ফ্যাসিষ্ট আওয়ালীগ সরকারের পতনের আগে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান বাপ্পী, তার দুইভাই রাব্বী, রাকিব ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন কায়সার তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে টর্চার সেলের আয়না ঘরের কক্ষে গামছা দিয়ে বেধে রাখে ফেলে রাখে। রাত দুটার দিকে চার লাখ টাকা দেওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ ভ্যান চালক মোঃ জাহাঙ্গীরের। শুধু জাহাঙ্গীর নন ছাত্রলীগের এ সন্ত্রাসী সিন্ডিকেটের চাদাবাজি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে ব্যবসায়ী, ঠিকদার থেকে সাধারন মানুষও। রোববার সকালে গণমাধ্যম কর্মীদের রাঙামাটি শহরের আলম ডক ইয়ার্ড এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের টর্চার সেল বা কথিত আয়না ঘর দেখাতে গিয়ে জাহাঙ্গীরসহ নির্যাতনের শিকার ভূক্তভোগীরা এ অভিযোগ করেছেন।
এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগীদের অভিযোগে জানা যায়, ৫আগষ্ট ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের আগে রাঙামাটি শহরের আলম আলম ডক ইয়ার্ড এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান বাপ্পীর নেতত্বে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বেড়ে যায়। এ সন্ত্রাসী গ্যাং এ রয়েছে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন কায়সার, মো. রাব্বী ও মো. রাকিব,কলিম উল্লাহসহ একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের চাদাবাজি ও মুখ খুললে জানে মেরে ফেলার হুমকিতে সাধারণ মানুষ তটস্থ ছিল। সিন্ডিকেটের আলম ডক ইয়ার্ড এলাকায় ছয় তলা ভবনের নিচ তলায় একটি কক্ষে টর্চার সেলের কথিত আয়না ঘর ছিল। সেখানে ব্যবসায়ী, শ্রমিক থেকে সাধারন মানুষের কাছ থেকে চাঁদা দাবী করতো। আর চাঁদা না দিলে কথিত এ আয়না ঘরে নিয়ে গিয়ে অমানসিক নির্যাতন চলাতো তারা। এসব অপকর্মের মুল হোতা ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ছাওয়াল উদ্দীন ছাওয়াল। এ সিন্ডিকেটটির শুধু চাঁদাবাজি নয় তারা স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের ইভটিজিং, প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি, গ্যাংদের নিয়ে আড্ডাবাজি, সীমান্ত পথ ব্যবহার করে ভারতীয় সিগারেট বিক্রিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন। সম্প্রতি আনোয়ার হোসেন কায়সার সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। অপর অভিযুক্তরা সরকার পতনের পর পর এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। রোববার সকালে আলম আলম ডক ইয়ার্ড এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের টর্চার সেলের স্থানটি সরেজমিনে দেখাতে গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে যান ভূক্তভোগী ও এলাকাবাসীরা। সরেজমিনের সময় ছাত্রলীগের কথিত আয়না ঘরের কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। কক্ষের মধ্যে শুধু টেবিল চেয়ার ও বেঞ্চ দেখা গিয়েছিল।
ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার ভ্যান চালক মোঃ জাহাঙ্গীর জানান, হাবিবুর রহমান বাপ্পী, তার দুই ভাই ও আনোয়ার হোসেন কায়সার তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে টর্চার সেলের কক্ষে তাকে গামছা দিয়ে বেধে রাখে ফেলে রাখে। রাত দুটার দিকে চার লাখ টাকা দেওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেয়। অপর ভুক্তভোগী রেজাউল করিম জানান, আলম ডক ইয়ার্ডের নির্মানাধীন ভবনের শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল হাতিয়ে নেয় ছাত্রলীগের কায়সার ও রাকিব। পরে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে ও তাকে নানান হয়রানী করে।
আরো এক ভূক্তভোগী ও মোদি দোকানদার আব্দুল হক জানান, তার দোকানের মালামাল নষ্ট করে দেওয়াসহ নানান হয়রানী করেছে ছাত্রলীগের কায়সার ও রাকিব। যার কারণে দোকান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ভবিষ্যতে যাতে আর যেনো কেউই এ ধরনের ঘটনার সম্মুখীন না তার জন্য প্রশাসনের কাছে বিচার দাবী জানান তিনি। ঠিকাদার রবিউল হোসেন বাবলু জানান, গত বছর এপ্রিল মাসে কায়সার,বাপ্পীসহ ১০ থেকে ১২ জনের একটি গ্যাংক তার নির্মানাধীন ভবনের শ্রমিকদের মারধর ও টাকা পয়সা কেড়ে নিয়েছে। এসবের অপকর্মের মুল হোতা হচ্ছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ছাওয়াল উদ্দীন। তার নেতৃত্বে এসব চাঁদাবাজীসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হতো। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলেও কোন বিচার পাননি।
আপর ভূক্তভোগী বদীউল আলম জানান,২০১৬ সালের দিকে আলম ডক ইয়ার্ডের তার বাড়ী নির্মাণের সময় বাপ্পী, কায়সার,রাকিবসহ অন্যান্যরা তার কাছ থেকে ৫লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কাজ বন্ধ করে দেয় ও তিন শতাংশ জায়গাও কেড়ে নেয়। তিনি ছাত্রলীগের এসব চাঁদাবাজদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ আহম্মেদ বলেন, দেশ ব্যাপী আইন-শৃংখলা স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ অভিযান চলছে। তারই অংশ হিসেবে রাঙামাটিতেও বিশেষ অভিযান চলমান অবস্থায় বিভিন্ন আসামী গ্রেফতার ও তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হচ্ছে। যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারা লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
--হিলবিডি/সম্পাদনা/সিআর