শনিবার বান্দরবানের জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন পন্ড হয়েছে। এ সময় ইটের টুকরো, চেয়ারের আঘাতে ও ছুটাছুটিতে পায়ে পিষ্ট হয়ে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে মহিলা আওয়ামীলীগের তিন নারী নেত্রীসহ ৭জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সন্মেলন পন্ড হয়ে যায়। তবে এ ঘটনায় এক পক্ষের হামলার ঘটনা ঘটেছে দাবী করা হয়েছে।
জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে আহসানুল আলম রুমুকে নয় রেজাউল করিমকে সভাপতি করা হচ্ছে এমন গুজব প্রকাশ হলে তার অনুসারী নেতাকর্মীরা হামলা ও ভাংচুর করেছে বলে জানা গেছে। তবে এ ব্যাপারে রুমু ঘটনার সঙ্গে তার অনুসারীরা জড়িত নয় দাবী করেছেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ পাঁচ বছর পর গতকাল শনিবার ছিল জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন শুরু হয় । ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠে বিশার প্যান্ডেল সাজানো হয়। সাত উপজেলার ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, আওয়ামী লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীরা অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম। দুপুর তিনটার দিকে অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত হন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল চৌধুরী। সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুজন চৌধুরী সঞ্জয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তৌহিদুর রহমান চৌধুরী রাশেদ।
একাধিক সুত্রে সূত্রে জানা গেছে, দুপুর পৌনে পাঁচটা। সম্মেলনে ওই সময়ে বক্তব্য রাখছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সাধারণ সম্পাদক লক্ষী পদ দাশ। কিছু বোঝে উঠার আগে সম্মেলনের প্যান্ডের শেষের দিক থেকে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী হৈ চৈ শুরু করে দেয়। এরপর চেয়ার ছুড়ে মারা হয়। ইটের টুকরো নিক্ষেপ করা হয় সম্মেলনে আগত নেতাকর্মীদের দিকে। ভয়ে ছুটাছুটি করতে থাকে আগত নেতাকর্মীরা। এমন পরিস্থিতি দেখে অনুষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধান অতিথি অনুষ্ঠান তাড়াহুড়ো করে সমাপ্তি করেন। ইটের টুকরো, চেয়ারের আঘাতে ও ছুটাছুটিতে পায়ে পিষ্ট হয়ে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে মহিলা আওয়ামী লীগের তিন নারী নেত্রীসহ সাতজন। বিক্ষুব্দ নেতাকর্মীরা একটি মাইক্রোবাসও ভাংচুর করে। আহত তিন নারী নেত্রী হলেন, সুয়ালক ইউনিয়নের মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুলসুমা বেগম, মাঝের পাড়ার মানুচিং মার্মা, ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার এক নারী নেত্রী। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে কেন্দ্রীয় নেতারা কোন প্রকার কমিটির ঘোষনা না দিয়েই পুলিশ স্কটের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতারা বান্দরবান ত্যাগ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের ও আওয়ামী লীগের কিছু নেতা জানান, সম্মেলন চলাকালীন সময়ে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আহসানুল আলম রুমুকে জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে সভাপতি করা হচ্ছে না এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে। নতুন সভাপতি করা হতে পারে রেজাউল করিমকে। এই খবর জানতে পেরে তার অনুসারীরা সম্মেলনে চেয়ার, গাড়ি ভাংচুর, ইট নিক্ষেপ ও বিশৃঙ্খলা করে। ভাংচুর ও বিশৃঙ্খলার কারণে সম্মেলন পন্ড হয়ে যায়। পরে বিক্ষুব্দ নেতাকর্মীরা শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
আহসানুল আলম রুমু বলেন, তার অনুসারী কোনো নেতাকর্মী এই ঘটনা ঘটায়নি। কারা করেছে সেটাও জানি না। আমি সভাপতি প্রার্থী থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করার জন্য আবেদন লিখছিলাম কম্পিউটারের দোকানে। লেখার সময় জানতে পারি মারামারি লেগেছে। রেজাউল করিমের অনুসারীরা যখন জানতে পারে সে সভাপতি হচ্ছে তখন তার অনুসারীরা আনন্দ করতে গিয়ে অন্যদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হয়। এক পর্যায়ে কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক হামলা, ভাংচুর চালায়।
তিনি আরও বলেন, রেজাউল করিম উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কোনো বয়সের শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে। ছাত্রলীগের নীতিমালা অনুযায়ী নিয়মিত ছাত্ররা কমিটিতে আসতে পারে। সেখানে একজন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে নেতৃত্বে নিয়ে আসা ছাত্রলীগের নীতিমালা পরিপন্থি বলে মনে করি।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুজন চৌধুরী সঞ্জয় বলেন, বহিরাগত কিছু লোক এই বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনাকারীদের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
--হিলবিডি২৪/সম্পাদনা/সিআর.