হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনায় টালবাহানা বন্ধ করে অবিলম্বে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সন্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সন্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, কল্পনা চাকমার অপহরণ শুধু পাহাড়ের ঘটনা নয়, কেবল একটি নারীর ব্যাপারও নয়, এক অর্থে এটি সমগ্র দেশের জনগণের ন্যায়-নীতি ও বাঁচার অধিকারের প্রশ্ন জড়িত রয়েছে। তাই যতদিন কল্পনা চাকমার বিচার না হবে, চিহ্নিত অপহরণকারীদের সাজা না হবে, ততদিন হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাজ পথের আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। সত্য ও ন্যায়ের সংগ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীরা সোচ্চার থাকবে।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটি দপ্তর সম্পাদক মিনাকি চাকমার স্বাক্ষরিত একপ্রেস বার্তায় বলা হয়, জাতীয় প্রেস ক্লাব হলরুমে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, সাজেক নারী সমাজ ও ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা। এসময় উপস্থিত ছিলেন সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমা, সাধারণ সম্পাদক জ্যোৎন্সারানী চাকমা ও ঘিলাছড়ি নারী সমাজের সভাপতি কাজলী ত্রিপুরা। এছাড়া কল্পনা চাকমার বড় ভাই কালিন্দি কুমার চাকমা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নিরূপা চাকমা বলেন, দীর্ঘ ১৯ বছরে চিহ্নিত অপহরণকারী ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে আজও কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো না। সেটাই আমাদেরকে তথা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশের নারী সমাজকে বিক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদী করে তোলে। ১৯টি বছর ধরে আমরা চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌসসহ তার গঙদের শাস্তি দাবী জানিয়ে আসছি। কিন্তু বাস্তবে কোন সরকারই কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এদেশে কী আইন আদালত বিচার ব্যবস্থা ন্যায়ের শাসন কোনদিন প্রতিষ্ঠিত হবে না? খুনি দাগী অপরাধী দুর্বত্তরা খেয়াল খুশি চরিতার্থ করবে, অপহরণ, নারীর অমর্যাদা-শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ-খুনের মত জঘন্য অপরাধ সংঘটিত করে যাবে, সরকার-প্রশাসন তাদেরকে ব্যাপারে কোন পদক্ষেপই নেবে না? দেশে এ অরাজকতা কি চলতেই থাকবে?
আলোর বিপরীতে অন্ধকারের মতোই প্রগতিশীলতার বিপরীতে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র সর্বকালে ছিল এবং এখনও সক্রিয় রয়েছে উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ১৯৯৬ সালে সনেও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী কল্পনা অপহরণ নিয়ে নানা গালগল্প অপপ্রচার চালিয়েছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চট্টগ্রামস্থ ২৪ পদাতিক ডিভিশনের সদর দফতর থেকে সে সময় কল্পনা চাকমার সন্ধান চেয়ে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা দিয়ে লিফলেট প্রচার করে। যা সংবাদ মাধ্যমেও বহুল আলোচিত হয়। নাটকীয়তার সাথে একটি সাইনবোর্ড সর্বস্ব মানবাধিকার সংস্থা তদন্ত চালিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের এক অজপাড়া গাঁয়ে কল্পনার সন্ধান পেয়েছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তদন্ত রিপোর্টও প্রকাশ করে। অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক ব্যাপার হলো, ওই তথাকথিত মানবাধিকার সংস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষক সক্রিয় ভূমিকা রেখে প্রকারান্তরে শিক্ষক সমাজকে কলঙ্কিত করেছিলেন। চিহ্নিত অপহরণকারীদের আড়াল করতে সে সময় বহু ষড়যন্ত্র চক্রান্ত হয়, এবং এখনও তা অব্যাহত আছে। ডিএনএ টেস্টের নামে আসলে অপহৃত কল্পনা চাকমার ভাইদের হয়রানি ও তাচ্ছিল্য করার আইনী মারপ্যাঁচ ছাড়া আর কিছু নয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪টি দাবী জানানো হয়।সেগুলো হল,অপহরণকারী লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস, ভিডিপি সদস্য নুরুল হক ও সালেহ আহমেদকে আসামী করে কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ, উক্ত বিচার বিভাগীয় কমিটি পাহাড়ি ও বাঙালি প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠন করা,অবিলম্বে উপরোক্ত তিন অপহরণকারীসহ কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা এবং অপরাধীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত বাঘাইছড়ি থানা হেফাজতে থাকা অপহরণের আলামত সংরক্ষণ করা।
সংবাদ সন্মেলনে একই দাবিতে শুক্রবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং বিকাল ৪টায় শাহবাগ জাতীয় যাদুঘরের সামনে কল্পনা চাকমার প্রথম ভিডিও বক্তৃতা প্রদর্শন ও সংহতি সভা কর্মসূচি পালন করা হবে বলে ঘোষনা দেয়া হয়।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.