মৌলভীবাজারের পাল্লাথল খাসিয়া পুঞ্জির আদিবাসীদের ভূমি তাদের সম্মতি ছাড়া ভারতের কাছে হস্তান্তরের বর্তমান পরিস্থিতির উপর সোমবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সন্মেলনে মৌলভীবাজারের পাল্লাথল খাসিয়া পুঞ্জির আদিবাসীদের ভূমি তাদের সম্মতি ছাড়া ভারতের নিকট হস্তান্তরের প্রক্রিয়া স্থগিত করে উচ্চ পর্যায়ের সরকারী, বেসরকারী ও আদিবাসী প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করার দাবি জানান।
কাপেং ফাউন্ডেশনের ফাল্গুনী ত্রিপুরার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় বলা হয়, ঢাকার সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনেয় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও কাপেং ফাউন্ডেশন যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।
এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক শরিফ জামিল, মানবাধিকার কর্মী ফাদার যোসেফ গমেজ, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের যুগ্ম আহ্বয়ক চৈতালী ত্রিপুরা, মানবাধিকার কর্মী রোজালিন কস্তা, মৌলভীবাজার জেলার পাল্লাথল পুঞ্জির হেডম্যান ও বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহাবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য লুকাস বাহাদুর, কাপেং ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক হিরন মিত্র চাকমা প্রমুখ।
সংবাদ সন্মেলনে মূল বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং অবিলম্বে জরিপ কাজ বন্ধ করে উচ্চ পর্যায়ের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হোক এবং তারা পাল্লাথল পুঞ্জি পরিদর্শন করা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে এই বিষয়ে রিপোর্ট প্রদান করার দায়িত্ব দেয়া এবং বাংলাদেশের জমি কিভাবে ভারতের অধীনে চলে যাবে, এ বিষয়ে আদিবাসী সংগঠনসহ নাগরিক সমাজের মতামত নেয়ার জন্য অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সংলাপ আয়োজনের দাবী জানান।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত যৌথ সীমান্ত চুক্তি সম্পাদনের পরে দেখা যায় যে, খাসিয়া ও গারোদের দখলীয় ভূমির দুই তৃতীয়াংশ অপদখলীয় ভূমি বিবেচনায় ভারতের অংশ হিসেবে জরিপে দেখানো হয়। জরিপকারীদের আদিবাসীরা আপত্তি জানালেও তারা বিষয়টি আমলে নেননি। এতে পাল্লাথল খাসিয়া পুঞ্জিতে বসবাসরত জনগণ মারাত্মক ক্ষতির সম্মূখীন হতে যাচ্ছে। পুঞ্জির বসতভিটা, কবরস্থান, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খেলার মাঠ ছাড়া জীবন জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস সকল পান-বাগান ভারতের আওতায় (আসাম) চলে যাচ্ছে।
এতে বাংলাদেশ থেকে খাসিয়া পুঞ্জির ৩০০ অধিক একর ভূমি ভারতের আসামের অধীনে চলে যাচ্ছে। এখন ভারত ও বাংলাদেশ সরকার খাসিয়া ও গারোদের মানবাধিকার ও জীবন জীবিকা নির্বাহের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা না করলে তারা তাদের ঐতিহ্যগত ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাবে বলে আমরা আশংকা করছি।
তিনি আরও বলেন, পুঞ্জির পক্ষ থেকে বিষয়টি মাননীয় জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় নির্বাচিত সংসদ সদস্য মহোদয়কে তাদের আশংকার কথা লিখিতভাবে জানালেও এই পর্যন্ত কেউ সমস্যাটি সমাধানের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। বাংলাদেশ সরকার ছিটমহলবাসীদের স্বার্থ সংরক্ষণ, ক্ষতিপূরণ, শিক্ষাÑস্বাস্থ্য ব্যবস্থা গ্রহণ, পুনর্বাসন ও মানবাধিকারের বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও এখানে আদিবাসীদের মানবাধিকারের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়েছে।
বর্ষীয়ান রাজনীতিক পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ যদি একটি গণতান্ত্রিক দেশ হয়ে থাকে তাহলে জনগণের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়ে, আদিবাসীদের অস্তিত্ব মেনে নিয়ে বিপন্ন জনগণের পাশে সরকারের দাঁড়ানো দরকার। তিনি সরকারকে দেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি মানুষের মর্যাদা দানের কথা উল্লেখ করেন তিনি আরও বলেন, যুগযুগ ধরে বসবাস করা পাল্লাথল পুঞ্জির খাসিয়াদের জমি তাদের সাথে কোন আলাপ আলোচনা সম্মতি ছাড়া হস্তান্তর করা মানবাধিকার লংঘন।
পাল্লাথল পুঞ্জির হেডম্যান লুকাস বাহাদুর বলেন,১৯৬০ সালে ভারত পাল্লাথলে সীমানা নির্ধারণের পিলার বসায়। পুঞ্জিবাসীদের কাছে যে কাগজপত্র ছিল সেটি ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় সব হারায়। ১৯৯৭ সালে তাঁরকাটা দেয়া হয়। তিনি উল্লেখ করেন পুঞ্জিবাসীরা পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়া ব্রিটিশ আমলের পূর্ব থেকে তারা এখানে বসবাস করে আসছে।
তিনি প্রশ্ন করেন ভারত বাংলাদেশ চুক্তির ফলে যদি তাদের পুঞ্জি ভারতের অংশ হয়ে যায় তাহলে এতদিনের বসতভিটা, বিদ্যালয়, সমাধিক্ষেত্র, পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের ভারসাম্যও জন্য লাগানো বিভিন্ন গাছগাছালি ভারতের অংশ হয়ে গেলে তারা কোথায় যাবেন?
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.