বৃহস্পতিবার থেকে দুদিন ব্যাপী শুরু হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ বৌদ্ধ বিহার রাঙামাটি রাজ বনবিহারে ৪৯তম কঠিন চীবর দান। ইতোমধ্যে এ কঠিন চীবর দান উৎসবে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বৌদ্ধ পূর্নারীরা ধর্মপ্রাণ লোকজন কায়িক-বাচনিক ও আর্থিক দিক দিয়ে এ অনুষ্ঠানে শরিক হওয়ার জন্য আসতে শুরু করেছেন।
জানা যায়, দু’দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত রাজ বন বিহারের ৪৯তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের মধ্যে প্রথম দিনে বৃহস্পতিবার বিহারের পাশে বেইন ঘরে বেইন কর্মীদের পঞ্চশীল গ্রহন। এরপর বেইন ঘর উদ্বোধন ও চরকায় সূতা কাটা উদ্বোধন। পরে সূতা লাগানো শুরু থেকে সূতা সিদ্ধ, রঙকরণ, সূতা টিয়ানো, সূতা শুকানো সূতা তুম করা ও নলী ভরা শুরু করা হবে। এরপর বেইন টানা ও বেইন বুনার কাজ শুরু হবে শেষ হয়ে শেষ হবে শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টা পর্ষন্ত।
দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার প্রথম পর্বে বিহার প্রাঙ্গনে বুদ্ধ পতাকা উত্তোলন, পূজনীয় ভিক্ষু সংঘের প্রাতঃরাশ, পরমপূজ্য বনভান্তের প্রতিচ্ছবিসহ ভিক্ষু সংঘের মঞ্চে আগমেন ও আসন গ্রহন। এরপর ধর্মীয় সংগীত পরিবেশনা। পরে পঞ্চশীল গ্রহনসহ বুদ্ধ মূর্তি দান, সংঘ দান, অষ্টপরিস্কার দান, বিশ্ব শান্তি প্যাগোডার উদ্দেশ্য টাকা দান উৎসর্গ ও ভিক্ষু সংঘকে পিন্ডদান।
দ্বিতীয় পর্বে দুপুর ১২টায় শোভাযাত্রাসহ তৈরীকৃত চীবর ও কল্পতরু মঞ্চে আনয়ন, অতিথিদের অনুষ্ঠান মঞ্চে আসন গ্রহন, ভিক্ষু সংঘের মঞ্চে আগমন ও আসন গ্রহন, ধর্মীয় সংগীত পরিবেশনা, পঞ্চশীল গ্রহন, কঠিন চীবর উৎসর্গ, অষ্টপরিস্কার দান, বিশ্ব শান্তি প্যাগোডার উদ্দেশ্য টাকা দান উৎসর্গ। বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনা। এরপর অতিথিদের বক্তব্যে ও ভিক্ষু সংঘের ধর্ম দেশনা। এতে ধর্ম দেশনা দেবেন রাঙামাটি রাজ বন বিহারের ভিক্ষু সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকা মহাস্থবিরসহ অন্য ভিক্ষুরা। বক্তব্যে দেবেন চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়।
এ দুদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে তিন পার্বত্য জেলা থেকে ধর্মপ্রাণ লোকজনের যোগদান ছাড়াও দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ লোকজন পূর্নানুষ্ঠানে শরিক হওয়ার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ভগবান গৌতম বুদ্ধের জীবব্দশায় মহাপূর্নবতী বিশাখা কর্তৃক প্রবর্তিত ২৪ ঘন্টার মধ্যে সূতা কাটা শুরু করে কাপড় বয়ন, সেলাই ও রং করাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়ে থাকে বলে একে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়। এ পদ্ধতিতে দান করলে কায়িক-বাচনিক এবং মানসিক পরিশ্রম অধিকতর ফলদায়ক হয় বলে বৌদ্ধ শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। তাই প্রবর্তিত ঐতিহাসিক নিয়ম অনুসারে এখানে মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষ চরকায় ত‚লা থেকে সূতা বের করে বেইনের (কোমড় তাঁত) মাধ্যমে সেই সূতা দিয়ে কাপড় বুনন ও রং করে চীবর হিসেবে দান করে থাকেন। এ জন্য এ দানকে কঠিন চীবর দান হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ১৯৭৭ সাল থেকে রাঙামাটি রাজ বন বিহার এ অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়ে আসছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.