পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, বর্তমান সরকার জাতীয় নির্বাচনে যাওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে ও নির্বাচনের মোটামোটি একটা দিনও ধার্য্য করেছে। সুতরাং এ সরকারকে সবাইকে সাহায্য করতে হবে, যেনো নির্বাচন করে দিয়ে গণতন্ত্র, সৌহার্দ্যপূর্ন পরিবেশ উপহার দিতে পারি, মানুষের মূল্যবোধ ও আর্থিক সক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারি।
তিনি আরো বলেন, এ অঞ্চলে আর কোন সাম্প্রদায়িক উদ্ভব না হয়। এ অঞ্চলে শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্যপূর্ন সম্পর্ক ও উন্নয়ন চাই। তবে এসব কিছু নির্ভর করে নীতি ও আদর্শ যেটা বৌদ্ধ ধর্মসহ অন্যান্য ধর্ম শিখিয়েছে। যা এ নৈতিকতা দিয়ে এমন কাজ করি যাতে এ অঞ্চলে অসাম্প্রদায়িক চেতনার উদ্ভব না হয়। আমরা চাই এ অঞ্চলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো মানুষের মর্যাদা। অন্যান্য এলাকায় যেভাবে মানবিক মর্যাদা রক্ষিত হয় এ অঞ্চলেও তা যেনো হই। আমরা এমন ঘটনা চাই না যাতে মানুষ তাড়িত হবে। নিজেকে শংকিত অবস্থায় থাকবে এমনটাই অবস্থা আমরা তা চাই না।
শনিবার রাঙামাটিতে মিলন বিহারের ৫১ তম কঠিন চীবর দান ও প্রথম সন্মিলিত জাতীয় কঠিন চীবর দানোৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বক্তব্যে পার্বত্য চট্ট্রগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
উদ্ধোধকের বক্তব্যে ধর্ম মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা বলেন, আজকের এ কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বুঝা যায় বাংলাদেশ একটি সম্প্রীতি ও বহু জাতিক দেশ উল্লেখ করে আরো তিনি আরো বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। তবে পারস্পরিক ভেদাভেদ, বিবাদ ও সংঘাত পেছনে দিকে নিয়ে যাবে। আমরা অগ্রসর হতে পারবো না।
তিনি আরো বলেন, এদেশের উন্নয়নের জন্য পারষ্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ন, সম্প্রীতি ও ভালোবাসা অপরিহার্য উল্লেখ করে বলেন, এদেশের উন্নয়ন নির্ভর করে অগ্রগতি, ভালোবাসা ও সম্প্রীতির উপর। একটি ফুল দিয়ে বসন্ত হয় না, বসন্ত আসলে সবই ফুল ফুটে। তাই বাংলাদেশে আমাদের মাঝে একে অপরের হাত ধরে সম্প্রীতি বজায় রেখে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। আমরা এক সাথে বড় হই, বিদ্যালয় ও বিশ^ বিদ্যালয়ে যায়, এক সাথে চাকরি ও ব্যবসা করে একে অপরে সুখে-দুখে আনন্দ-বেদনায় শরিক হই। কারণ এদেশ সবাইয়ের, অধিকার সবার।
রাঙামাটি শহরের মোনঘর শিশু সদন মাঠে আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সিএইচটি সুপ্রিম কাউন্সিলের সভাপতি শ্রদ্ধালংকার মহাথেরোর সভাপতিত্বে ধর্ম দেশনা দেন চট্টগ্রাম নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ড. জীনবোধি মহাস্থবির, আনন্দ বিহারের আবাসিক ভিক্ষু বিমল জ্যোতি মহাথেরো, সিএইচটি সুপ্রিম কাউন্সিলের সহ-সভাপতি তিক্ষিন্দ্রিয় মহাথেরো, চট্টগ্রামের ওয়ারাপাড়া বৌদ্ধ বিহারে অধ্যক্ষ সুমিত্তানন্দ মহাথেরো,পানছড়ি বন বিহারের অধ্যক্ষ আর্যবোধি মহাস্থবির। অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্যে দেন বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টের ভাইস চেয়ারম্যান ভবেশ চাকমা, সদস্য অংলাচিং রাখাইন, ড.সুকোমল বড়ুয়া প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্যে প্রথম সন্মিলিত জাতীয় কঠিন চীবর দানোৎসবের আহ্বায়ক রণজ্যোতি চাকমা। অনুষ্ঠান শুরুতে এর আগে ধর্ম ও পার্বত্য উপদেষ্টা ফিতা কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ও স্মরনিকার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। তিন পার্বত্য জেলা ছাড়াও এ ধর্ম অনুষ্ঠানে তিন শতাধিক বৌদ্ধ গুরু যোগদান করেছেন। অনুষ্ঠানে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানসহ দেশেরে অন্যান্য অঞ্চল থেকে কয়েক হাজার বৌদ্ধ পূর্নার্থী শরিক হয়েছেন। এ দুদিন ব্যাপী প্রথম সন্মিলিত জাতীয় কঠিন চীবর দানোৎসবে বৌদ্ধদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ধর্ম দেশনায় বৌদ্ধ গুরুরা বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বৌদ্ধরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তাই পালি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা আরো প্রয়োজন। বৌদ্ধরা দেশের কল্যাণে ও উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রাখছে। তারা আরো বলেন, কঠিন চীবর দান হলো একটি মহৎ দান। এ দানের মাধ্যমে সুখ ও সমৃদ্ধি লাভের পাশাপাশি দুখ থেকে মুক্তি লাভ, নির্বান সুখ পাওয়া যায়। এছাড়া পঞ্চশীল পালন করলে সবাইয়ের সুখ, শান্তি ও মঙ্গল বয়ে আনে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সবাইকে ঐক্য মধ্য থাকতে ও সবাইকে সৎ পথে সৎ কর্ম ও সুকৌশল কর্ম পালনের হিতোপোদেশ দেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.