• Hillbd newsletter page
  • Hillbd rss page
  • Hillbd twitter page
  • Hillbd facebook page
সর্বশেষ
সাজেক পর্যটনে অগ্নিকান্ডে ঘটনার ছয় মাস পর কটেজ-রিসোর্ট স্থাপনা নির্মাণে লাইন্সে প্রদান                    কাউখালীতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দিনমজুরকে নতুন ঘর দিল সেনাবাহিনী                    খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চলের মগপার্টির সশস্ত্র বিভাগের প্রধান নিহত                    রাঙামাটিতে পর্যটন স্পটে যত্রতত্র প্লাস্টিক বোতল,ফুটপাত দখল দুঃখজনক-জেলা প্রশাসক                    রাজস্থলীতে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে কারবারি সম্মেলন অনুষ্ঠিত                    রাবিপ্রবি’তে আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত                    কাপ্তাইয়ে সেনাবাহিনীর বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ বিতরণ                    রাঙামাটিতে মহিলা অধিদপ্তরের সাথে সনাকের অ্যাডভোকেসি সভা                    কাউখালীতে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড                    বিলাইছড়িতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বিষয়ে সংলাপ অনুষ্ঠিত                    বিলাইছড়িতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবসে আলোচনা সভা                    শুধু মুখের কথা ও কাগজে লেখা নয় বাস্তবে অন্তর্ভূক্তিমূলক দেখতে চাই -সন্তু লারমা                    রাঙামাটিতে বর্জ্যব্যবস্থাপনা বিষয়ে পৌরকর্তৃপক্ষের সাথে সনাকের অ্যাডভোকেসি সভা                    টাকার বিনিময়ে বিক্রি শিশুটির ঠিকানা হয়েছে সরকারী শিশু সদন পরিবারে                    বিলাইছড়িতে এডিপি’র প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত, একই প্রতিষ্ঠানে একাধিক প্রকল্প গ্রহণের অভিযোগ                    রাবিপ্রবিত চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টশন প্রোগ্রাম                    সারাদেশে একই রকম শাসন চললেও পাহাড়ে চলছে আলাদা শাসন-উষাতন তালুকদার                    বাঘাইছড়িতে এখনো বেশ কিছু নিম্নাঞ্চর প্লাবিত রয়েছে                    জুড়াছড়িতে অবৈধভাবে প্রবেশে এক ভারতীয় নাগরিক আটক করেছে বিজিবি                    কাপ্তাই বাঁধে চতুর্থ দফায় ৩ফুট পানি ছাড়া হচ্ছে                    বিলাইছড়িতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্প পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক                    
 
ads

মৌজা না হওয়ায় চুড়াখালীর হাজারো অধিক পরিবারের জীবন অনিশ্চয়তায় কাটছে

বিশেষ রিপোর্টার : হিলবিডি টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 02 Jul 2023   Sunday

বিন্দুজয় চাকমা(৭৫) ও বিজয়মুখী চাকমা (৬৫) সর্ম্পকের স্বামী-স্ত্রী। তারা দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের চুড়াখালী এলাকায় বসবাস করছেন। চুড়াখালী মৌজা ঘোষনা না হওয়ার কারণে ভূমির উপর কোন অধিকার না থাকায় নিজ ভূমে এখন পরবাসী হয়ে অনিশ্চিত জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের। শুধু বিন্দুজয় ও বিজয়মুখী নয় এ চুড়াুখালী এলাকায় প্রায় এক হাজারের অধিক পরিবারের জীবন এখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।

 

তবে জেলা প্রশাসন থেকে চুড়াখালী এলাকাকে নতুন মৌজা সৃষ্টির জন্য ভূমি মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাবনা আকারে চিঠি পাঠানো হলেও বন বিভাগ থেকে বন্যপ্রানী অভয়াশ্রম রয়েছে দাবী করে আপত্তি করায় এটি ঝুলে রয়েছে। ১৯৮০ ও ৮১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে গুলশাখালীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধাস্তু হয়ে চুড়াখালীতে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন এসব পরিবার।


সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে,বাঘাইছড়ি উপজেলার ৩০নং সারোয়াতলী ইউনিয়নে অবস্থিত চুড়াখালী এলাকার সীমানা রয়েছে উত্তরে সারোয়াতলী মৌজা, দক্ষিণে গুলশাখালী, পূর্বে চুরাখালী দজরের কাকপজ্যা মৌজা ও পশ্চিমে আমতলী মৌজা। এ কচুখালী মৌজার সব মিলিয়ে আয়তন হচ্ছে অনুমানিক দুহাজার একর। এর মধ্যে জলেভাসা জমি রয়েছে ১২শ একর। প্রস্তাবিত এ মৌজায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৪টি, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৩টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১টি, বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে ৭টি, কমিউনিটি ক্লিনিক ১টি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালিত টেকসই সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের পাড়া কেন্দ্র রয়েছে ১২টি। এ চুড়াখালী এলাকায় এক হাজারের অধিক পাহাড়ী সম্প্রদায়ের পরিবার জলেভাসা জমিতে চাষ ও পাহাড়ী টিলায় ফলমুলের বাগান করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এলাকায় বসবসারত লোকজনদের সৃজন করা ফলমুলের বাগান ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি রয়েছে। চুড়াখালী এলাকায় বন বিভাগের সৃজিত কোন গাছগাছালি ও গভীর অরণ্যে পরিলক্ষিত হয়নি।

 

তবে চুড়াখালী এলাকার পশ্চিমে আমতলী ইউনিয়নের আওতাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের নিয়ন্ত্রিত পাবলাখালী রেঞ্জ এর কার্যালয় ও রেষ্ট হাউস দেখা গেছে। সেখানে ৮৫ একর জায়গাতে বন বিভাগের পক্ষ থেকে সামাজিক বনায়নের অংশ হিসেবে আকাশ মনি গাছ সৃজন ছাড়াও অধিকাংশ সেগুন গাছ রয়েছে। বন বিভাগের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, দেশের ২৫টি বন্য প্রাণী অভয়াশ্রমের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে একমাত্র রাঙামাটির পাবখালী বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রম রয়েছে। যার আয়তন ৪২ হাজার ৬৯ হেক্টর ও এটি ১৯৮৩ সালে প্রজ্ঞাপণ আকারে বন্য প্রাণী অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষনা করা হয়। ফলে বন বিভাগের আপত্তির কারণে এক হাজারের অধিক পরিবারের বসবাসকারীর জীবন একটা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে কাটছে।


এদিকে, চুড়াখালী এলাকাকে নতুন মৌজা সৃষ্টির জন্য ২০১৪ সালের দিকে তৎকালীন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল ভূমি মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাবনা আকারে চিঠি পাঠান। চিঠিতে বলা হয়, চুড়াখালী এলাকাকে মৌজা হিসেবে ঘোষনার জন্য ২০১২ সালে সেখানকার বাসিন্দা ফুলেশ্বর চাকমা আবেদনের প্রেক্ষিতে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকতাকে কানুনগো স্কেচ ম্যাপ, এলাকার জনসংখ্যাসহ যাবতীয় তথ্য প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে এলাকাটিতে জনসংখ্যা,ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে মানুষের বসবাস রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে এলাকার জনগণের স্বার্থে সরকারী রাজস্ব আদায় ও এলাকার উন্নয়নের লক্ষে ৩৯১ নং হিসেবে নতুন মৌজা সৃষ্টি করা প্রয়োজন।

 

তবে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ ছানাউল্ল্যা পাটওয়ারী জেলা প্রশাসকের নতুন মৌজা সৃষ্টির প্রস্তাবনা বিরোধিতা করে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, চুড়াখালী এলাকাটি গেজেট নোটিফিকেশন ভূক্ত বন ভূমি। উক্ত স্থানে ১৯৬৩ সালে সেগুন বাগান উত্তোলন করা হয়েছিল। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে অস্থায়ীভাবে ঘর নির্মাণ করে বাগানের গাছ কর্তন ও জুম চাষের মাধ্যমে ক্ষতি করে আসছে। চুড়াখালী মৌজাকে নতুন মৌজা ঘোষনা করা হলে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনসহ বন্যপ্রানী অভয়াণ্য ব্যাপক ক্ষতির আশংকা রয়েছে।


