সন্তু লারমার পূর্ব ঘোষিত সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসুচি শুক্রবার থেকে শুরু হলেও অপাতত আন্দোলনের কোন কর্মসূচি নেই। তবে যে কোন সময়ে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষনা করা হতে পারে। সন্তু লারমার এ কর্মসূচিকে ঘিরে যাতে জননিরাপত্তা বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা গেছে।
গত বছর ২৯ নভেম্বর পার্বত্য চুক্তির ১৭ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে সন্তু লারমা ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সময়সূচি ভিত্তিক কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করলে ১ মে(শুক্রবার) থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে যাবেন বলে ঘোষনা দেন।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির প্রধান সন্তু লারমা শুক্রবার( ১মে) থেকে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষনায় জনমনের নানান শংকা বিরাজ করছে। এ অসহযোগ আন্দোলনের কারণে পার্বত্য পরিস্থিতিকোন দিকে মোড় নেবে? আবার অনেকের উদ্বেগের প্রশ্ন দাড়িছে আন্দোলনের ধরন কি তীব্র হবে?। আবার অনেকেই আন্দোলনের বিষয়টি নিয়ে তেমন একটা গুরুত্বও দিচ্ছেন না।
এদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সন্তু লারমার এ অসহযোগ আন্দোলনের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিশেষ আইন-শৃংখলার সমন্বয় সভায়ও হয়েছে। সভায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনা,সেনা বাহিনী ও বিজিবি-এর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জননিরাপত্তা কৌশল হিসেবে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এলাকায় পুলিশী টহল জোরদার, যানবাহনের প্রতি ট্রাফিক পুলিশের কড়া নজরদারীর ব্যবস্থা ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশী ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও অন্যান্য সংস্থাগুলো জননিরাপত্তা রক্ষার্থে প্রত্যেকে তারা স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করবেন।
অপর একটি সূত্র মতে, সম্প্রতি যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বান্দরবানের থানচি-আলিদকম সড়ক পরিদর্শনের শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, সন্তু লারমাকে পার্বত্য শান্তি চুক্তির জন্য আন্দোলন করতে হবে না, এ সরকারেরমেয়াদেই পার্বত্য চুক্তির ভুমি সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যাগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।
এছাড়াও সম্প্রতি পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গাল হালিয়ায় মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জলকেলী উৎসবের প্রধান অতিথির বক্তব্যে যেকোন সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন শান্তি চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হলেও যে সব সমস্যা চিহিৃত করা গেছে সেগুলো অচিরেই সমাধান করা হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম সমস্যা ভুমি সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের জন্য পার্বত্য ভুমি কমিশন আইনের বিল সংশোধনের জন্য চেষ্টা চলছে। আশাকরি আগামী সংসদ অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করা হবে।
সূত্র মতে, হয়তো সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আশ্বাস পাওয়ার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কিছুটা নমনীয় হয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে পর্যবেক্ষন করে দেখছে।
অপরদিকে, অসহযোগ আন্দোলনকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমার সাথেযোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের লক্ষে সন্তু লারমার পূর্ব ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি ঠিক রয়েছে। তবে ঘোষিত সময়ের মধ্যে(১মে) থেকে কর্মসূচি শুরু না হলেও যে কোনা সময়ের মধ্যে এ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষনা করা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সরকার জনসংহতি সমিতির সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে র্পাত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার কর্মসূচি ঘোষনার উদ্যোগনেবে। কিন্তু ৫ মাস অতিবাহিত হলেও সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে এখনো কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহন করেনি। ইতোমধ্যে সরকারকে দেয়া আল্টিমেটামও শেষ হয়েছে এসেছে। তাই অসহযোগ আন্দোলনের যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ নেই। তিনি অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এ অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি বিভিন্ন রুপে হতে পারে। তা যথাসময়ে ঘোষনা করা হবে। তবে ইতোমধ্যে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি হিসেবে জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে পার্বত্য চুক্তি পরিপন্থী বিষয়ে নানান সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। তবে সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহনসহ বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহন না করলে জনসংহতি সমিতি কঠোর আন্দোলন কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে।
বাঙালী ভিত্তিক সংগঠন পার্বত্য নাগরিক কমিটির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভুইয়ার কয়েক দিন আগেদেয়া বিবৃতিতে পার্বত্য চুক্তি পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়নের নামে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামকে ক্রমেই অস্থিতিশীল করে তোলার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন দাবী করেছেন। সন্তু লারমা রাষ্ট্রীয় পদে অধিস্থ থেকেও সরকারের বিরুদ্ধে এ ধরণের আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে সরাসরি দেশদ্রোহীতার সামিল।
অন্যদিকে, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের জ্যেষ্ঠ সদস্য হাজী মূছা মাতব্বর জানান, সন্তু লারমা পূর্বে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি দিলেও এখনো বিবৃতি বা সংবাদ সন্মেলনের মাধ্যমে ঘোষনা দেননি। তবে এ ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষনা করা হলে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা হবে।
রাঙামাটির পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,অসহযোগ আন্দালন কর্মসুচিকে কেন্দ্র করে যাতে জননিরাপত্তা ও যানবাহনে বিঘ্ন না ঘটে সে বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এলাকায় পুলিশী টহল জোরদার, যানবাহনের উপর ট্রাফিক পুলিশের নজরদারী ও সাদা পোশাকে মাঠে গোয়েন্দা পুলিশের ব্যবস্থা।
তিনি আরও জানান, এ কর্মসূচিকে ঘিরে ইতোমধ্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন,সেনা ও বিজিবি-এর মধ্যে আইন-শৃংখলার সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় যাতে জননিরাপত্তা বিঘ্ন না ঘটে তার নিরাপত্তার কৌশল নির্ধারণসহ অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা জননিরাপত্তা রক্ষায় স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.