব প্রতিরোধ বা প্রতিকার মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই পর্যটন বিকাশে উদ্যোগ নেওয়া আতœঘাতি হতে পারে। স্থানীয় মানুষের সহজ-সরলতা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ইত্যাদি সামাজিক দুর্বলতাকে পূঁজি করে ম্যানিপুলিটিভ পর্যটন বিকাশের যে কোন উদ্যোগ ‘হিতে বিপরীত’ হতে পারে। বরং এ সকল জনগোষ্ঠীর জন্য কল্যাণ বয়ে আনার স্বার্থেই যদি তাদের সাথে মতবিনিময়, সম্মতি আদায় এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ এভাবে পরিকল্পিত পথে পর্যটন বিকশিত হয় তাহলে পর্যটন শিল্প স্থায়ীত্বশীল হতে পারে। মানুষ পর্যটন শিল্পের দীর্ঘমেয়াদী সুফল ভোগ করতে পারলেই তবে তার পক্ষে দাড়াবে।

 

আগ্রাসনমূলক না হয়ে হবে জন অংশগ্রহণমূলকঃ
স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কার্যকর ও অর্থবহ অংশগ্রহণ ছাড়া এ এলাকায় পর্যটন শিল্প বিকাশের উদ্যোগ সফল হতে পারে না। কোন দেশেই স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ব্যতীত পর্যটন শিল্প থেকে প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়ার নজীর পাওয়া যায়নি। কাজেই, এই অঞ্চলে পর্যটন বিকাশের যে প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে তা কাজে লাগিয়ে স্থানীয় অর্থনীতির ভিত্তি সুদৃঢ়করণের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত করতে হলে জনঅংশগ্রহণকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। ‘এখানকার মানুষের জন্য পর্যটন, এমনটা না হয়ে এখানকার মানুষকে সাথে নিয়েই পর্যটন’ শিল্পটা বিকশিত হোক এটাই জনপ্রত্যাশা। চাপিয়ে দেওয়া পর্যটন আর অংশগ্রহণমূলক পর্যটনের সুষ্পষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ করেই এ শিল্প বিকাশের দায়িত্ব দিতে হবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকেই।


পর্যটন শিল্প বিকাশে সমন্বিত অর্থনীতির বিষয় যেভাবে প্রাধান্য পাচ্ছে ঠিক সেভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় অর্থনীতির মুক্তির বিষয়টি গুরুত্ব পেতে হবে। পর্যটন বিকাশের চলমান ধারায় পরিবর্তন আনয়নের প্রয়োজনীয়তা অধিক গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় আনতে হবে। বড় বড় শিল্প মালিক, হাজারকোটি টাকার সম্পদশালী, কিংবা সেনানিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে পর্যটন বিকাশের পরিবর্তে স্থানীয় ও আগ্রহী ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে এখানকার পর্যটন যাতে বিকশিত হয় তার সুব্যবস্থা করতে হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অর্থলগ্নীকারীরা যাতে স্থানীয় উদ্যাক্তাদের এ কাজে সহজশর্তে আর্থিক সহায়তাদেয় তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং সর্বোপরি পার্বত্য জেলা পরিষদ সমূহকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা অর্থনীতি এবং সমাজের উপর পর্যটনের প্রভাব সুষ্পষ্ট। একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে পর্যটন শিল্পের প্রয়োজন অবধারিত। এটি একটি রাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে শক্তিশালী করে।

 

অতএব, রাষ্ট্রের সবোর্চ্চ নীতি নির্ধারক থেকে শুরু করে একজন স্থানীয় বাসিন্দাকে এখন থেকেই চিন্তা শুরু করতে হবে যে, আমরা আমাদের এ শিল্পের উন্নয়ন বা বিকাশকে কতদুর এগিয়ে নিতে চাই এবং তা কতদুর পর্যন্ত এগিয়ে নিতে পারবো। আর বর্তমান নীতি-কৌশলে যদি সীমাবদ্ধতা বা সংকীর্ণতা থেকেই থাকে সেটাকে কিভাবে সংশোধন করে সমাজ ও অর্থনীতির কল্যাণে প্রয়োগ বা অনুসরণ করা যায় সে ব্যপারে আশু পদক্ষেপ চাই। আমরা বর্তমানে স্বাধীণ বাংলাদেশে বসবাস করেও একটি ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ বা বিশ্বগ্রাম এ বসবাস করার কথা ভুলে গেলে চলবে না। কেননা সারাবিশ্বকে একটি গ্রাম বিবেচনা করেই আজ বিশ্বের অনেক নীতি-কাঠামো আবর্তিত হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতির চিন্তাবিদেরা এখন পর্যটন কে অন্যতম শিল্প হিসেবে বিবেচনা করেই সামনের দিকে এগুচ্ছে এবং জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম খাত হিসেবে পর্যটন সেক্টরকে স্বীকৃতি দিয়ে উন্নয়নশীল দেশ সমূহের দেশীয় অর্থনীতিতে এ খাতের অবদানকে উল্লেখযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করছে।



***লেখক একজন তরুন সমাজ সংগঠক, উন্নয়ন কর্মী, গবেষক এবং শান্তি স্থাপনে নিবেদিত কর্মী।

*** তথ্য সূত্র- http://knoema.com/atlasহরি কিশোর চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়নঃ সমস্যা ও সম্ভাবনা। মোনকধাঃ ২০১২।

**প্রবন্ধটি সম্পুর্ণ লেখকের নিজস্ব মতামত**

ads
ads
আর্কাইভ