চুড়াখালী এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ বিন্দুজয় চাকমা ও বিজয়মুখী চাকমা জানান, ১৯৮০ ও ৮১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে গুলশাখালী থেকে উদ্ধাস্তু হয়ে চুড়াখালীতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। এ বৃদ্ধ বয়সে তাদের যাওয়ার মতো আর কোথাও জায়গা নেই আর। কোন রকম জমিতে চাষ করে জীবনযাপন করছেন। জায়গার খতিয়ান দেখাতে না পারায় এবারও প্রধানমন্ত্রী উপহারের ঘর পাননি। এলাকার সুমতি রঞ্জন চাকমা, মহিলা কারবারী(গ্রাম প্রধান) নয়ন তারা চাকমা ও সাবেক ওয়ার্ড মেম্বার বাবুল চাকমা, সুমন চাকমা, জ্ঞানজ্যেতি চাকমা, মাইল্যা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান চাকমাসহ এলাকাাসীরা জানান, আমরা এ এলাকায় ৪৩ থেকে ৪৫ বছর ধরে বসবাস আসছি। কিন্তু এলাকাটি বন বিভাগ দাবী করছে এলাকাটি সংরক্ষিত বন এলাকা। তবে সংরক্ষিত বন এলাকা হলে ৬৩ সালে যে বন সৃজন করা হয়েছে এতে বড় বড় গাছগাছালি, বন্যপ্রাণীসহ গভীর অরণ্য থাকতো কিন্তু সেগুলোর কোন অস্তিত্বও নেই। বন বিভাগ মিথ্যা দাবী করায় আমরা আজকে নতুন মৌজা পাচ্ছি না। মৌজা ঘোষনা না হওয়ার এখানে রাস্তাঘাটসহ এলাকাটি অউন্নত রয়েছে। তারা মৌজা ঘোষনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবী জানান।


প্রস্তাবিত নতুন মৌজার হেডম্যান কিরণ বিকাশ চাকমা জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চুড়াখালী এলাকাটি সরেজমিনে তদন্ত করে মৌজা হিসেবে ঘোষনার জন্য প্রস্তাবনা আকারে ভূমি মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছে। কিন্তু বন বিভাগের আপত্তির কারণে এটি ঝুলে রয়েছে। তিনি আরো জানান, ১৯৮০-৮৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজিত পরি্িস্থতির কারণে উদ্ধাস্তু হয়ে শুধু চুড়াখালী এলাকায় লোকজন বসবাস করেনি। কাপ্তাই বাঁধে উদ্ধাস্তু প্রজারাও ১৯৭৩ সালের দিকে এ এলাকায় বসবাস করে আসছেন। তিনি অতিদ্রুত মৌজা ঘোষনার জন্য দাবী জানান।


সারোয়াতলী ইউপি চেয়ারম্যান ভূপতি রঞ্জন চাকমা অতুল বলেন, তার ইউনিয়টি অনেক বড়। তার মধ্যে চুড়াখালী এলাকায় নতুন মৌজা হিসেবে প্রস্তাবনা রয়েছে। এটি মৌজা হিসেবে ঘোষনা করা হলে এলাকার উন্নয়ন হবে। তবে চুড়াখালী এলাকা নিয়ে তার ইউনিয়নে জনসংখ্যা হলেও মৌজা ঘোষনা না হওয়ায় সরকারী উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারছেন না। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ করে দিতে পারছি না। তিনি এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে অতিদ্রুত চুড়াখালী এলাকাকে মৌজা হিসেবে ঘোষনার দাবী জানান।


পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সরকার বর্তমানে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বনকে আরো কিভাবে প্রসারিত করা। এছাড়া বিশে^র কাছেও আমাদের কমিটমেন্ট রয়েছে বন বাড়াতে, আমাদের বেঁচে থাকার স্বার্থে। তাই এরই আলোকে সম্প্রতি সিদ্ধান্ত হয়েছে যে সরকারী বনকে কোনভাবে ডি রিজার্ভ করা যাবে না। ডি রিজার্ভ করা মানে হল সরকারী বন সংকূচিত করা। বনের জন্য বড় জায়গা ও ঘনত্ব দরকার, এতে বনের ঝুকিপুর্ণ থাকে না। বন ও বন্যপ্রাণী ভালো থাকে। তাই কোনভাবেই আমরা চিন্তা করতে পারি না কোন জায়গা অন্য কোন এজেন্সিকে দেওয়া হবে কিনা। তবে এটি সম্পূর্ন সরকারী সিদ্ধান্ত।


জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, চুড়াখালী এলাকাকে নতুন মৌজা সৃষ্টির লক্ষে তার আগের দায়িত্বরত জেলা প্রশাসক প্রস্তাবিত আকারে ভূমি মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। তবে যতটুকু জানি চিঠির জবাব আসেনি। এর বাইরে কিছুই আর তার জানা নেই বলে জানান তিনি।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.

সংশ্লিষ্ট খবর:
ads
ads
আর্কাইভ